1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করোনা সংকটে শিল্পীদের বাঁচা এবং বাঁচানোর লড়াই

২৩ আগস্ট ২০২০

করোনা সংক্রমণ ও আমফান ঘূর্ণিঝড় পশ্চিমবঙ্গের অনেক পেশাদার সংস্কৃতিজীবীর জীবন তছনছ করে দিয়েছে৷ বিপর্যস্ত শিল্পীদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন শিল্পীরাই৷ আয়োজন করেছেন এক বিশেষ কনসার্টের৷

https://p.dw.com/p/3hMWf
Bengalische Volkslieder
ছবি: DW/P. Samanta

পশ্চিমবঙ্গে শিল্পীদের ক্যালেন্ডারের সাথে অন্য কোনো ক্যালেন্ডার মেলে না৷ না গ্রেগরিয়ান, না বাংলা, না হিজরি, না অর্থবর্ষের হিসাব৷ শিল্পীদের ক্যালেন্ডার পশ্চিম বাংলায় এতদিন চলে এসেছে বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে৷ দুর্গাপুজোর সময় থেকে একটানা ফেব্রুয়ারি-মার্চ পর্যন্ত রমরমিয়ে গান-বাজনা-নাচ-নাটকে ছেয়ে ওঠে পশ্চিমবঙ্গের ছোট-বড় মঞ্চ৷ শুধু প্রথম সারীর শিল্পীরাই নন, উৎসবের এই ‘সিজন’ থেকে যতটুকু উপার্জন হয়, তা দিয়ে ঘর চালান অনামী শিল্পী থেকে শুরু করে নামী-অনামী-বেনামী অসংখ্য যন্ত্রশিল্পী, আলোশিল্পী, শব্দশিল্পী এবং অন্যান্য সহকারীরাও৷ কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই ‘সিজন’ থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে বছরের বাকি সময়টুকুর খরচও চলে যায়৷ কিন্তু ২০২০ সালে এই চিত্র একেবারে ভিন্ন৷

করোনা সংক্রমণ তো ছিলই, আবার এসে জুড়ে বসলো আমফান ঘূর্ণিঝড়৷ তছনছ হয়ে গেল পশ্চিমবঙ্গে অন্যান্য পেশার পাশাপাশি পেশাদার সংস্কৃতি চর্চার সাথে যুক্ত প্রতিটি মানুষের জীবিকা৷ একটানা সাত মাস ধরে আজ তাদের কারো কোনো কাজ নেই৷ বিশেষ করে সেই সব শিল্পীরা বিপর্যস্ত, যাদের হয়ত সেভাবে একডাকে কেউ চেনে না, কিন্তু নিজস্ব পরিসরে যথেষ্ট অভিজ্ঞ, প্রতিষ্ঠিত৷ এমন শিল্পীদের মধ্যে অনেকেই পেটের তাড়নায় রাস্তায় সবজি-ফল বিক্রি করতে বসছেন৷ মাস দুয়েক আগেও মঞ্চ-কাঁপানো গিটারবাদক আজ মুদির দোকান সামলাচ্ছেন৷ এছাড়া এমন অনেকেই রয়েছেন যাদের আর্থিক অবস্থা এখন খুব খারাপ৷ তাদের জন্য সাময়িক অর্থায়নের উদ্দেশ্যে পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সঙ্গীতশিল্পী সংঘ  ‘অ্যাসোসিয়েশন অফ প্রোফেশানাল পারফর্মিং সিঙ্গারস পশ্চিমবঙ্গ’ (অ্যাপস) আয়োজন করেছে একটি অভিনব কনসার্টের৷

কোথায়, কবে, কীভাবে এই কনসার্ট?

পশ্চিমবঙ্গে ‘অ্যাপস’ একটি পরিচিত নাম৷ বর্তমানে এই সংগঠনের সভাপতি লোকশিল্পী পূর্ণদাস বাউল৷ এছাড়া সংগঠনের পরিচালন সমিতিতে রয়েছেন হৈমন্তী শুক্লা, ঊষা উত্থুপের মতো কণ্ঠশিল্পীরা৷ সংগঠনটির কার্যনির্বাহী সমিতিতে রয়েছেন শ্রীকান্ত আচার্য, ইন্দ্রাণী সেন, শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায় ও শম্পা কুণ্ডুর মতো প্রতিষ্ঠিত শিল্পীরা৷

এই আয়োজনের প্রসঙ্গে ডয়চে ভেলের সাথে কথা বলেন ‘অ্যাপস’-এর কার্যনির্বাহী সমিতির সদস্য শ্রীকান্ত আচার্য৷ বিপর্যস্ত শিল্পীদের বিষয়ে সরকার ও অন্যান্য কর্তৃপক্ষের ভূমিকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘সরকার যথাসাধ্য চেষ্টা করছে, কিন্তু সরকারের সামনে আরও বড় কিছু সমস্যা রয়েছে৷ সরকার চেষ্টা করবে জানি, কিন্তু তার নিজস্ব কিছু প্রায়োরিটি রয়েছে স্বাভাবিকভাবেই৷ আমরা দাবি জানাতেই পারি, কিন্তু সরকারের সীমাবদ্ধতার কথাও আমরা জানি৷’’ অন্য সময় যে সমস্ত বড় অনুষ্ঠান হতো কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গের অন্যত্র, তারবেশির ভাগ অর্থায়ন আসতো কর্পোরেট সংস্থাগুলির থেকে৷ করোনা ও আমফানপরবর্তী বাস্তবতায় রাজ্যের অর্থনীতি বেশ ভালো রকমের চোট পেয়েছে বলে মনে করেন শ্রীকান্ত৷ ফলে, এই সমস্ত সংস্থাগুলির কাছ থেকে কিছু বড় পদক্ষেপ আশা করাটাও সমীচীন হবে না বলে মনে করেন তিনি৷ এই ফাঁকটুকু যতটা সম্ভব জোড়া দিতেই শিল্পীদের কাজে নামা ও এই কনসার্ট আয়োজন৷

‘এক আকাশের নীচে’ শীর্ষক এই ডিজিটাল কনসার্টটি সম্প্রচারিত হবে ‘মিউজিয়ানা’ সংস্থার মাধ্যমে৷ ২২ আগস্ট বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায় শুরু হওয়া এই অনুষ্ঠান দেখতে ইচ্ছুক শ্রোতা-দর্শকদের প্রবেশমূল্য হিসেবে দিতে হবে ১০ মার্কিন ডলার বা ৩৫০ বাংলাদেশি টাকা৷ অনুষ্ঠান থেকে সংগৃহীত অর্থের পুরোটাই যাবে সংকটে পড়া শিল্পীদের কাছে৷ শিল্পী শ্রীকান্ত আচার্য আরও জানান, এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে একডাকে সাড়া দিয়েছেন বাংলার বহু নামী শিল্পী৷ এর মধ্যে ২২ আগস্টের অনুষ্ঠানে ছিলেন পূর্ণদাস বাউল, শ্রীকান্ত আচার্য, লোপামুদ্রা মিত্র, জয়তী চক্রবর্তী, ইন্দ্রনীল সেন, রূপঙ্কর, শ্রাবণী সেন, মনোময় ভট্টাচার্য, সিধু (ক্যাকটাস), রূপম ইসলাম, রাঘব চট্টোপাধ্যায়, সৈকত মিত্রসহ অনেকে৷

শ্রীকান্ত আচার্য

সংকট যতটা কঠিন

কিছুদিন আগে ফেসবুকে দেখা যায় কলকাতা শহরের এক বিশিষ্ট গিটারবাদক ও সুরকারের ছবি৷ পেটের দায়ে নিজের বাসার নীচে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দোকান খুলেছেন তিনি৷ খবরের শিরোনামে উঠে আসে আরেক তরুণ সঙ্গীতশিল্পীর কথা, যিনি এখন পথেঘাটে সবজি ফেরি করছেন৷ ডয়চে ভেলের সাথে কথোপকথনে সঙ্গীতশিল্পী শ্রীকান্ত আচার্যও নাম উল্লেখ না করে এক গিটারশিল্পীর কথা বললেন, যাকে বর্তমান পরিস্থিতিতে নিজের মূল্যবান গিটার বেচে দিতে হয়েছে৷ তবে অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গীতজগতেও রয়েছে একই ধারার হাহাকার৷

বহুদিনের প্রিয় বাদ্যযন্ত্র মঞ্চে বা স্টুডিয়োতে বাজানোর বদলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে, বা অনলাইনে শেখাচ্ছেন অনেকে৷ অনেকে যন্ত্র বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস যেমন আলো, মাইক্রোফোন ইত্যাদি বিক্রি করে দিয়ে নতুন কোনো পেশায় ঢুকছেন, সঙ্গীতকে বিদায় জানিয়ে৷ তুলনায় নতুন প্রজন্মের, শহুরে কলাকুশলীদের অবস্থা কিছুটা ভালো৷ ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভ্যস্ত থাকায় সময়ের সাথে নিজেকে বদলানো তাদের পক্ষে সহজ হচ্ছে৷ একটু বয়স্ক শিল্পী ও কলাকুশলীরা তা পারছেন না৷ সংগীত, নৃত্য, অভিনয় এই তিন ক্ষেত্রে যারা পেশাদারীত্বের সাথে যুক্ত, তাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ ও হাতিয়ার এই ইন্টারনেট৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান