1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করোনায় বয়স হারাচ্ছেন চাকরিপ্রার্থীরা

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৬ মে ২০২১

বাংলাদেশে করোনার চাকরিতে কারণে নিয়োগ তেমন না হওয়ায় চাকরি প্রার্থীরা বয়স হারাচ্ছেন৷ বয়সের ব্যাপারে ছাড় ও সমন্বয়ের কথা সরকারের দিক থেকে বলা হলেও বাস্তবে এর কোনো প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না৷

https://p.dw.com/p/3t3FG
Symbolbild Hackerangriff
ছবি: Nicolas Asfouri/AFP/Getty Images

তানভির হোসাইন ঢকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সার্ভিস(এমআইএস) থেকে মাস্টার্স করেছেন ২০১৯ সালে৷ গত বছর করেনার শুরুতে তার সরকারি চাকরির বয়স ছিলো ছয় মাস৷ কিন্ত এখন তার বয়স ৩১ বছর৷ সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা পার হয়ে গেছে৷ এখন তার হতাশা ছাড়া আর কিছুই নেই৷ তিনি বলেন," বাবা-মায়ের মুখের দিকে লজ্জায় তাকাতে পারি না৷ তারাও আমাকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন৷”
তার কথা, শুধু তিনি একা নন করোনার শুরু থেকে এ পর্যন্ত কমপক্ষে দেড় লাখ চাকরিপ্রার্থী তাদের চাকরির বয়স হারিয়েছেন৷ করোনার শুরুতে যাদের বয়স  ২৮ থেকে ৩০ এর মধ্যে ছিলো তাদের কারুরই আর সরকারি চাকরির বয়স নেই৷
বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ সাধারণ বয়সসীমা ৩০ বছর৷ মুক্তিযোদ্ধা, চিকিৎসক আর বিশেষ কোটার ক্ষেত্রে এই বয়সসীমা ৩২ বছর৷ সরকারি ছাড়াও আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানেও একই বয়সসীমা অনুসরণ করা হয়৷
করোনার শুরুতে গত বছরের ২৫ মার্চ যাদের বয়স ৩০ বছর  পেরিয়ে যায় তাদের আরো পাঁচ মাস সরকারি চাকরিতে আবেদনের সুযোগ দেয় সরকার৷ এ নিয়ে একটি আদেশ জারি হলেও সেটা সব ক্ষেত্রে মানা হয়নি৷
যাদের বয়স শেষ হয়ে গেছে বা শেষ হওয়ার পথে তারা সবাই মিলে আন্দোলন শুরু করেছেন৷ রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে চাকরির বয়স ৩২ বছর করার স্মারকলিপি দিয়েছেন৷ তাদেরই একজন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করা সাজিদ রহমান৷ তার সরকারি চাকরির বয়স আছে আর ছয় মাস৷ তিনি জানান," সরকার গত বছর পাঁচ মাস বয়স সমন্বয় করার যে কথা বলেছিল তা শুধু তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগের ব্যাপারে মানা হয়েছে৷ অফিসার পদে মানা হয়নি৷ বাংলাদেশে ব্যাংকে গত বছর অফিসার পদে চাকরির যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয় তাতে বয়স সমন্বয় করা হয়নি৷”
আর গত সপ্তাহে জনপ্রশাসনমন্ত্রী বয়স সমন্বয় করা কথা বলার পর বিসিআইসির অফিসার পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়৷ তাতে বয়স সমন্বয় করা হয়নি বলে জানান তিনি৷
করোনার কারণে পরীক্ষাও পিছিয়ে গেছে৷ যাদের বয়স এখন ২৯ ও ৩০ তারাও বিপদে আছে৷ তাই সব মিলিয়ে যদি চাকরির বয়স দুই বছর ছাড় দেয়া হয় তাহলে সবাই উপকৃত হবে বলে তিনি মনে করেন৷
করোনার কারণে দেশে ব্যাংকসহ বড় বড় নিয়োগ পরীক্ষা হয়নি৷ গত বছরের ৪২তম বিসিএস-এর প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হয়েছে চলতি বছরে৷ ৪৩ তম বিসিএস পরীক্ষা পেন্ডিং আছে৷ গত বছর চিকিৎসকদের একটি বিশেষ বিসিএস পরীক্ষা হয়েছে৷ ৪১ তম বিসিএস-এর লিখিত পরীক্ষা হলেও ভাইভা আটকে গেছে৷ আর বেসরকারি চাকরিতেও তেমন নিয়োগ নাই৷
বিআইডিএস-এর অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বলেন," আমরা যদি জনসংখ্যার হিসেব করি যে প্রতিবছর কতজনের ৩০ বছর বয়স অতিক্রান্ত হয় তাহলে তা বছরে দেড় লাখের কম হবেনা৷ তবে  ঠিক কতজন চাকরির বয়স হারিয়েছে সেটা করোনা শেষ হলে হিসাব নিকাশ করে বোঝা যাবে৷ আর যাদের বয়স ২৯ পার হয়ে গেছে তারাও শেষ পর্যায়ে আছেন৷ যেহেতু একটা লম্বা সময় ধরে নিয়োগ বন্ধ আছে  তাই এই সময়ে কমপক্ষে দেড় লাখ চাকরি প্রার্থী চাকরির বয়স হারিয়েছেন সেটা বলা যায় চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ সময় সীমা ৩০ বছর ধরে৷”
স্বাভাবিক অবস্থায় প্রতি বছর ২০ লাখ মানুষ কাজের বাজারে আসেন৷ তার মধ্যে সরকারি, বেসরকারি ও বিদেশে যাওয়া মিলিয়ে ১৬ লাখের মত চাকরি পান৷ করোনার কারণে গত দুই বছর তাতে ধস নেমেছে৷ তাই নাজনীন আহমেদ মনে করেন, এই বছর যাদের চাকরির ৩০ বছর পার হয়ে গেছে তাদের পরবর্তী এক বছর সুযোগ দেয়া উচিত৷ এটা আইনের মাধ্যমে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করে দেয়া যায়৷
এব্যাপারে  বক্তব্য জানতে চেষ্টা করেও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ও সচিবের সাথে কথা বলা যায়নি৷

তানভির হোসাইন

ড. নাজনীন আহমেদ