1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করোনা আতঙ্কে মন্ত্রী-সাংসদরা এড়াচ্ছেন আলিঙ্গন, করমর্দন

১৮ মার্চ ২০২০

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর দলের নেতাদের জানিয়েছেন, নির্ধারিত সূচিতে চলবে সংসদ অধিবেশন৷ সংসদে চলছে ‘থার্মাল স্ক্রিনিং'৷ বসেছে ‘হ্যান্ড স্যানিটাইজার'৷ তাতেও আশ্বস্ত হতে পারছেন না সাংসদরা৷ ক্রমশ ফাঁকা হচ্ছে সংসদ৷

https://p.dw.com/p/3ZcO1
ছবি: picture-alliance/dpa/STR

করোনা ভাইরাস সংক্রমণের আতঙ্কে কাঁপছে গোটা ভারত৷ সেই সঙ্গে অত্যন্ত সতর্কও৷ সংসদে দর্শকদের আনাগোনা বন্ধ রাখা হয়েছে৷ কর্মী, সাংবাদিক-সহ অন্যদের জন্য থার্মাল স্ক্রিনিং'বাধ্যতামূলক করা হয়েছে৷ বাজারে মিলছে না হ্যান্ড স্যানিটাইজার৷ তবে, সংসদ ভবনের জায়গায় জায়গায় রাখা হয়েছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার৷ যার বেশিরভাগই ফাঁকা পড়ে রয়েছে৷ সেন্ট্রাল হলে অবশ্য দু-হাত ছাড়া স্যানিটাইজার মিলছে৷ কিন্তু, ক্যান্টিন, টয়লেট, লাইব্রেরি প্রভৃতি জায়গায় রীতিমতো বুকে ভয় নিয়ে ঘুরছেন সাংসদরা৷ মঙ্গলবার দুপুরে সেন্ট্রাল হলে মহারাষ্ট্রের এক সাংসদ সজোরে হাঁচি দিতেই মুহুর্তে ফাঁকা হয়ে গেল চারিদিক৷ সাংসদরা যে যেদিকে পারলেন, সরে গেলেন৷ পীযূষ গোয়েলকে দেখা গেল বেশ চিন্তিত৷ বিভিন্ন শহরের মধ্যে রেল যোগাযোগ বন্ধ রাখা হবে কিনা, সাংসদদের প্রশ্নের বাণ ধেয়ে আসছে তাঁর দিকে৷ প্রাক্তন তথা তীর্থঙ্কর মহাবীর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটর জে কে জৈন সেন্ট্রাল হলে বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ করছেন৷

ওদিকে, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে বেরিয়ে এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সামনে আসতেই স্বভাবসিদ্ধ ভাবে করমর্দনের জন্য হাত বাড়িয়ে দিলেন দক্ষিণের এক সাংসদ৷ করমর্দন এড়িয়ে হাতজড়ো করে পাশ কাটিয়ে গেলেন মন্ত্রী৷ ওদিকে, সাংসদদের জন্য না হলেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে এদিন যাঁরা দেখা করতে এলেন, তাঁদের সকলের পৃথক ভাবে ‘থার্মাল স্ক্রিনিং'করলেন নিরাপত্তারক্ষীরা৷ স্যানিটাইজার দিয়ে হাত সাফ করিয়ে ঢোকানো হল মোদীর দপ্তরে৷ সকালে দলের সংসদীয় কমিটির বৈঠকে মোদী বলেছেন, ‘‘আমরা যদি সংসদ অধিবেশন বন্ধ করে দিই তাহলে দেশে ভুল বার্তা যাবে৷ চিকিৎসকরা যদি হাসপাতালে যেতে না চান কী হবে!তাই অধিবেশন চলুক৷''এতকিছুর পরেও দলমত নির্বিশেষে করোনা আতঙ্কে ভুগছেন সাংসদরা৷ অনেকেই চাইছেন, অধিবেশন স্থগিত রাখা হোক৷ তাঁদের যুক্তি, স্কুল, কলেজ বন্ধ রেখে দেশের প্রায় সর্বত্র ৫০ জনের বেশি জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে৷ অথচ সংসদ ভবনে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষের সমাগম হয়৷ সেক্ষেত্রে সাংসদরা মারণ ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচবেন কীভাবে?

এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ভেল্লামভেল্লি মুরলধরণ করোনা সংক্রমণ সন্দেহে ‘সেল্ফ আইসোলেশন'এ রয়েছেন৷ সরকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গোটা দেশে এ পর্যন্ত ১২৬জনের শরীরে করোনা ভাইরাস মিলেছে৷ মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের৷ কেরলের এক হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে এক চিকিৎসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন৷ পরে সেই চিকিৎসক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে চিহ্নিত হন৷ এই তথ্য সামনে আসতেই নিজেকে গৃহবন্দি করে রেখেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী৷ তবে, তাঁর শারীরিক পরীক্ষায় ‘নেগেটিভ'রেজাল্ট এসেছে৷ কিন্তু, সাবধানতা অবলম্বন করে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন তিনি৷

এদিকে, ভারতে ওষুধ ও ওষুধ তৈরির কাঁচামালের একটা বড় অংশ চীন থেকে আমদানি করা হয়৷ পরিমাণের হিসেবে ভারতের ফার্মাসিউটিক্যাল বাজার বিশ্বের তৃতীয় স্থানে রয়েছে৷ মূল্যের নিরিখে ভারত ১৪তম স্থানে৷ ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে ভারত বিদেশ থেকে ১৪,৩৮৯ মার্কিণ ডলারের ওষুধ আমদানি করেছে৷ এর প৬৭ শতাংশ আমদানি হয় চীন থেকে৷ এখন করোনা ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে বিশ্বজুড়ে হইচইয়ের পর ভারতে তার প্রভাব পড়েছে৷ যদিও লোকসভায় তৃণমূল সাংসদ মালা রায়ের এক প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্রীয় কেমিক্যাল ও ফার্টিলাইজার মন্ত্রী ডি ভি সদানন্দ গৌড়া জানিয়েছেন, ‘‘ফার্মাসিউটিক্যাল দপ্তর যুগ্ম ড্রাগ কন্ট্রোলার ঈশ্বর রেড্ডির নেতৃত্বে একটি উচ্চ পরযায়ের কমিটি গঠন করেছে৷ কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতের হাতে যে পরিমাণ এপিআই(অ্যাক্টিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্টস)রয়েছে তা দিয়ে আগামী ২-৩ মাস পর্যাপ্ত পরিমাণ ওষুধ সরবরাহ করা যাবে৷ ওষুধের মূল্য নির্ধারণ সংস্থা এবং সমস্ত রাজ্য সরকারকে ওষুধ সরবরাহের দিকে নজর রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷''মালা রায়ের প্রশ্নের জবাবে সরকারের তরফে আরও জানানো হয়েছে, ‘‘তবে, চীনের হুবেই থেকে আমদানি করা হত যে সব ওষুধ তার জোগানে টান পড়ার ফলে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে৷''

দু-দিন আগে রাজ্যসভায় করোনা নিয়ে আলোচনা চেয়ে নোটিশ দিয়েছিলেন তৃণমূল, বিজেপি, বিজেডি এবং এআইএডিএমকে দলের চার সাংসদ৷ তাঁদের নোটিশ গৃহীত হয়নি৷ কোনও করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি যাতে সংসদে ঢুকতে না পারেন, তাই বিরোধী দলের নেতারা সংসদের প্রত্যেকটি গেটে ‘থার্মাল স্ক্রিনিং'চালু করার দাবি জানিয়েছিলেন৷ কয়েকজন সাংসদ এয়ারপোর্ট, এটিএম-সহ নানা জায়গায় আরও বেশি পরীক্ষার বন্দোবস্ত করার দাবি তুলেছেন৷

অন্যদিকে, করোনা ভাইরাস সংক্রমণকে সুনামির সঙ্গে তুলনা করে মোদী সরকারকে সতর্ক করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী৷ কোভিড-১৯ ঠেকানোর পাশাপাশি আসন্ন অর্থনৈতিক বিপর্যয় নিয়েও সরকারকে সতর্ক করেছেন তিনি৷ তাঁর কথায়, ‘‘সুনামির মতো করোনা ভাইরাস ধেয়ে আসছে৷ এর ফলে দেশে আর্থিক সঙ্কটের জন্যও আগেভাগে তৈরি থাকা উচিত৷ কারণ দেশের অর্থনীতি ধ্বংসের পথে৷''বিজেপি সাংসদ তথা অভিনেত্রী হেমা মালিনী এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘‘দেশে বহু মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন৷ সংসদে বহু মানুষ আসেন৷ আমরা আমাদের কাজ করে চলেছি৷ কিন্তু, এখন ভাবনা চিন্তা করার সময় এসেছে৷''