1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করোনা ভাইরাস: বিশ্বযুদ্ধের সংকটে অর্থনীতি

১ এপ্রিল ২০২০

দুই বিশ্বযুদ্ধ দুনিয়ার অর্থনীতিকে যে সংকটে ফেলেছিল, করোনা ভাইরাসের কারণে সেরকম সংকট দেখা দেবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন জার্মান অধ্যাপক আলব্রেশট রিচেল৷ এমনকি দেখা দিতে পারে মহামন্দা৷

https://p.dw.com/p/3aIii
ছবি: Imago-Images/ZUMA Wire/C. Comton

লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স এর অর্থনৈতিক ইতিহাসের অধ্যাপক রিচেল ডয়চে ভেলেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন৷

ডয়চে ভেলে: আপনি একজন ইতিহাসবিদ এবং অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে পড়াশুনা করেছেন৷ মূলত কী দেখে অর্থনৈতিক সংকট বোঝা যায়?

অধ্যাপক আলব্রেশট রিচেল: চাহিদা কমে যাওয়া, উৎপাদনে অতিমন্দা, বেকারত্ব অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়া, আর্থিক সংকট এবং তারপর প্রবল ঋণ সংকট৷ এসবই চরম অর্থনৈতিক সংকটের লক্ষণ

বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটে বিশ্ব আসলে কোথায় দাঁড়িয়ে আছে?

আমরা এই সংকটের একেবারে শুরুতে দাঁড়িয়ে আছি৷ ১৯৩০ এর দশকের শুরুতে যে মহামন্দা দেখা দিয়েছিল এটা তার থেকেও খারাপ হতে পারে৷

বলতে গেলে বিশ্ব অর্থনীতি প্রায় সম্পূর্ণরূপে অচল হয়ে আছে৷ কারণ বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে সব ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধ৷ এ অবস্থা আগে কখনো হয়েছিল?

কোনো কিছুর সঙ্গেই বর্তমান অবস্থার তুলনা চলে না৷ সবচেয়ে কাছাকাছি কিছু বলতে হলে বিশ্বযুদ্ধের সময়ের অর্থনীতির কথা বলা যায়৷ দুই বিশ্বযুদ্ধের সময় পৃথিবীজুড়ে রেস্তোরাঁ এবং ছোট দোকান বন্ধ ছিল৷ নিশ্চিত ভাবে যুদ্ধকালীন অর্থনীতিতে নিজেদের সম্পদ বাঁচাতে মানুষ সেটা করেছিল৷ কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি ঠিক সেরকমও নয়৷ দুইয়ের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য আছে৷

অর্থনীতির এ অচলাবস্থা আমরা কতদিন সামলাতে পারবো?

Wirtschaftskrise Weimarer Republik Schlange vor Berliner Leihamt 1924
১৯৩০ এর দশকের মহামন্দার থেকেও পরিস্থিতি খারাপ হতে পারেছবি: picture-alliance/akg-images

আমরা সবাই এখন এটাই ভাবছি, যখন পণ্যের যোগানে সংকট দেখা দেবে বা সামাজিক অস্থিরতার সৃষ্টি হবে তখন কি হবে৷ সারা বিশ্বে রাজনীতিকদের মধ্যেও এক ধরনের ‍আতঙ্ক আমরা দেখতে পাচ্ছি৷ বিশেষ করে অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্টের আচরণে এটা বেশ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে৷ ইস্টারের পর আবার অর্থনীতির চাকা সচল করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি নিজের চামড়া বাঁচাতে চাইছেন৷ কেউ জানে না কোথা থেকে তিনি এই বুদ্ধি পেয়েছেন৷ তবে এটা বোঝা যাচ্ছে, বিশেষজ্ঞদের মতের তোয়াক্কা না করেই রাজনৈতিকভাবে ছক কষা হচ্ছে৷

এ ধরনের পরিস্থিতিতে সরকারের কী করার ক্ষমতা আছে?

বর্তমান সংকটে নানা দেশ ‍নানা অপ্রচলিত মুদ্রানীতি গ্রহণ করেছে, ভর্তুকি দিয়ে অর্থনীতিকে মন্দার ‍হাত থেকে রক্ষা করতে চাইছে, যেমন যুক্তরাষ্ট্র৷ অর্থনীতিকে বাঁচাতে জার্মানির দীর্ঘদিনের অস্ত্র ‘শর্ট-টাইম ওয়ার্ক’ দিয়েও কিছু হবে বলে মনে হচ্ছে না৷ বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানি এই অস্ত্রই ব্যবহার করেছিল৷ এটা অনেকটা টাকা দিয়ে আগুন নেভানোর মত৷ কিন্তু এবার এইসব ব্যবস্থা কাজে আসবে কিনা তা করো জানা নেই৷ রোগে ভোগার চাইতে রোগ থেকে বাঁচার উদ্যোগ কি বেশি বিপর্যয় ডেকে আনছে? চারিদিকে এখন এই বিতর্ক চলছে৷

নানা দেশ বর্তমান সংকট মোকাবেলায় প্রচুর অর্থ ব্যয় করছে৷ বলা যায় নতুন মুদ্রা ছাপিয়ে তারা এটা করছে৷ এর পরিণতি কি বিশ্বজুড়ে ভয়াবহ মুদ্রাস্ফ্রীতি?

আমরা এখনো জানি না ঠিক এমনটাই হচ্ছে কিনা৷ ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক সংকটের সময় অর্থনীতিবীদরা এমন আভাস দিয়েছিলেন৷ কিন্তু তারা সবাই ভুল প্রমাণিত হয়েছেন, এমনকি আমিও সেই দলে৷ তাই এখন আমি যেটা বলতে পারি সেটা হলো, আমরা আসলেই জানি না কি হচ্ছে৷ তবে সেই ঝুঁকি আছে, দ্বিগুণ হারে আছে৷ 

Veranstaltung über eine Lösung der Reparationsfrage zwischen Deutschland und Griechenland
আলব্রেশট রিচেল, অধ্যাপক, লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সছবি: DW/P. Kouparanis

সংকটের কারণে অর্থনীতিতে পরিবর্ত আসলে আমরা কী করবো?

শিল্প ও বিভাগীয় কর্মপদ্ধতিতে বর্তমান সংকটের মূল প্রভাবটা পড়েছে৷ এখন আমরা কি করছি: বাড়িতে বসে অফিস করছি৷ আমি খুব ভালো ভাবে জানি, ভবিষ্যতে ঠিক এভাবেই বাড়িতে বসে অনেকে কাজ করবেন, এ পদ্ধতি চালু হবে৷ সব বড় যুদ্ধ, বড় সংকট কাজের ধরনে পরিবর্তন এনেছে৷

কোনো উদাহরণ দিতে পারেন?

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর নারীদের কর্মসংস্থানের হার বেড়েছে৷ ট্রেড ইউনিয়ন স্বীকৃতি পেয়েছে, দিনে আট ঘণ্টা কাজের সময় নির্ধারিত হয়েছে, মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত হয়েছে৷

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর শিল্পে পণ্য উৎপাদন ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে৷ সমাজে ভোক্তা বেড়েছে, সাধারণ মানুষ উচ্চতর শিক্ষার সুযোগ পেয়েছে৷ অর্থনৈতিক সংকটের পর এভাবেই সমাজে আমূল পরিবর্তন আসে৷

এমন কোন বিষয় কি আছে যা আমাদের এই সংকট থেকে রক্ষা করতে পারে?

এই সংকট থেকে উত্তরণের উপায় হতে পারে সরকারি ঋণ৷ সংকট শুরুর আগে যেসব দেশের কাঁধে ঋণের বোঝা কম ছিল তারা দ্রুত বর্তমান পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন৷ বাকিদের দীর্ঘদিন অর্থনৈতিক সংকটের সঙ্গে লড়াই করতে হবে৷ ২০০৮ সালের বৈশ্বিক মন্দার সময় দক্ষিণ ইউরোপের দেশগুলো যেভাবে নিজেদের রক্ষা করে উদাহরণ তৈরি করেছিল, আবারও সেটা হতে যাচ্ছে৷

তার মানে আপনি বলতে চাইছেন জার্মানি সংকট মোকাবেলায় প্রস্তুত আছে?

ভারসাম্যপূর্ণ বাজেট ব্যবস্থার মাধ্যমে জার্মানি নিজেদের সুবিধাজনক অবস্থানে রেখেছে৷ তাই এই সংকট মোকাবেলায় জার্মান সরকার ব্যাপক আকারে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছে৷ আমি বলবো, জার্মানির অবস্থান বেশ ভালো৷ কিন্তু অন্যান্য শক্তিশালী অর্থনীতির দেশগুলোর তুলনায় নানা আন্তর্জাতিক বিষয়ে জার্মানি নিজদের বেশি জড়িয়েছে৷ যার ফলে অন্যদের তুলনায় আমাদের প্রতিবেশীদের ভালো করার উপর বেশি নির্ভর করতে হবে৷

নিকোলাস ‍মার্টন/এসএনএল

দেখুন ২০ মার্চের ছবিঘর...

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য