1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করোনা ভাইরাস: মৃত্যু হারে এত পার্থক্য কেন?

২৮ মার্চ ২০২০

একই রোগ হলেও করোনা ভাইরাসে বিভিন্ন দেশে মৃত্যু হারে রয়েছে বিস্তর পার্থক্য৷ এর কারণ কী? কিভাবে কিছু কিছু দেশ মৃত্যুর হার কমিয়ে রাখতে সক্ষম হচ্ছে, ঠেকিয়ে রাখতে পেরেছে সংক্রমণের প্রকোপও? 

https://p.dw.com/p/3aAIr
ছবি: picture-alliance/dpa/AP/LaPresse/C. Furlan

বাংলাদেশ সরকারের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর এর দেয়া তথ্য অনুযায়ী শনিবার পর্যন্ত দেশটিতে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী ধরা পড়েছেন মাত্র ৪৮ জন৷ এর মধ্যে মারা গেছেন পাঁচজন৷ অর্থাৎ আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুর হার প্রায় ১০ দশমিক চার দুই ভাগ৷ ইটালিতে এই হার দশ দশমিক দুই ভাগ, স্পেনে সাত দশমিক ছয় ভাগ৷ কিন্তু ইউরোপের অন্য দেশ জার্মানিতেই মৃত্যু হার মাত্র দশমিক ছয় ভাগ৷ 

হিসাবটি আরো সহজ করে বললে, জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রতি দশ লাখে ইটালিতে মারা যাচ্ছেন ১২৪ জন, স্পেনে ৭৮ জন, ইরানে ২৫ জন, ফ্রান্সে ২০ জন, যুক্তরাজ্যে সাতজন করে৷ অন্যদিকে জার্মানিতে দশ লাখে মৃত্যুর অনুপাত দুই দশমিক চার আটজন৷ যেই চীন থেকে এই ভাইরাসের উদ্ভব সেখানে দুই দশমিক তিন ছয় জন৷

মৃত্যু হারের এই পার্থক্যের বেশ কিছু কারণ চিহ্নিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷ কোন দেশে কতজন মারা যাচ্ছেন তা নির্ভর করছে জনসংখ্যায় বয়সের অনুপাত, দেশগুলোর স্বাস্থ্য সেবার সক্ষমতা আর সবশেষে কতজনকে পরীক্ষা করা হচ্ছে তার উপর৷ শেষেরটির উপরই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে সংস্থাটি৷

কতজনকে পরীক্ষা করা হয়েছে?

আন্দ্রেয়াস ব্যাকহাউস নামের একজন জার্মান অর্থনীতিবিদের হিসাবে ইটালিতে করোনায় আক্রান্ত মানুষদের গড় বয়স ৬৩ বছর, জার্মানিতে তা ৪৫৷ জার্মানির তুলনায় ইটালি অল্প বয়সের নাগরিকদের করোনা পরীক্ষার আওতায় কম আনছে, এই পরিসংখ্যান অনেকটা সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে৷ ইটালির গণমাধ্যমগুলোতেও এই সংক্রান্ত খবর প্রকাশ হয়েছে৷ সেখানে অনেক সম্ভাব্য রোগীই করোনা পরীক্ষার বাইরে থেকে যাচ্ছেন৷ এমনকি যারা মারা যাচ্ছেন তাদেরও অনেকে পরীক্ষার আওতায় আসছেন না৷

অন্যদিকে ঠিক বিপরীত চিত্র দক্ষিণ কোরিয়াতে৷ দেশটি কমপক্ষে তিন লাখ জনগণের করোনা ভাইরাসের পরীক্ষা করেছে৷ তার মধ্যে নয় হাজার জনের সংক্রমণ ধরা পড়েছে৷ বড় আকারে পরীক্ষার উদ্যোগের কারণে তারা সংক্রমণ ও মৃত্যু দুটোই নিয়ন্ত্রণে রাখতে সফল হয়েছে৷ 

জনস্যংখ্যায় বয়সের অনুপাত কত?

করোনা ভাইরাসে বয়স্করাই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে৷ ভাইরাসটি তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে দিয়ে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়৷ ইটালিতে মৃত্যু হার বেশি হওয়ার জন্য বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বেশিকেই অনেকে দায়ী করে থাকেন৷ কিন্তু জার্মানি আর ইটালি দুই দেশেরই মানুষের গড় বয়স ৪৬ করে৷ তারপরও তাদের মৃত্যু হারে তফাতের কারণ কী?

অনেকের মতে  কোন দেশ কত আগে আক্রান্ত হয়েছে এবং কবে থেকে আক্রান্তরা মারা যেতে শুরু করেছেন তার উপর মৃত্যুহার নির্ভর করছে৷ কেউ কেউ মনে করেন জার্মানি এখনও মহামারির সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌছেনি৷ সেই জায়গায় যখন তারা পৌছাবে মৃত্যুহারও তখন বেড়ে যাবে৷

স্বাস্থ্য সেবা কার কেমন?

এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় কোন দেশের স্বাস্থ্যসেবা কতটা সক্ষম সেটিও বড় ভূমিকা রাখছে৷ করোনা ভাইরাসে সঙ্কটাপন্ন রোগীদের বাঁচাতে প্রয়োজন কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস যন্ত্র৷ হাসপাতালগুলোতে থাকতে হবে পর্যাপ্ত শয্যা আর নিবিড় পর্যবেক্ষণের যন্ত্রাদিও৷ এইসব সুবিধা যেসব রোগীরা পাবেন তাদের বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে, না পেলে থাকে মৃত্যু ঝুঁকি৷

ইটালিতে জনসংখ্যা মোট ছয় কোটি৷ সেখানে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার সময় হাসপাতাগুলোতে নিবিড় পর্যবেক্ষণ শয্যার সংখ্যা ছিল পাঁচ হাজার৷ অন্যদিকে আট কোটি জনসংখ্যার বিপরীতে জার্মানিতে এই ধরনের শয্যা আছে ২৮ হাজার৷ এই সংখ্যা শিগগিরই দ্বিগুণ করার প্রক্রিয়াও চলছে৷

প্রতি লাখ মানুষের বিপরীতে জার্মানির হাসপাতালগুলো আইসিইউ শয্যা সুবিধা আছে ২৯ টি আর যুক্তরাষ্ট্রে ৩৪টি৷ যেখানে ইটালিতে রয়েছে ১২ টি আর স্পেনে ১০ টি৷ শেষের দুইটি দেশেরই মৃত্যু হার অন্য দেশগুলোর চেয়ে তুলনামূলক বেশি৷

কিন্তু উল্টো চিত্রও আছে৷ প্রতি লাখ জনসংখ্যার বিপরীতে নিবিড় পর্যবেক্ষেণ সুবিধা সম্বলিত শয্যার সংখ্যা মাত্র দশটি দক্ষিণ কোরিয়াতেও৷ কিন্তু তারপরও মৃত্যু হার তারা এক ভাগের নীচে নামিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে, খুব দ্রুত সংক্রমণের হারও কমিয়েছে৷ যা সম্ভব হয়েছে হোম কোয়ারান্টিনের কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার মধ্য দিয়ে৷

গুডরুন হাইসা/এফএস