1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কর্তব্যরত অবস্থায় পুলিশের ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ

সমীর কুমার দে
২৪ মার্চ ২০১৮

জরুরি প্রয়োজন ছাড়া দায়িত্বরত অবস্থায় পুলিশ সদস্যদের মোবাইল ফোন ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে৷ পাশাপাশি সেলফি তুলে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করার উপর জারি করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা৷

https://p.dw.com/p/2uuN9
Prof. Zafar Iqbal  Angriff  Universität Wissenschaft und Technologie Bangladesch
পুলিশ ব্যস্ত মোবাইল ফোনে, এরপরই ঘটে হামলার ঘটনাটি (৩রা মার্চের ছবি)ছবি: bdnews24.com

১২ মার্চ পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীর জারি করা এমন একটি আদেশ (পুলিশ অর্ডার নম্বর-১/২০১৮) এরই মধ্যে পুলিশের দফতরে দফতরে পাঠানো হয়েছে৷ কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞা নতুন নয়৷ ২০১৫ সালেও এমন নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছিল, যা কার্যকর হয়নি৷ এর কারণ হিসেবে প্রথমেই উঠে আসে মনিটরিং এর কথা৷ এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে হলে প্রয়োজন যথাযথ মনিটরিং৷ তবে এ ধরণের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পুলিশের সাবেক কর্মকর্তারা৷ তাঁদের মতে কিছু বিভাগের ক্ষেত্রে এমন নিষেজ্ঞার প্রয়োজন আছে৷ তবে সবক্ষেত্রে এটার প্রয়োজন নেই৷

‘সম্প্রতি কয়েকটি ঘটনার কারণে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে’

মোবাইল ফোন ব্যবহার সংক্রান্ত আদেশটিতে বলা হয়েছে ‘‘অনুমোদন ছাড়া দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের মোবাইল ব্যবহার ‘কর্তব্যে অবহেলা' হিসেবে গণ্য হবে৷''

এসকর্ট, ভিভিআইপিদের নিরাপত্তাসহ যাবতীয় অপারেশনে থাকা পুলিশ সদস্যদের জন্য এই আদেশে তিন দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে৷ এতে বলা হয়েছে, ‘জরুরি প্রয়োজন ছাড়া দায়িত্বরত কোন পুলিশসদস্য মোবাইল ব্যবহার করতে পারবে না৷ নিরাপত্তার দায়িত্ব বণ্টনের সময় কোন কোন সদস্য মোবাইল ব্যবহার করবেন তার নাম এবং নম্বর নামের পাশে উল্লেখ করতে হবে৷ এছাড়া কর্তব্যরত অবস্থায় মোবাইলে সেলফি বা ছবি তুলে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা যাবে না৷' কর্তব্যরত অবস্থায় মোবাইল ফোনে গেম খেলা, ভিডিও দেখা, গান শোনা, ইউটিউব, ফেসুবক ব্যবহার এবং অনলাইন নিউজপোর্টালের খবর পাঠের উপরও নিষেধাজ্ঞা এসেছে আইজিপির নির্দেশনায়৷

‘এই নিষেধাজ্ঞা কিছু কিছু ক্ষেত্রে হতে পারে, সবক্ষেত্রে দরকার নেই’

আইজিপির নির্দেশনার শুরুতে বলা হয়েছে, ‘সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশ সদস্যরা জরুরি দায়িত্ব পালনের সময় অনিয়ন্ত্রিতভাবে মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে৷ এতে দায়িত্ব পালন ব্যাহত হচ্ছে৷ পুলিশ সদস্যদের নিজেদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে৷ সর্বোপরি পুলিশকে দেওয়া অস্ত্র-গুলি এবং সরকারি সম্পদেরও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে৷'

এই নির্দেশনা প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হয়েছিল পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) সহেলী ফেরদৌসের কাছে৷ তিনি  বলেন, ‘‘পুলিশের সব ইউনিটের জন্য আইজিপি স্যারের নির্দেশনাটি জারি হয়েছে৷ সংশ্লিষ্ট নির্দেশনা সকল ইউনিটে পাঠানো হয়েছে৷''

গত ৩ মার্চ সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মুহম্মদ জাফর ইকবালের উপর হামলা হয়৷ এরপর সেখানে দায়িত্বরত অবস্থায় কয়েকজন পুলিশ সদস্যের মোবাইলে ব্যস্ত থাকা ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে৷ ঐ ঘটনার পরই এই আদেশ জারি করা হলো কিনা জানতে চাওয়া হলে সহেলী ফেরদৌস বলেন, ‘‘সেটা একটা কারণ, তবে সম্প্রতি আরও কয়েকটি ঘটনার কারণে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে৷''

একই প্রসঙ্গে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নুরুল হুদা বলেন, ‘‘তথ্য-প্রযুক্তির যুগে মোবাইল ফোন থেকে দূরে থাকাটা কঠিন৷ মোবাইল ফোন আমাদের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে৷ পারিবারিক খবরাখবরও আমরা সেখান থেকেই পাই৷

‘কাজের সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার না করাই ভালো’

তাই এই নিষেধাজ্ঞা কিছু কিছু ক্ষেত্রে হতে পারে, সবক্ষেত্রে দরকার নেই৷ বিশেষ করে যারা বিমানবন্দরে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন তাদের কাছে মোবাইল ফোন না থাকাই ভালো৷ সেখানে একটি বিশেষ নম্বর থাকবে, কারো প্রয়োজন হলে সেই নম্বর দিয়ে কথা বলবে৷ অ্যামেরিকার অনেক জায়গায় তো পুলিশ সদস্যদের শরীরে ক্যামেরা সেট করা থাকে, যাতে তারা কখন কি করছে সে সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য জানা যায়৷ আমরা এখনো সেখানে যেতে পারিনি৷ আর সেলফির ব্যাপারে আমি বলব, এটা না করাই ভালো৷''

পুলিশের আরেকজন সাবেক মহাপরিদর্শক নূর মোহাম্মদ অবশ্য জানান, ‘‘এ ধরনের নির্দেশনা মাঝে মধ্যেই দিতে হয়৷ এটা এমন কিছু না৷  উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এটা মনিটর করতে হবে৷ সবার তো মোবাইল ফোন নিষিদ্ধ করা যাবে না৷ দরকারি জায়গাগুলো দেখে এটা করতে হবে৷ যারা দায়িত্ব পালন করবেন, তাদের উদ্দেশে আমি বলব, কাজের সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার না করাই ভালো৷ কারণ তাদের বুঝতে হবে, তারা যে দায়িত্বটি পালন করছেন সেটি কি দায়িত্ব?''

এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷