1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কর্নাটকে নাটকীয় পরিস্থিতি

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুন দিল্লি
১৫ মে ২০১৮

দক্ষিণী রাজ্য কর্নাটক বিধানসভার নির্বাচনে সব হিসেব উলটে দিয়ে বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে৷ তাই কংগ্রেস ও জেডি (এস) জোট সরকার গড়ার দাবি জানিয়েছে৷ উভয় পক্ষই সরকার গঠনের দাবি নিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে গেছে৷

https://p.dw.com/p/2xl5X
ছবি: Getty Images/AFP/M. Kiran

বুথ ফেরত যাবতীয় সমীক্ষার যাবতীয় পাটিগণিত উলটে দিয়ে কংগ্রেস শাসিত দক্ষিণী রাজ্য কর্নাটকে বিজেপি সরকার গড়ার মতো একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে৷ কিন্তু নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি৷ এটাকেই অবশ্য গৈরিক পতাকার বড় জয় বলে মনে করছে পর্যবেক্ষক মহল৷ বিশেষ করে দক্ষিণ ভারতে কর্নাটক বিধানসভার মোট ২২৪টি আসনের মধ্যে ভোট হয় ২২২টি আসনে৷ বিজেপি একাই পেয়েছে ১০৬টি আসন৷ কংগ্রেস ৭৭টি এবং জেডি (এস) পেয়েছে ৩৭টি আসন৷ নির্দল পেয়েছে ২টি আসন৷ একক বৃহত্তম দল হিসেবে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী বি.এস ইয়েদুরাপ্পা সরকার গঠনের দাবি নিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে যান৷ বিজেপিকে আটকাতে কংগ্রেস ও জেডি (এস) জোট সরকার গড়ার দাবি জানাতে রাজ্যপালের সাক্ষাৎ প্রার্থী৷ সম্ভাব্য জোটের মিলিত আসন সংখ্যা ১১৪৷ এই জোট নির্বাচনের আগে হয়নি৷ হয়েছে ভোটের ফলাফল দেখার পর৷ রাজ্যপাল এখনও পর্যন্ত কোনো পক্ষের সঙ্গেই দেখা করেননি৷

রাজভবনের সামনে এই নিয়ে এক নাটকীয় পরিস্থিতি৷ সম্ভবত সাসপেন্স কাটবে আগামীকাল৷ শেষকথা বলবেন রাজ্যপাল৷ কে সরকার গড়বে তা তখনই জানা যাবে৷

এর আগে বিভিন্ন সমীক্ষায় ত্রিশঙ্কু বিধানসভার কথা বলা হয়েছিল৷ সেদিকে তাকিয়ে বিজেপি এবং কংগ্রেস তৃতীয় বৃহত্তম দল প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী দেবে গৌড়ার জেডি (এস) দলের সঙ্গে জোট বাঁধার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো৷ কিন্তু জেডি(এস) কারোর সঙ্গেই প্রাক-নির্বাচনি জোট বাঁধতে রাজি হয়নি৷ হতে চেয়েছিল কিং-মেকার৷ সেটাই হয়েছে৷ ভোটের ফলাফলে বিজেপির সাফল্য দেখে সবাই এখন বলছে প্রধানমন্ত্রী মোদীর ক্যারিশমাই দলকে এতগুলি আসনে জিতিয়েছে৷ কর্নাটকে যেভাবে তিনি নির্বাচনি প্রচারে নেমেছিলেন সাধারণ মানুষ তাতেই মুগ্ধ৷ বিজেপিও মনে করে, তাদের তুরুপের তাস একটাই৷ নির্বাচনে একটাই ইস্যু৷ সেটা হলো স্বয়ং মোদী৷ রাজ্যে মোদী ২১টি নির্বাচনি জনসভায় ভাষণ দিয়েছিলেন৷ বিষয় ছিল সবেতেই স্থানীয় ইস্যু এবং তার সমাধান৷ যেমন, গ্যাস কানেকশন, গ্রামীণ বৈদ্যুতিকরণ, গ্রামাঞ্চলে টয়লেট, গরিবদের স্বাস্থ্য বিমা, আবাসন, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ইত্যাদি৷

বিমুদ্রাকরণ, কালো টাকা, ধর্মীয় মেরুকরণ, দলিত নির্যাতন ইত্যাদি নিয়ে বিরোধীপক্ষ যখন সোচ্চার, তখন মোদী তাঁর স্বচ্ছ ভাবমূর্তি দিয়ে সেই আবহকে বিরোধীদের বিপক্ষেই কাজে লাগিয়েছেন৷ ভোটারদের মনে দাগ কাটতে পেরেছেন এই বলে যে, যারা গরিবদের টাকা লুঠ করেছিল, সেই টাকা তাঁদের ফেরত দেবার জন্যই এই বিমুদ্রাকরণ৷ ন্যাশনাল হেরাল্ড পত্রিকা মামলায় সোনিয়া গান্ধী এবং রাহুল গান্ধী যে জামিনে ছাড়া পেয়েছেন, জনসভায় সে কথাও তুলতে ভোলেননি নরেন্দ্র মোদী৷ তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন কর্নাটকের বড় মাপের নেতা বিজেপির বি.এস ইয়াদুরাপ্পা৷ তবে তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ছিল৷ তারপরও তিনি রাজ্যে লিঙ্গায়েত সম্প্রদায়ের অবিসংবাদী নেতা৷ আর ভোটের একটা বড় অংশ এই লিঙ্গায়ত সম্প্রদায়৷ বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধারামাইয়াসহ কংগ্রেসের অন্য নেতারা মনে করেন, প্রতিষ্ঠানবিরোধী ভোটই নাকি কংগ্রেসের মুখ থুবড়ে পড়ার বড় কারণ৷ তাঁদের মতে, ইতিহাস বলছে কর্নাটকের ভোটাররা পাঁচ বছর অন্তর ‘কুর্সি’ বদল চেয়ে এসেছে৷

বিজেপির বিকল্প হিসেবে কংগ্রেসকে কেউ ভাবতে পারছে না: প্রবীর কুমার দে

কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক প্রবীর কুমার দে কর্নাটকের নির্বাচনে বিজেপির সাফল্য সম্পর্কে ডয়চে ভেলেকে বললেন, ‘‘কর্নাটকে কংগ্রেস সরকার ছিল৷ তবে রাজ্যবাসী হয়ত একটা পরিবর্তন চাইছিল৷ কেন্দ্রে বিজেপি সরকার থাকায় রাজ্যে উন্নয়নে গতি আসবে, ত্বরান্বিত হবে পরিকাঠামো বিকাশ৷ মোদী ডিজিটাল উন্নতির কথা বলেছেন৷ তাতে উৎসাহিত হয়েছে রাজ্য৷ আর দলিতদের ওপর অত্যাচার ইস্যুতে বিজেপির গায়ে যে কালিমা লেগেছে, মোদী সেটাকে মিনিমাইজ করতে পেরেছেন বলে আমার ধারণা৷ আর ধর্মীয় উন্মাদনার কথা বললে মোদী সেটাকেও সুচতুরভাবে কমিয়ে আনতে পেরেছেন৷ বিশেষ করে ভোটের আগে একটা ধর্মনিরপেক্ষ বুনট তুলে ধরতে পেরেছেন৷’’

‘‘কংগ্রেসের মতো একটা সর্বভারতীয় দলকে ধরে রাখার মতো সাংগঠনিক দক্ষতা এখনও কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর হয়নি বলেই মনে হয়৷ দ্বিতীয়ত, কংগ্রেসের দুর্নীতির ছবিটা এখনও মানুষ ভুলতে পারেনি৷ কাজেই বিজেপির বিকল্প হিসেবে কংগ্রেসকে কেউ ভাবতে পারছে না,’’ ডয়চে ভেলেকে বললেন অধ্যাপক প্রবীর কুমার দে৷

 কংগ্রেসের ধর্মনিরপেক্ষতার ভাবমূর্তি আছে, কিন্তু দুর্নীতির নীচে সেটা চাপা পড়ে গেছে৷ পাশাপাশি, মোদীর আমলে উন্নয়ন তো হয়েছে৷ হতে পারে সেটা বাহ্যিক৷ গরিবদের কতটা উন্নতি হয়েছে সেটা ভিন্ন প্রশ্ন৷ তবে আগামী সাধারণ নির্বাচনে কর্নাটকের জয় বিজেপিকে একটা ভালো ডিভিডেন্ট দেবে বলে ধরে নেওয়া যায়৷ অন্যদিকে, আঞ্চলিক দলগুলিকে নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের উদ্যোগ বাস্তবায়িত না হওয়াও কংগ্রেসের পরাজয়ের একটা কারণ বলে মনে করেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক প্রবীর কুমার দে৷

উল্লেখ্য, এ বছরের শেষাশেষি রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগড় বিধানসভার ভোট৷ কর্নাটকে বিজেপির জয় দলকে নতুন অক্সিজেন জোগাবে সন্দেহ নেই৷ সন্দেহ নেই আগামী বছর দেশের সাধারণ নির্বাচনেও এর অভিঘাত পড়বে৷