1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কষ্ট নিয়েই বিদায় সুপ্রিয়ার

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা২৬ জানুয়ারি ২০১৮

৮৫ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন বাংলা চলচ্চিত্রের প্রতিভাময়ী অভিনেত্রী সুপ্রিয়া চৌধুরি৷ দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন৷ শেষদিকে খুব একলাও হয়ে গিয়েছিলেন৷

https://p.dw.com/p/2rYky
Supriya Devi - indische Schauspielerin am 26.01.2018 verstorben
ছবি: Sudipta Bhoumick

‘‌‘‌আমি বোধহয় ভালো নেই রে!‌ আমি বোধহয় ভালো নেই!‌'‌'‌ জীবনের শেষ সাক্ষাৎকারে এই গোপন রাখা কষ্টটাই মুখ ফুটে জানিয়ে গিয়েছিলেন সুপ্রিয়া চৌধুরি৷ একটি বাংলা দৈনিকের জন্য তাঁর সাক্ষাৎকার নিতে গিয়েছিলেন বিখ্যাত সাহিত্যিক আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের কন্যা সর্বাণী মুখোপাধ্যায়৷ সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এটিই ছিল সুপ্রিয়ার শেষ সাক্ষাৎকার, যার শেষে তিনি প্রশ্ন করেছিলেন, আর কত!‌ আর কত!‌ জানতে চেয়েছিলেন, আর কত মার তাঁকে সহ্য করতে হবে!‌ মুখ ফুটে বলেছিলেন, ‘‘‌এত মার সারা জীবনে খেয়েছি, যে তোরা ভাবতে পারবি না!‌'‌'‌

মূল বাণিজ্যিক ধারার বাংলা সিনেমার অভিনেত্রী হিসেবে জনপ্রিয়তা পেলেও সুপ্রিয়া চৌধুরীর এক সমান্তরাল খ্যাতি ছিল, গর্ব ছিল, যে তিনি ঋত্বিক ঘটকের প্রিয় নায়িকা৷ বাঙালি দর্শকের মানসে এখনও অমর হয়ে আছে ‘‌মেঘে ঢাকা তারা'‌ ছবিতে সুপ্রিয়ার সেই সংলাপ — ‘‌‘‌দাদা, আমি কিন্তু বাঁচতে চেয়েছিলাম.‌.‌.‌.দাদা আমি যে সত্যি সত্যি বাঁচতে চেয়েছিলাম.‌.‌.৷'' দেশভাগ আর ছিন্নমূল বাঙালিদের নিয়ে যাবতীয় ছবি যতটা ঋত্বিকের, ততটাই যেন সুপ্রিয়া-কণ্ঠের ওই আর্ত চিৎকার‌৷ সেই বিষণ্ণতাই যেন ফিরে এসেছে সুপ্রিয়ার শেষ সাক্ষাৎকারে, যেখানে সর্বাণী মুখোপাধ্যায়কে উনি বলেছেন, ‘‌‘‌আমার বোধহয় রোজ রাতে জ্বর আসে৷ আমি কাউকে বলি না৷''

সুপ্রিয়া যেমন ছিলেন ঋত্বিক ঘটকের নায়িকা, তেমনই বাঙালির ম্যাটিনি আইডল উত্তম কুমারেরও৷ ১৯৫২ সালে উত্তমের বিপরীতে ‘বসু পরিবার' ছবি দিয়েই বাংলা ছবির জগতে পা রাখেন সুপ্রিয়া৷ ১৯৫৯ সালে ‘সোনার হরিণ' ছবিতে দুদ্ধর্ষ অভিনয় অভিনেত্রী হিসেবে তাঁর জাত চিনিয়ে দেয়৷ সেই ছবিতেও সুপ্রিয়ার নায়ক উত্তমকুমার৷ পরের প্রায় দু'‌দশকে উত্তমকুমারের সঙ্গে জুটি বেঁধে ‘‌শুন বরনারী'‌, ‘‌উত্তরায়ণ'‌, ‘‌সূর্যশিখা'‌, ‘‌মন নিয়ে'‌-র মতো একাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন, দর্শকের প্রশংসা পেয়েছেন৷ একদিকে যেমন খ্যাতি ছিল উত্তমকুমার-সুচিত্রা সেন জুটির, প্রায় ততটাই জনপ্রিয় হয়েছিলেন উত্তম-সুপ্রিয়া৷ অন্য দিকে ছিল ঋত্বিকের ‘মেঘে ঢাকা তারা', ‘‌কোমল গান্ধার'‌ অভিনেত্রী সুপ্রিয়াকে পৌঁছে দিয়েছিল অন্য উচ্চতায়৷

তাই তো জীবদ্দশাতেই তিনি পেয়েছেন পদ্মশ্রী, বঙ্গবিভূষণসহ অসংখ্য সম্মাননা৷ সুপ্রিয়া দেবীর মৃত্যুতে ভারতের চলচ্চিত্র জগত তো বটেই, গভীর শোক প্রকাশ করেছেন কলকাতার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও৷

পরবর্তীকালে সুপ্রিয়া চৌধুরি যখন টিভি সিরিয়ালে কাজ করেছেন, একই জনপ্রিয়তা পেয়েছেন৷ তাঁর অভিনীত ‘‌জননী'‌ বাংলা টেলিভিশনের মেগা-সিরিয়ালের স্থায়িত্বের বিচারে নজির তৈরি করেছিল৷ এছাড়া টিভিতে নিজের রান্নার শো পর্যন্ত করেছেন৷ নিজের ডাকনাম ব্যবহার করে ‘‌বেণুদির রান্নাঘর'‌ নামে সেই শো ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়৷ যতদিন শারীরিকভাবে সক্ষম ছিলেন, কর্মঠ ছিলেন, ততদিনই কাজ করে গেছেন সুপ্রিয়া চৌধুরি৷ ঋত্বিকের ‘মেঘে ঢাকা তারা' ছবির সেই নীতা চরিত্রটির মতোই, সংসারের দায়িত্ব থেকে যার অব্যাহতি নেই, অবসর নেই৷ এবং শেষ জীবনে সুপ্রিয়ার একাকিত্বও তাই বিষণ্ণ করে৷ 

Sarbani Mukherjee - MP3-Stereo

১৯৩৩ সালের ৮ জানুয়ারি তৎকালীন বর্মায় জন্মগ্রহণ করেন সুপ্রিয়া দেবী৷ বাবা পেশায় ছিলেন আইনজীবী৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বর্মা থেকে কলকাতা চলে আসে তাঁদের পরিবার৷ মাত্র সাত বছর বয়সে একটি নাটকে তাঁর অভিনয়ে হাতেখড়ি৷ এছাড়া নাচতে ভালবাসতেন ছোট থেকেই৷ ১৯৫৪ সালে সুপ্রিয়ার বিয়ে হয় বিশ্বনাথ চৌধুরীর সঙ্গে৷ তাঁদের একটি কন্যা সন্তানও হয়৷ কিন্তু সেই দাম্পত্য দীর্ঘস্থায়ী হয়নি৷ পরবর্তীতে বিবাহিত উত্তমকুমারের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন এবং দম্পতির মতোই একসঙ্গে থাকতে শুরু করেন৷ কিন্তু আইনত সেই বিয়ে যেহেতু গ্রাহ্য ছিল না, সেহেতু কোনো স্বীকৃতি পাননি সুপ্রিয়া দেবী৷ উত্তম কুমার মারা যাওয়ার পর কার্যত একাই হয়ে যান৷ গত ৩৮ বছর একাই ছিলেন৷

সুপ্রিয়া দেবী অভিনিত আপনার প্রিয় ছবি কোনটি? জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷