1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কাপড়ে প্রাকৃতিক রং করবে ব্যাকটেরিয়া!

২৩ এপ্রিল ২০১৯

পরিবেশ দূষণের জন্য আমাদের জামাকাপড়ও দায়ী৷ কাপড় রং করতে ব্যবহৃত রঞ্জক পদার্থ প্রতিদিন পরিবেশের ক্ষতি করছে৷ এক ফরাসি কোম্পানি অভিনব উপায়ে প্রাকৃতিক রং ব্যবহারের পথে এগোচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/3HDW9
Symbolbild Kleidungskauf
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/McPhoto

দেখতে আধুনিক শিল্পকলার নিদর্শন মনে হলেও আসলে একটি চলমান প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া এমন ভ্রমের কারণ৷ অবিশ্বাস্য মনে হলেও ব্যাকটেরিয়া নীল রংয়ের রেখাগুলি সৃষ্টি করেছে৷ জেরেমি ব্লাশ ও গিয়োম বোয়াসোনা নিজেদের এই অসাধারণ প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার প্রথম পর্যবেক্ষক হিসেবে দাবি করেন৷ তাঁরা  ফ্রান্সের টুলুস শহরে ‘পিলি' নামের স্টার্টআপ কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা৷ অতি ক্ষুদ্র জীবাণু ব্যবহার করে কোনো রাসায়নিক ছাড়াই সব জামাকাপড় রং করা যাবে বলে তাঁদের বিশ্বাস৷

অনেক বছর ধরে তাঁরা নানারকম পরীক্ষা চালিয়ে রং উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত মাইক্রো-অরগ্যানিজমের খোঁজ করেছেন৷ প্রতিষ্ঠানের সাইন্টিফিক ডায়রেক্টর হিসেবে গিয়োম বোয়াসোনা বলেন, ‘‘এই মাইক্রো-অরগ্যানিজমের মধ্যে দুই রকমের এনজাইম রয়েছে৷ প্রথম ধরনের এনজাইম শর্করার অণু ভাঙতে পারে৷ অন্য এনজাইম অণুর সেই টুকরোগুলি নতুন করে সাজিয়ে রঙিন রঞ্জক অণু সৃষ্টি করতে পারে৷''

২০১৫ সালে তাঁরা অবশেষে এক লো-কার্বন প্রক্রিয়া সৃষ্টি করতে পেরেছিলেন, যার সাহায্যে রঞ্জক নিষ্কাশন করে কাপড় রং করার কাজে লাগানো যায়৷ বহু শতাব্দী ধরে খাদ্যশিল্পে সেই প্রক্রিয়া কাজে লাগানো হচ্ছে৷ গিয়োম বলেন, ‘‘আমরা এই মাইক্রো-অরগ্যানিজমগুলিকে ফার্মেন্ট করতে, অর্থাৎ গাঁজাতে দেই৷ অনেকটা বিয়ার তৈরির প্রক্রিয়ার মতো৷ কিন্তু এ ক্ষেত্রে চিনি কাজে লাগিয়ে অ্যালকোহল তৈরির বদলে মাইক্রো-অরগ্যানিজম চিনি হজম করে রঞ্জক সৃষ্টি করে৷''

এক সপ্তাহ ধরে উষ্ণ তাপমাত্রায় থাকার পর নীল রঞ্জক সৃষ্টি হয়৷ সেই পদার্থ শুকিয়ে বায়োডিগ্রেডেবল গুঁড়া তৈরি করা হয়৷ গিয়োম বোয়াসোনা বলেন, ‘‘এই গুঁড়া নানা ধরনের কাপড় রং করার জন্য উপযুক্ত৷ ফর্মুলার প্রয়োগে হেরফের করে আমরা বার্গান্ডি লাল থেকে শুরু করে হালকা নীল রং সৃষ্টি করতে পারি৷''

এই বায়ো প্রযুক্তি ফ্যাশন শিল্পের খোলনলচে বদলে দিতে পারে৷ বস্ত্রশিল্প বিশ্বের সবচেয়ে দূষণকারী ক্ষেত্রগুলির অন্যতম৷ প্রচুর পরিমাণ রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে রঞ্জক পদার্থ সৃষ্টি করা হয়৷ পিলি কোম্পানির প্রধান জেরেমি ব্লাশ বলেন, ‘‘১ কিলোগ্রাম রঞ্জক তৈরি করতে ১০০ কিলোগ্রাম পেট্রোলিয়াম লাগে৷ তাই আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত জামাকাপড়ের মধ্যে শুধু রঞ্জক হিসেবে ১ কিলো পেট্রোলিয়াম রয়েছে৷ এমনকি পরিবেশের উপর একটি টিশার্ট বা প্যান্টের প্রায় ১০ থেকে ৪০ শতাংশ প্রভাব থাকতে পারে৷''

পিলি কোম্পানি ভারত ও চীনের মতো সবচেয়ে বড় বস্ত্র প্রস্তুতকারক দেশের প্রতি নজর দিচ্ছে৷ তারা গোটা উৎপাদন প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন এনে সেটিকে আরও টেকসই করে তোলার স্বপ্ন দেখছে৷

এখনো পর্যন্ত এই স্টার্ট আপ কোম্পানি ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে কয়েক কিলোগ্রাম পরিমাণ রঞ্জক গুঁড়া উৎপাদন করেছে৷ তবে পেট্রোকেমিকাল-ভিত্তিক রঞ্জক পদার্থের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামতে হলে তাদের এই প্রক্রিয়ায় আরও উন্নতি করতে হবে৷ ব্যয় কমাতে চিনির বদলে কৃষিক্ষেত্রের বর্জ্য ব্যবহারের পরিকল্পনা করা হচ্ছে৷ জেরেমি ব্লাশ এর ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘এর বড় সুবিধা হলো, আমরা ফসলের মধ্যে কাণ্ড, পাতা বা অন্য অবশিষ্ট অংশ ব্যবহার করে কার্বনের উৎস হিসেবে ব্যবহার করতে পারি৷ অর্থাৎ এক ঢিলে দুই পাখি মারতে পারি৷''

২০২১ সালের মধ্যে জেরেমি ব্লাশ ও তাঁর টিম বছরে কয়েক টন পরিমাণ রঞ্জক গুঁড়া উৎপাদন করতে চান৷ তখন পিলি পিগমেন্ট দিয়ে রং করা জামাকাপড় আমাদের নজরে পড়তে পারে৷ তবে পেট্রোকেমিকাল শিল্পের প্রকৃত বিকল্প হয়ে উঠতে হলে আরও সময়, আরও অর্থ এবং আরও উৎপাদন ক্ষমতার প্রয়োজন হবে৷

এলিয়ট/মেটকে/এসবি