1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ফিরে আসছে বাজপাখিরা

৪ অক্টোবর ২০১৭

রাইন নদের কূলে যে এলাকাটি এককালে শিল্পকারখানা আর পরিবেশ দূষণের জন্য খ্যাত ছিল, আজ সেখানেই ফিরে আসছে পেরেগ্রিন ফ্যালকন বা শিকারি বাজ, চল্লিশ বছর আগে যারা উধাও হয়েছিল এই এলাকা থেকে৷

https://p.dw.com/p/2lAXe
ছবি: Hannes Lenhart

রাইন ইউরোপের সবচেয়ে বড় নদীগুলির মধ্যে পড়ে৷ কয়েক দশক আগে এই জলধারাই কারখানার ময়লা পানিতে ভরে একটা বিষাক্ত নালায় পরিণত হতে চলেছিল – আজ তা ভাবা যায় না৷

পরিবেশ সুরক্ষার ফলে প্রকৃতিও আবার ফিরে এসেছে৷ সেক্ষেত্রে কারখানার চিমনি যে একটি ভূমিকা পালন করবে, পক্ষিবিশারদরাও তা ভাবতে পারেননি! এ অঞ্চলে বিরল হয়ে আসা পেরেগ্রিন নামের শিকারি বাজটি কীভাবে বাসা বাঁধার জন্য কারখানার চিমনির উপযোগিতা আবিষ্কার করেছে, ক্যামেরা বসানো মাইক্রোকপ্টার দিয়ে তা ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে৷

কারখানার বিষ আর বাসা ভাঙা ও ডিমচুরির ফলে এ অঞ্চল থেকে শিকারি বাজরা উধাও হয় প্রায় চল্লিশ বছর আগে৷ এবার তারা আবার ফিরে এসেছে৷ দৃশ্যত কলকারখানার উঁচু উঁচু চিমনিগুলোকে তাদের পছন্দ৷ কঠিন কংক্রিট দৃশ্যত এই পাখিদের কাছে পাহাড়ের পাথর বসানো ঢালের চেয়ে বেশি লোভনীয়৷ চিমনিগুলোর মাথায় বেড়া বসানো; এখানে নিশ্চিন্তে ছানা মানুষ করা যায়, চোরডাকাতের ভয় থাকে না৷

প্রকৃতি সংরক্ষণকারী আর কারখানার পাহারাদাররা অবাক হয়ে দেখেন, পড়ে থাকা কারখানাটি কীভাবে সারা বিশ্বের সেরা শিকারি বাজ এলাকাগুলির মধ্যে একটিতে পরিণত হয়েছে – যার আর একটি কারণ: এখানে প্রচুর শিকার পাওয়া যায়৷ কারখানার প্রহরী আক্সেল  মার্কেন্স যোগ করলেন, ‘‘পায়রা তাড়ানোর জন্য আমাদের বেশ টাকা ঢালতে হয়৷ কাজেই এই প্রাকৃতিক সাহায্যকারীদের পেয়ে কোম্পানির লাভ বৈ লোকসান নেই৷’’

পরিবেশের রাসায়নিক দূষণ যতো কমতে থাকে, ততোই পায়রা ও ইঁদুরদের মতো বাজপাখিদের শিকারের সংখ্যা বাড়তে থাকে৷ ইস্পাত আর কয়লা খনি অধ্যুষিত রাইন অঞ্চলে শিকারি বাজদের ফিরে আসার একটা মূল কারণ হল পায়রা আর মূষিকদের বংশবৃদ্ধি৷

খোলা কয়লাখনিতে সুবিশাল পাথর কাটার যন্ত্র দিয়ে কয়লা কাটা হয় – এখানেও শিকারি বাজরা আবার থাকতে শুরু করেছে৷ কর্মীরা অবাক হয়ে দেখেন, অতিকায় এক্সক্যাভেটরের কাঠামোতেও বাসা বেঁধেছে শিকারি বাজ, যেন যন্ত্রের বা পাথর কাটার আওয়াজে তাদের কিছুই আসে যায় না৷ একটি মাদি শিকারি বাজ ডাকতে ডাকতে কাঠামোটার চারপাশে উড়ছে৷ ভেতরে কোথাও পাখির ছানারা বোধহয় তাদের মায়ের জন্য অপেক্ষা করছে৷

শিগগিরই তারা নিজেরাই শিকার ধরতে পারবে : এবার মা তাদের সঙ্গে আকাশেই একটি পাখির কাছ থেকে আরেকটি পাখিকে শিকার দেওয়ার কাজটা অভ্যাস করছে, যতক্ষণ পর্যন্ত না মা'কে ছাড়াই তারা সেটা একা করতে পারে৷ দেখে পক্ষী সংরক্ষণকারী গ্যার্ড লোমার মন্তব্য করলেন, ‘‘প্রকৃতি আবার ফিরে আসছে – কোথাও কোথাও আগের চাইতে বেশি বৈচিত্র্য নিয়ে৷ শিকারি বাজরা তার একটা প্রতীক৷’’   

অতিকায় কয়লা-কাটার যন্ত্রগুলিতে আজ তিন-তিনটি শিকারি বাজ পরিবারের বাস – পরিবর্তনের এর চাইতে ভালো চিহ্ন আর কী হতে পারে!

রাইন নদ বেয়ে আরো কিছুটা নামলে একটি কয়লা-চালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে শিকারি বাজদের আরেক প্রজন্ম বড় হচ্ছে৷ ১৫০ মিটার উঁচু চিমনির একেবারে ওপরের একটি ফাঁকে মানুষ – থুড়ি, পাখি হচ্ছে তারা৷