1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কার্বনের বোঝা কমাতে পারে শৈবাল

৮ নভেম্বর ২০২১

শুধু যানবাহন থেকে কার্বন নির্গমন কমিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা করা যে আর সম্ভব নয়, তা স্পষ্ট হয়ে গেছে৷ বায়ুমণ্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা কমাতে অ্যালজিও যথেষ্ট অবদান রাখতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন৷

https://p.dw.com/p/42i4v
Symbolbild Klima
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Probst

একেবারে আদি লগ্নে পৃথিবী ছিল বিষাক্ত গ্যাসে ভরা উত্তপ্ত এক খণ্ড৷ প্রাণের কোনো লক্ষণ ছিল না৷ ব্লু অ্যালজি বা সিয়ানোব্যাকটিরিয়া সেই পরিস্থিতি বদলে দিয়েছিল৷ মাইক্রোবায়োলজিস্ট হিসেবে মোরিৎস কখ বিশেষ গোত্রের এই অ্যালজি নিয়ে গবেষণা করছেন৷ তাঁর মতে, ‘‘আমরা যে আজ এমন জগতে বাস করছি, যেখানকার বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন রয়েছে – সেই রূপান্তরের পেছনে তথাকথিত ‘গ্রেট অক্সিজেনেশন ইভেন্ট'-এর অবদান রয়েছে৷ কয়েক কোটি বছর আগে সিয়ানোব্যাকটিরিয়া অক্সিজেন সৃষ্টির কাজ শুরু করেছিল বলেই আজকের প্রাণবন্ত পৃথিবী গড়ে উঠেছে৷''

সিয়ানোব্যাকটিরিয়া আসলে ক্ষুদ্র মাইক্রো অ্যালজি৷ অন্যদিকে ম্যাক্রো অ্যালজি সমুদ্রে ভেসে সৈকতে এসে পড়ে৷ অনেকে সেটিকে শুধু অ্যালজি বা শৈবাল বলেন৷ সামুদ্রিক ইকোলজিস্ট হিসেবে মার ফার্নান্ডেস-মেন্ডেস বলেন, ‘‘অ্যালজি আসলে সামুদ্রিক উদ্ভিদের মতো৷ মাটির উপরের গাছপালার মতো সেগুলিও সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া চালায়৷ কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে সূর্যের আলোর সাহায্যে সেটি রূপান্তরিত করে৷''

অ্যালজি কীভাবে কার্বন আবদ্ধ করে এবং গোটা সামুদ্রিক খাদ্য শৃঙ্খলাকে প্রভাবিত করে, সামুদ্রিক ইকোলজিস্ট হিসেবে মার ফার্নান্ডেস-মেন্ডেস সে বিষয়ে গবেষণা করছেন৷ বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘‘কোনো অ্যালজি যখন সমুদ্রে কার্বন গ্রহণ করে, সেই অভাব পূরণ করতে মহাসাগর সঙ্গে সঙ্গে বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন শুষে নেয়৷ অর্থাৎ কোনো কিছু সরিয়ে ফেরলে ভারসাম্য রক্ষার স্বার্থে বায়ুমণ্ডল তা পূরণ করে৷''

সামুদ্রিক অ্যালজি প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী কার্বন নির্গমনের এক চতুর্থাংশ থেকে এক তৃতীয়াংশ শুষে নেয়৷ এমনকি সমুদ্রে না থাকলেও সব অ্যালজি সেই কাজ করে৷ যে কাজেই সেই অ্যালজি ব্যবহার করা হোক না কেন, সেটি চাষ করলে কার্বন ধরা পড়ে৷ কয়েক হাজার বছর ধরে মানুষ অ্যালজি কাজে লাগিয়ে আসছে৷ অ্যামেরিকা ও পূর্ব এশিয়ার আদিবাসীরা সবার আগে অ্যালজি চাষ করেছিল৷ এমনকি সবচেয়ে পুরানো জাপানি কবিতায়ও অ্যালজির উল্লেখ রয়েছে৷

আয়ারল্যান্ডের ‘ক্নর্পেলটাং' জাতের অ্যালজি গোটা বিশ্বে ‘ক্যারাজিন' নামের খাদ্যের অ্যাডিটিভ বা সংযোজক হিসেবে কাজে লাগানো হচ্ছে৷ সে দেশে ১৮৪০ সালের বিশাল দুর্ভিক্ষের সময়েও অ্যালজি বিকল্প খাদ্য হিসেবে কাজে লেগেছিল৷

বর্তমানে এশিয়া মহাদেশেই সবচেয়ে বেশি অ্যালজি চাষ হয়৷ রান্নার মধ্যেও এই উপকরণের ব্যবহার হয়৷ টুথপেস্ট, কসমেটিক্স ও ওষুধের মধ্যেও এর প্রয়োগ দেখা যায়৷ এই সব পণ্যের জন্য অ্যালজি চাষের সময় কার্বন ধারণ করা হয় বটে, কিন্তু এখনো পর্যন্ত গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানো এমন কৃষিকাজের প্রধান লক্ষ্য ছিল না৷

এবার সেই পরিস্থিতি বদলাতে পারে৷ কারণ পশুর খাদ্য, সার এবং অরগ্যানিক প্লাস্টিক হিসেবে অ্যালজির ব্যবহার বিভিন্ন শিল্পশাখার ক্ষতিকর কার্বন নির্গমন কমিয়ে দেয়৷ অর্থাৎ কার্বন নির্গমন দুই গুণ কমে যায়৷

যেমন প্লাস্টিকের কথাই ধরা যাক৷ কিছু জাতের অ্যালজি পিএইচবি নামের এক অরগ্যানিক প্লাস্টিক সৃষ্টি করে৷ প্রচলিত প্লাস্টিকের দ্বিতীয় প্রধান উপাদান পলিপ্রোপিলিনের বিকল্প হয়ে উঠতে পারে এই পদার্থ৷ এক যুগান্তকারী গবেষণার মাধ্যমে মোরিৎস ও অন্যান্য গবেষকরা নীল-সবুজ মাইক্রো অ্যালজি বা সিয়ানোব্যাকটেরিয়ায় রূপান্তর ঘটিয়ে এর উৎপাদন বাড়াতে সক্ষম হচ্ছেন৷ মাইক্রোবায়োলজিস্ট হিসেবে মোরিৎস কখ বলেন, ‘‘কিছু মেটাবলিক ইঞ্জিনিয়ারিং প্রক্রিয়া কাজে লাগিয়ে আমরা উৎপাদনের পরিমাণ দশ শতাংশ থেকে ৮০ শতাংশ বাড়াতে পেরেছি৷ বলতে গেলে আমরা অরগ্যানিক প্লাস্টিকের এমন ব্যাকটিরিয়া সৃষ্টি করেছি, যা মূলত অরগ্যানিক প্লাস্টিক দিয়েই গঠিত৷''

পিএইচবি আবর্জনা হিসেবে সহজেই পচে যায় এবং অন্যান্য অরগ্যানিক প্লাস্টিকের মতো পরিবেশে কোনো ক্ষতিকর পদার্থ নিঃসরণ করে না৷ সেই অ্যালজি উৎপাদনের অবকাঠামোও প্রস্তুত রয়েছে৷ কখ বলেন, ‘‘আসলে বর্তমান প্রযুক্তি কাজে লাগিয়েই নানা ধরনের সিয়ানোব্যাকটেরিয়া উৎপাদন করা সম্ভব৷ শুধু স্পিরুলিনার মতো খাওয়ার উপযোগী উপকরণই নয়, অরগ্যানিক প্লাস্টিক উৎপাদনও এভাবে করা যায়৷''

পানিভিত্তিক চাষের পদ্ধতি কাজে লাগিয়েও ম্যাক্রো অ্যালজি চাষ করা যেতে পারে৷ অ্যাসপারাগোপসিস টাক্সিফর্মিস নামের বিশেষ একটি জাতের অ্যালজির বিস্ময়কর বৈশিষ্ট্য রয়েছে৷ পশুর খাদ্যে সেটি যোগ করলে গবাদি পশুর কারণে মিথেন নির্গমন ৮২ শতাংশ পর্যন্ত কমানো সম্ভব৷

হজমের সময় গবাদি পশুর পেটের মধ্যে মিথেন সৃষ্টি হয়৷ তারপর পশুর শরীর থেকে সেই গ্যাস বেরিয়ে যায়৷ লাল রংয়ের এই অ্যালজির নির্দিষ্ট গুণ সম্ভবত শুরু থেকেই সেই গ্যাস সৃষ্টি হতে দেয় না৷

আমান্ডা কুলসন-ড্রাসনার/এসবি