1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কুর্দি ইস্যুতে তুর্কি চাপে নত জার্মানি?

বেন নাইট/এডিকে২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭

জার্মানির কোলনে এক উৎসবে কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি – পিকেকের ব্যানার দেখানো হয়৷ এ ব্যাপারে অতিরিক্ত সহনশীল আচরণ করায় পুলিশের সমালোচনা করেছে খোদ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷ তুরস্কের চাপই এর কারণ, মনে করছেন কুর্দি নেতারা৷

https://p.dw.com/p/2kTDU
Deutschland Köln | 25. Internationales Kurdisches Kulturfestival in der in der Deutzer Werft
ছবি: Imago/Future image/C. Hardt

জার্মানির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে পিকেকের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন নিষিদ্ধ প্রতীকের তালিকা আরো সম্প্রসারণ করা হবে৷ তবে এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করছে জার্মান কুর্দি সম্প্রদায়৷ তাঁরা মনে করছেন, তুরস্কের ভয়ে সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে৷

কোলন পুলিশ অবশ্য সমাবেশ থেকে একজনকে আটক করেছে, জব্দ করেছে একটি ব্যানার৷ হলুদ রংয়ের ব্যানারটিতে ১৯৯৯ সাল থেকে তুরস্কে কারাবন্দি পিকেকে নেতা আবদুল্লাহ ওকালানের ছবি ছিল৷

উৎসবে অংশ নিয়েছেন অন্তত ১৩ হাজার কুর্দি৷ সেখানে আরো শত শত ব্যানার ও ফেস্টুনে ওকালানের ছবি থাকলেও সেগুলোতে হলুদ রং না থাকায় কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ৷ জার্মান সরকার মার্চ মাসে নিষিদ্ধ প্রতীকের তালিকা প্রকাশ করে, তাতে ওকালানের ছবি প্রদর্শন করা যাবে না, এমন কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না৷ 

১৯৯৩ সাল থেকে পিকেকে জার্মানির সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকায় আছে৷ কিন্তু তখন থেকে তুর্কি বনাম কুর্দি সংকটের রাজনৈতিক সমাধানের কথাই বলে আসছেন ওকালান৷ স্বাধীন কুর্দিস্তানের দাবি নয়, বরং এখন তুরস্ক, ইরাক ও সিরিয়ার কুর্দি অধ্যুষিত এলাকায় স্বায়ত্বশাসনের দাবি পিকেকের৷

নিষিদ্ধ ছবি

কোলন পুলিশের কর্মকাণ্ডের দায় নিচ্ছে না স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷ ‘‘আমাদের কাছে এটা পরিস্কার যে বাস্তবে যা ঘটেছে, তার সাথে নিষিদ্ধ প্রতীকের সম্পর্ক নেই৷ সাধারণভাবে ওকালানের সব ছবিই নিষিদ্ধ করা হয়েছিল,'' বলছেন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইয়োহানেস ডিমরোথ৷

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় শুধু হলুদ রংয়ের ব্যানারে নয়, ‘অনুরূপ' সব ছবি নিষিদ্ধ করা হলেও কোলন পুলিশ তাদের সিদ্ধান্তকেই সমর্থন করছে৷ কোলন পুলিশের এক মুখপাত্র সংবাদ মাধ্যম ডব্লিউডিআরকে জানিয়েছেন, ‘‘আমরা আগেই কোলন স্টেট প্রসিকিউশনের সাথে আমাদের প্রক্রিয়া এবং আইনী ব্যবস্থা নিয়ে কথা বলেছিলাম৷''

তুরস্কের পদানুসরণ

কুর্দি কমিউনিটি সেন্টার সিবিকা আজাদের মুখপাত্র মাকো কোকগিরি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এমন সিদ্ধান্ত ‘হাস্যকর' বলে মন্তব্য করেছেন৷

এখন কেন এমন সিদ্ধান্তের কথা জানাচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তা নিয়ে বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন ডব্লিউডিআরের মতো বেশ কিছু জার্মান সংবাদ মাধ্যম৷ জার্মানিতে বরাবরই কুর্দি সমাবেশে ওকালানের ছবি প্রদর্শন হয়ে আসছে৷

১৬ সেপ্টেম্বরের উৎসব নিয়ে আপত্তি জানাতে তুরস্কে নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠায় দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷ এর একদিন পরেই জার্মান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘নিষিদ্ধ' প্রতীকের তালিকা ‘সম্প্রসারণের' ঘোষণা কাকতালীয় বলে মনে করছেন না কোকগিরি৷ 

 ‘জঙ্গি প্রচারণা' চালাতে পিকেকে সদস্যদের অনুমতি দিয়েছে, জার্মান সরকারের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ এনে বিবৃতিও দিয়েছে আঙ্কারা৷

‘‘তুর্কি সংবাদমাধ্যম উৎসবের আগে থেকেই – জঙ্গি সমর্থকদের সমাবেশে জার্মানির অনুমতি - এমন শিরোনাম করছিল৷'' এই নিষিদ্ধ তালিকা সম্প্রসারণের ঘোষণা এরই ‘প্রতিক্রিয়া' এবং তুর্কি সরকারের সাথে ‘আপসের' ইঙ্গিত বলে মনে করছেন কোকগিরি৷

জার্মানির কুর্দিরা মনে করেন, সবসময়ই তাঁদের ব্যাপারে তুরস্কের চাপের কাছে নতি স্বীকার করে সরকার৷ অথচ অন্যান্য বিষয়, যেমন তুরস্কে আটক জার্মান সাংবাদিকদের ব্যাপারে নেয়া হয় কঠোর অবস্থান৷ ‘‘এটা আমাদের জন্য খুব অস্বস্তিকর৷ কারণ আমাদের মনে হয়, তুরস্কের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখার জন্য আমাদের বলি দিচ্ছে জার্মান সরকার৷''

জার্মানি অবশ্য কিছু কুর্দি গোষ্ঠীকে সমর্থন দেয়৷ ইরাকে ইসলামিক স্টেট জঙ্গিদের সাথে যুদ্ধে কুর্দি পেশমেরগা বাহিনীকে অস্ত্র দিয়েছে জার্মানি৷ তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো সিরিয়ায় যুদ্ধরত ওয়াইপিজি বা পিপলস প্রটেশকশন ইউনিটকে সামরিক সহায়তা দেয়নি জার্মানি৷

২৫ বছর ধরে চলে আসছে আন্তর্জাতিক কুর্দি সাংস্কৃতিক উৎসব৷ এই উৎসবে ঐতিহ্যবাহী কুর্দি নাচ ও গানের আয়োজনও থাকে৷ কোকগিরি বলছেন, ‘‘কুর্দিরা যখন এক জায়গায় হয়, তখন সেটার সবসময়ই একটা রাজনৈতিক চরিত্র থাকে৷ ওকালানের মুক্তি ও কুর্দি স্বায়ত্বশাসনের দাবিও থাকে সেখানে৷''