1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কৃত্রিম পরিবেশেও হাতিদের স্বাচ্ছন্দ্য

১ নভেম্বর ২০১৭

চিড়িয়াখানায় দর্শকদের মনোরঞ্জন ঘটলেও প্রাণীদের জন্য এমন কৃত্রিম পরিবেশ কতটা উপযুক্ত? সুইজারল্যান্ডের জুরিখ শহরের চিড়িয়াখানায় হাতিদের জন্য এমন এক পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে, যা তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপনে সহায়ক৷

https://p.dw.com/p/2mpsG
ছবি: Getty Images/Barcroft Media/M. Sheridan-Johnson

এলিফ্যান্ট বুল বা এই ষাঁড় হাতির নাম মাক্সি৷ খাবারের সন্ধানে তাকে রোজ বেরোতে হয়৷ এর মধ্যে সে ৪০০ কিলোগ্রাম ওজন কমিয়ে ফেলেছে৷ কারণ, বছর দুয়েক ধরে জুরিখ শহরের চিড়িয়াখানায় কিছু রদবদল চলছে৷ হাতিদের ডেরা এমনভাবে সাজানো হয়েছে যে, খাবারের নাগাল পেতে হাতিদের বেশ বেগ পেতে হচ্ছে৷ দিনে তাদের প্রায় ২০০ কিলোগ্রাম খোরাকের প্রয়োজন পড়ে৷ আর্টুর কেল হাতিদের দেখাশোনা করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আগে দিনে প্রধানত একবার খেতে দেওয়া হতো৷ আর এখন ২৪ ঘণ্টায় বেশ কয়েকবার খোরাক দেওয়া হয়৷ পাইপ, বলসহ নানা জায়গায় সেই খাদ্য রাখা থাকে৷ তাদের সেসব বের করে নিতে হয়৷ এমন পরিশ্রম তাদের জন্য ভালো৷ তাতে ওজনও কমে, পা'গুলি ঠিকমতো কাজে লাগে৷ এটা একটা বিশাল সুবিধা৷’’

তবে এই আয়োজনের জন্যও অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়৷ দেখতে লুকোচুরি খেলার মতো মনে হলেও এর পেছনে দক্ষ ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ রয়েছে৷ আর্টুর কেল ও তাঁর সহকর্মীরা প্রতিদিন হাতির ডেরায় ৪০টিরও বেশি আধারে খাদ্য ভরেন৷ হাতিদের জন্য এটা একটা চ্যালেঞ্জ বটে৷

রোব্যার্ট সিং-এর জন্য হাতিদের সুষ্ঠু প্রতিপালনের ক্ষেত্রে খোরাক একটি অংশ মাত্র৷ তিনি নতুন এই ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সাহায্য করেছেন এবং চিড়িয়াখানায় যে পশুদের উপযুক্ত প্রতিপালন সম্ভব, তিনি সে কথা বিশ্বাস করেন৷ রোব্যার্ট বলেন, ‘‘হাতিরা আসলে তাদের প্রজাতির দূত৷ মুক্ত প্রকৃতিতে যেসব প্রাণী থাকে, হাতিরা তাদেরই প্রতিনিধি৷ আমরা সেইসব প্রাণীর জন্য কাজ করছি৷ হাতিরা শুধু চিড়িয়াখানায় টিকে থাকবে, এমনটা হতে পারে না৷ তারা মুক্ত প্রকৃতির প্রাণীদের প্রতিনিধি হিসেবে তাদের বার্তা বহন করবে এবং তাদের সুরক্ষায় অবদান রাখবে৷’’

জুরিখ শহরের চিড়িয়াখানায় প্রায় ১১,০০০ বর্গমিটার বিশাল এলাকায় ৮টি হাতি রয়েছে৷ এভাবে তাদের মৌলিক সামাজিক আচরণ বজায় রাখার চেষ্টা চলছে৷ বিশেষ করে শাবকদের হাতির পালের সঙ্গে গভীর সম্পর্কের প্রয়োজন৷ তবে সব হাতি বাকিদের বরদাস্ত করতে পারে না৷ সে কারণে হাতিরা প্রায়ই দল বদলায় এবং প্রয়োজন অনুযায়ী নির্দিষ্ট অংশে বিচরণ করে৷

জুরিখ চিড়িয়াখানার হাতিদের ডেরা ইউরোপের সবচেয়ে আধুনিক ব্যবস্থা৷ কিন্তু সেখানে কি হাতিদের সত্যি সুষ্ঠু প্রতিপালন হচ্ছে? বিখ্যাত হাতি-গবেষক আঙ্গেলা স্ট্যোগার-হোরভাট-কে তার মূল্যায়ন করতে হবে৷ তিনি বলেন, ‘‘মুক্ত পরিবেশে হাতিরা অনেক সময় খাবার সংগ্রহ ও খাবারের জন্য সময় ব্যয় করে৷ চিড়িয়াখানায় সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারলে তো ভালোই৷ কারণ, এভাবে তাদের ব্যস্ত রাখা যায়৷’’

দলবদ্ধ এই প্রাণীদের জন্য চিড়িয়াখানায় কি সত্যি যথেষ্ট জায়গা রয়েছে? কারণ, মুক্ত পরিবেশে হাতিরা দিনে কয়েক কিলোমিটার অতিক্রম করে থাকে৷ ড. স্ট্যোগার-হোরভাট বলেন, ‘‘মজ্জাগতভাবে তারা অনেক দূর চলে যায় বটে, কিন্তু খাদ্য ও পানির খোঁজেই তাদের সেটা করতে হয়৷ তাছাড়া ঋতু অনুযায়ী তারা আলাদা জায়গায় খাদ্য ও পানি খুঁজে পায়৷ শুষ্ক বা বর্ষার সময় তাদের গন্তব্য বদলে যায়৷’’

জুরিখ চিড়িয়াখানায় কোনো কিছুর অভাব নেই৷ তেষ্টা পেলে হাতিদের বেশি সময় ধরে পানি খুঁজতে হয় না৷ চারিদিকে জলপ্রপাত ও পুকুর রয়েছে৷ দর্শকদের কাছে সে সবের আকর্ষণ কম নয়৷ হাতিদের জন্য পানির উৎস অত্যন্ত জরুরি৷ ত্বকের যত্ন নিতে সম্ভব হলে সপরিবারেও স্নান করে তারা৷ শুধু দর্শকদের মনোরঞ্জন নয়, তাদের সুস্থ সামাজিক আচরণের জন্যও এটা প্রয়োজন৷

মোনিকা কোভাকসিক্স/এসবি