1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কৃত্রিম হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপনে পারদর্শী ‘জার্মান হার্ট সেন্টার বার্লিন’

১৯ জুলাই ২০১১

১৯৮৬ সালে বার্লিনে জার্মান হার্ট সেন্টারটি প্রতিষ্ঠিত হবার পর অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেন, এই চিকিত্সা প্রতিষ্ঠানটি কী আদৌ টিকে থাকতে পারবে? ‘বার্লিনার সাইটুং’ পত্রিকার শিরোনামে একে এক ভুল সিদ্ধান্ত বলে অভিহিত করা হয়েছিল৷

https://p.dw.com/p/11zBM
জার্মান হার্ট সেন্টার বার্লিন৷ছবি: B.Nickolaus/Presse/DHZB

আজ কিন্তু এই ধারণা অমূলক বলে প্রমাণিত হয়েছে৷

বার্লিনে হার্ট সেন্টারটি খোলার এক বছরের মধ্যে ১০০ হার্ট প্রতিস্থাপন করা হয়৷ এই সেন্টারে এখন এক হাজারেরও বেশি কর্মী কাজ করেন৷ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে হৃদরোগের এক বিশেষ ক্লিনিক বলে পরিচিত এটি৷ আজ পর্যন্ত ৭০ হাজারের মত হার্ট অপারেশন করা হয়েছে এখানে৷ এর মধ্যে ২২০০টি হৃদযন্ত্র বা ফুসফুস প্রতিস্থাপনও করা হয়েছে৷ প্রতি বছর আট হাজার রোগীকে ভর্তি করা হয় এই ক্লিনিকে৷ ১৭ হাজার চিকিত্সা পান হাসপাতালের বহির্বিভাগে৷

কৃত্রিম হৃদযন্ত্রে অভ্যস্ত হয়ে যান রোগীরা

৬৫ বছর বয়স্ক ভল্ফগাং ফেস্টা কৃত্রিম হৃদযন্ত্র নিয়ে বেঁচে আছেন তিন বছর ধরে৷ বার্লিনের হার্ট সেন্টারে অপারেশন করার পর থেকে একটি ঝোলানো ব্যাগ নিয়ে চলাফেরা করতে হয় তাঁকে৷ ফেস্টা জানান, ‘‘এখান দিয়ে তারটি শরীরের ভেতরে ঢোকে৷ এতে একটি পাম্প লাগানো, যা রক্ত সঞ্চালনের ভার নিয়ে হার্টকে সহায়তা করে৷ দুটো ব্যাটারি সবসময় কাছে থাকে, চার ঘন্টা পর পর বদলাতে হয় তা, রাতেও৷ তবে তা অভ্যেস হয়ে যায়৷''

ফেস্টা ১৭০০ রোগীর মধ্যে একজন, যাদের শরীরে বার্লিনের হার্ট সেন্টারে কৃত্রিম হৃদযন্ত্র বা হৃদযন্ত্রের সহায়তাকারী পাম্প লাগানো হয়েছে৷ প্রতিষ্ঠানের পরিচালক রোলান্ড হেটত্সার এ প্রসঙ্গে বলেন, বিশ্বের আর কোথাও এত বেশি কৃত্রিম হার্ট সংযোজনের নজির নেই৷ এছাড়া প্রযুক্তি ও উত্পাদনের এত ব্যাপক প্রয়োগও আর কোথাও দেখা যায়না৷ হেটত্সারের ভাষায়, ‘‘১৯৮৭ সালে প্রথমবারের মত আমি কৃত্রিম হার্ট স্থাপন করে দেহের বাইরে হার্টের সহায়তাকারী একটি পাম্পও লাগিয়ে দেই৷ এটা ভালই কাজ করে৷ কয়েক মাস বেঁচে ছিলেন রোগী৷''

রোগীরা এখন বেশি দিন বেঁচে থাকছেন

বিশ্বে প্রথম যে রোগী কৃত্রিম হার্ট নিয়ে এক হাজার দিনেরও বেশি বেঁচে ছিলেন, তাঁরও অপারেশন করা হয়েছিল বার্লিনের হার্ট সেন্টারে৷ সাফল্যের তালিকায় এই মাত্রাটি যোগ হয় ২০০৫ সালে৷ ইতোমধ্যে বেশ কিছু রোগীর ক্ষেত্রে দেখা গেছে, যাদের কৃত্রিম হার্ট পাঁচ থেকে আট বছর পর্যন্তও চলছে৷ এই পদ্ধতি ক্রমেই প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে উন্নত মানের ও আয়তনে ক্ষুদ্র হচ্ছে৷ হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপনের একটি বিকল্প হিসাবে দেখা হচ্ছে কৃত্রিম হার্ট সংযোজন৷

হেটত্সার জানান, ‘‘শুরুতে আসল হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপন করার সময়টা পার করা পর্যন্ত কৃত্রিম হার্টের পাম্প লাগিয়ে রক্ত চলাচল সচল রাখা হত৷ কিন্তু এখন লক্ষ্য করা যাচ্ছে, কৃত্রিম হার্ট অনেক দিন পর্যন্ত কাজ করতে পারে৷ এছাড়া চাহিদা অনুযায়ী দান করা অঙ্গ প্রত্যঙ্গ পাওয়াও যায়না সহজে৷ ৯০ এর দশকের প্রথম দিকে বছরে ১৩০টি পর্যন্ত হার্ট প্রতিস্থাপন করা হত৷ গত বছর মাত্র ৪০ টি হার্ট প্রতিস্থাপন করা হয়৷ একই সময়ে ১৮০টি কৃত্রিম হার্টের পাম্প বসানো হয়েছে৷''

বাচ্চাদের শরীরেও লাগানো হয় কৃত্রিম হৃদযন্ত্র

১৯৯০ সালে রোলান্ড হেটত্সার ও তাঁর সহকর্মীরা প্রথমবারের মত এক শিশুর শরীরে কৃত্রিম হার্ট বসান৷ ‘বার্লিন হার্ট কোম্পানির' মডেল এটি৷ এই কোম্পানি গড়ে তোলার ব্যাপারে হার্ট সেন্টারটি সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে৷ হেটত্সার হেসে বলেন, ‘‘কোম্পানির নামটি আমি রেখেছি৷ আমরা একসঙ্গে সহযোগিতামূলক কাজ করি৷ বিশেষ করে শিশুদের হার্টের পাম্প গড়ে তোলায় পারদর্শী এই কোম্পানি৷ সারা বিশ্বে এই রকমটি আর নেই৷''

বিশ্বের অন্যান্য ক্লিনিকে বাচ্চাদের হার্টের পাম্প বসানোর প্রয়োজন হলে বার্লিনের হার্ট সেন্টার থেকে প্রকৌশলী ও শল্য চিকিত্সকদের ডাক পড়ে৷ বার্লিন হার্ট সেন্টারের শিশু বিভাগের প্রধান ডাঃ ফেলিক্স ব্যার্গার বলেন, ‘‘এজন্য ব্যাপক অভিজ্ঞতার প্রয়োজন৷ লক্ষ্য রাখতে হয়, যাতে অতিরিক্ত তরল পদার্থের ফলে রক্ত বেশি পাতলা না হয়ে যায়৷ এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বহু পদক্ষেপ রয়েছে৷''

হার্ট সেন্টারে কৃত্রিম হার্ট বিশেষজ্ঞদের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে৷ এ প্রসঙ্গে হেটত্সার জানান, ‘‘আমাদের একটি জার্মান ও আরেকটি ইংরেজি ভাষার কোর্স রয়েছে৷ প্রতি মাসেই আমরা এই কোর্সের আয়োজন করি৷ এই কোর্সে ১০ জন পর্যন্ত অংশ গ্রহণ করতে পারেন৷ কৃত্রিম হার্টের নানা দিক নিয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয় তাঁদের৷''

প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক