1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কৃষ্ণাঙ্গকে পুলিশের গুলি, ফের উত্তাল অ্যামেরিকা

২৫ আগস্ট ২০২০

জর্জ ফ্লয়েডের হত্যা এবং তা নিয়ে বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদ থেকেও কোনো শিক্ষা নেয়নি অ্যামেরিকার পুলিশ। এ বার এক কৃষ্ণাঙ্গকে লক্ষ্য করে সাতবার গুলি চালানো হলো।

https://p.dw.com/p/3hSKn
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Gash

মিনেপোলিসের পর এ বার উইসকনসিনের কেনোশা। সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছ কৃষ্ণাঙ্গ জেকব ব্লেক তাঁর পার্ক করা গাড়ির দিকে যাচ্ছেন। তাঁর পিছনে রিভলভার হাতে দুই পুলিশ অফিসার। জেকব গাড়ির দরজা খুলে ঢুকতে যেতেই একজন পুলিশ কর্মী তাঁর শার্ট ধরে টানলেন। তারপর গুলি চলতে শুরু করল। মোট সাতটি গুলির আওয়াজ ভিডিওতে শোনা গেছে। তবে একজন না কি দুইজন পুলিশ কর্মী তাঁকে গুলি করেছে তা বোঝা যায়নি।

ব্লেকের তিন বাচ্চা গাড়িতেই ছিলেন। তাঁরাই তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। ব্লেকের বাবা এনবিসি টেলিভিশনকে জানিয়েছেন, তাঁর অস্ত্রোপচার হয়ে গেছে। অবস্থা স্থিতিশীল। এই ঘটনার পর আবার প্রমাণিত হলো, 'ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার্স' বা 'কালো মানুষেরও জীবনের দাম আছে' বলে যে আন্দোলনে আলোড়িত হয়েছিল অ্যামেরিকা, তার থেকে কোনো শিক্ষা নেয়নি পুলিশ। ফ্লয়েডের মতো ব্লেকও ছিলেন সম্পূর্ণ নিরস্ত্র। তিনি পুলিশ বা কাউকে আক্রমণ করেননি। নিজের গাড়িতে উঠতে যাচ্ছিলেন। এই অবস্থায় তাঁকে কেন গুলি করা হবে? বর্ণবাদ নিয়ে এত প্রতিবাদ, আন্দোলন, বিক্ষোভের পরেও কি মার্কিন পুলিশের কাছে কালো মানুষের জীবনের কোনো দাম নেই?

পুলিশ অবশ্য এর কোনো জবাব দেয়নি। তারা বলেছে, ব্লেককে তাঁরাই হাসপাতালে নিয়ে গেছে। দুই কর্মীকে বাধ্যতামূলকভাবে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। প্রশ্ন হলো, হত্যার চেষ্টার অভিযোগে কেন তাঁদের গ্রেফতার করা হয়নি?

এই ঘটনার পরেই উত্তাল হয়েছে কেনোশা। মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ দেখিয়েছেন। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট, বোতল-বোমা ছোড়া হয়। কয়েকটি গাড়িতেও আগুন ধরানো হয়। এলাকায় কার্ফু জারি করা হয়েছে। কিন্তু তা অগ্রাহ্য করে রাস্তায় নেমেছেন প্রচুর মানুষ। বিক্ষোভ চলছে। ফেডারেল পুলিশকেও পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য নামানো হয়েছে।  নিউ ইয়র্কেও প্রতিবাদ হয়েছে।  সেখানে প্রতিবাদকারী আওয়াল বলেছেন, ''আমি ক্রুদ্ধ, আমি বিচলিত, আমি ক্লান্ত। আমি ২৭ মাইল হেঁটে ক্লান্ত।'' বলতে বলতেই তিনি কেঁদে ফেলেন।

ডেমোক্র্যাট-রিপাবলিকান তরজা

ব্লেকের ওপর পুলিশের আক্রমণ নিয়ে শুরু হয়েছে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের কথার লড়াই। প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আসন্ন বলে তার তীব্রতাও বেড়েছে। ডেমোক্র্যাট গভর্নর টনি এভার্স আফ্রিকান-অ্যামেরিকানদের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের জন্য ন্যায় চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, ''আমাদের কাছে এখনো ঘটনার পুরো বিবরণ আসেনি। তা সত্ত্বেও বলতে পারি, আমাদের রাজ্যে বা দেশে তিনিই প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নন, যাঁকে পুলিশ নির্দয়ভাবে মারার চেষ্টা করল।''

কিন্তু ডনাল্ড ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টির নেতারা বলেছেন, এত তাড়াতাড়ি কোনো সিদ্ধান্তে আসা উচিত নয়। রিপাবলিকান সেনেটরের বক্তব্য, ''সকলে একটু ধৈর্য ধরুন। আবেগ নয়, যুক্তি ও আইন আগে দেখুন। তারপর পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করুন। প্রকৃত নেতারা উত্তেজনা কমাবার চেষ্টা করেন, বাড়ান না। দায়িত্বজ্ঞানহীন বিবৃতি দেবেন না।'' 

জর্জ ফ্লয়েড হত্যার সময়ও দেখা গিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পপুলিশকেই আগাগোড়া সমর্থন করে এসেছেন। আর প্রেসিডেন্ট পদে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন সে সময় ফ্লয়েডের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন। ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদে জনবিক্ষোভকে তিনি সমর্থন করেছেন। তিনি তাঁর নির্বাচনী জুটি করেছেন কমলা হ্যারিসকে, যাঁর বাবা ছিলেন কৃষ্ণাঙ্গ ও মা ভারতীয়। বিশেষজ্ঞদের একাংশের ধারণা, আফ্রিকান-অ্যামেরিকান এবং ইন্ডিয়ান-অ্যামেরিকান ভোটের সিংহভাগ বাইডেনের দিকেই যাবে। এই পরিস্থিতিতে ব্লেকের ঘটনা সেই ভোটকে আরো বেশি করে তাঁদের দিকে নিয়ে যাবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

জিএইচ/এসজি(রয়টার্স, এএফপি, এপি)