1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কেউ কেন বিরোধী দলে থাকতে চায় না?

৯ এপ্রিল ২০১৮

প্রশ্নটা অন্যভাবে করা যায়৷ কেন সবাই ক্ষমতায় যেতে চায়? আরে এটা কোনো প্রশ্ন হলো? ক্ষমতা মানে বোঝ না? ইচ্ছেমতো সব করা যায়! সবাই-ই যেতে চায় ক্ষমতায়!

https://p.dw.com/p/2vdtw
বাংলাদেশ
ছবি: bdnews24.com

তবুও আমার মন মানে না৷ আমি বারবার এই প্রশ্ন করতে থাকি৷ নানাভাবে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে একই প্রশ্ন৷ সঙ্গী লোকটা বার বার একই কথা বলে যাচ্ছেন৷ এ যেন ‘রান লোলা রান'!

প্রশ্নটা খুব সোজা৷ উত্তরটা আরো৷ তারপরও আমার মন থেকে একটা ‘কিন্তু' কিছুতেই যায় না৷

প্রথমে আসি, ‘ক্ষমতায়' যাওয়া প্রসঙ্গে৷ এই শব্দটির প্রতি আমার যথেষ্ট আপত্তি আছে৷ গণতন্ত্রের সংজ্ঞায় ক্ষমতার মালিক জনগণ৷ তাই যদি হয়, তাহলে যারা ক্ষমতায় যান, তারা কারা? এর উত্তরও সোজা৷ এরা জনগণের প্রতিনিধি৷ অর্থাৎ, ক্ষমতাধর জনগণ ভোট দিয়ে কাউকে বা কতগুলো লোককে সেবা দেয়ার দায়িত্বে পাঠান কতগুলো সরকারি অফিসে৷ তার মানে, এরা ক্ষমতায় নয়, দায়িত্ব পালনে যান৷ তাই এই প্রক্রিয়াকে দায়িত্ব পালনে যাওয়া বললে সুবিধা হয়৷

প্রায়ই সরকারি দলকে ‘শাসকগোষ্ঠী' বলে ডাকতে শোনা যায়৷ এই শাসকগোষ্ঠীর ধারণাটিও ভুল৷ কারো নিশ্চয়ই মাথা খারাপ না হলে নিজেকে শাসন করতে ভোট দিয়ে কাউকে পাঠাবেন না৷

এসব শব্দ বদলাবার সময় এসেছে৷ ঠিক বদলানো বলা যাবে না, বলা ভালো যে, শুধরে ঠিক শব্দগুলো বলার সময় এসেছে৷ কারণ, এ সব শব্দ বহুল চর্চিত হবার এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব রয়েছে সাধারণের মাঝে৷

এবার দ্বিতীয় প্রসঙ্গে আসি৷ সাধারণভাবে বিরোধী দলে কেউ যেতে চায় না, কারণ, বিরোধী দল মানে পরাজিত একটি দল, যার জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা জয়ী দলের চাইতে কম৷ এ পর্যন্ত ঠিকই আছে৷ কিন্তু এই দলটি বা দলগুলোও তো কিছু না কিছু ভোট পেয়েছে৷ অর্থাৎ, সমাজের একটি গোষ্ঠীর কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা আছে৷ তারা তাদের প্রতিনিধি৷ তাই বিরোধী দলে থাকলেও সমাজের একটি অংশের কণ্ঠস্বর তারা৷ তাদের যদি পাত্তা না দেয়া হয়, তাহলে সমাজের একটি অংশের জনগণকে পাত্তা দেয়া হয় না৷ অর্থাৎ, একটি নির্দিষ্ট অংশের মানুষ নিজেদের বঞ্চিত, অবহেলিত মনে করেন৷

বাংলাদেশের বাস্তবতায় বিষয়টি আরো এক কাঠি সরেস৷ ঐতিহাসিকভাবেই এখানে বিরোধী দল কখনো তেমন সুবিধা করতে পারেনি৷ স্বাধীনতার পর সেই ন্যাপ ও বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি থেকে শুরু, এরপর জাসদ৷ পরবর্তীতে কালের পরিক্রমায় যা দাঁড়িয়েছে, তা কারো জন্যই সুখকর হয়নি৷ বরং ‘ক্ষমতায়' যাওয়া বা থাকার জন্য সবাই খেলেছে আগুন নিয়ে৷

বিরোধী দলের মানেটা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যন তারা একটি নিপীড়িত দল, যাদের কোনো অধিকার নেই৷ তাদের নেতা-কর্মীরা মামলার পর মামলা খাবে৷ জেল খাটবে৷ অথবা কোণঠাসা হয়ে থাকবে৷ রাজপথে কর্মসূচি দিতে পারবে না৷

এই সংস্কৃতি একদিনের নয়৷ দিনের পর দিন ধরে এমনটিই চলে এসেছে, যার শিকার আওয়ামী লীগ বা বিএনপি নয়, শিকার আসলে মানুষ৷

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়৷ পরবর্তীতে তাঁর খুনিদের বিচার না করে ইনডেমনিটি দেয়া হয়৷ এরপরের সরকারগুলো দীর্ঘসময় তাঁর নামটি পর্যন্ত নিতে দেয়নি৷

পরবর্তীতে ৯৬-তে যখন প্রথম আবার আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে, তখন থেকে তাদের একটাই লক্ষ্য যে, বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগকে সমাজে, মননে পুণঃস্থাপন করা৷ কিন্তু তা করতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই তাদের নেতা-কর্মীরা বাড়াবাড়ি করে ফেলেন৷

Zobaer Ahmed
যুবায়ের আহমেদ, ডয়চে ভেলেছবি: Zobaer Ahmed

সে যা-ই হোক, বিরোধী দল মানে যখন এমন, তখন কে চাইবে বিরোধী দলে থাকতে? ফলে ঘাড় দিয়ে পর্বত ঠেলার মতো হয়ে যায় বিরোধী দলের আন্দোলন৷

সে আন্দোলন মানে ‘লগি বইঠা' কিংবা ‘পেট্রোল বোমা' ও ‘গ্রেনেড'৷ বিষয়টি শুধু এখানেই সীমাবদ্ধ থাকলেও হতো৷

‘ক্ষমতায়' যেতে রাজনৈতিক দলগুলো দলীয় নীতি নৈতিকতার বাইরেও অনেক কিছুই করে৷ কোনো কোনো বড় দলের আজ পর্যন্ত চরিত্রই দাঁড়ায়নি

কেউ কেউ অসাম্প্রদায়িক চেতনার কথা বলেও ‘আপোষ' করেছে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর সঙ্গে৷ ফলে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি হয়েছে এবং হচ্ছে দেশের মানুষের৷

আজ পর্যন্ত যত রকমের সাম্প্রদায়িক ও কট্টর ধ্যান-ধারণার উন্মেষ হয়েছে এদেশে, ডালাপালা ছড়িয়েছে, তার প্রধান কারণ ‘ক্ষমতায় থাকা' গোষ্ঠীর তা আঁকড়ে ধরে রাখার ও ‘ক্ষমতাহীন' গোষ্ঠীর ক্ষমতায় যাওয়ার প্রবণতা, এবং সেই প্রবণতার কারণে বিষাক্ত শক্তিকে উসকে দেয়ার মানসিকতা৷

তবে এ সবের মূলে রয়েছে রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা ও প্রতিহিংসা৷ যে প্রতিহিংসা বা অসহিষ্ণুতা তৈরি হয়েছে বিরোধী দলে না যেতে চাওয়ার মানসিকতা থেকে৷ বিরোধী দলে না যেতে চাওয়ার মানসিকতা তৈরি হয়েছে, সরকারের একচ্ছত্র ক্ষমতার সংস্কৃতির কারণে, নিপীড়িত হবার ভয়ে৷

কিন্তু ধরা যাক, যদি এমন হতো যে, সংসদে সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া দল যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে তুলনামূলক কম ভোট পাওয়া বিরোধী দলগুলো৷ সবার প্রতিনিধিরাই সরকারের ‘দায়িত্ব' পালন করছে৷ তাহলে সহিষ্ণুতা ও হার মেনে নেবার সংস্কৃতি বজায় থাকতো৷ কারণ পরাজয় মানেই তখন ব্রাত্য হয়ে পড়া নয়৷ বরং আরেকটি বড় জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করাই হতো তাদের মূল লক্ষ্য৷ তাই থাকতো না কারো একচ্ছত্র ক্ষমতা৷ ক্ষমতা প্রকৃতই থাকতো জনগণের হাতে৷

জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেবার জন্য কী করা উচিত বলে আপনার মত? লিখুন নীচের ঘরে৷