1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কেকে-র মৃত্যু নিয়ে বিতর্ক বাড়ছে

৩ জুন ২০২২

বলিউডের সদ্যপ্রয়াত গায়ক কৃষ্ণকুমার কুনাথ বা কেকে-র মৃত্যু নিয়ে বিতর্ক থামছে না। মুখ খুলছেন, প্রশ্ন তুলছেন অনেক ব্যক্তিত্ব। প্রশ্ন উঠছে, কী করে একটা কলেজ ইউনিয়ন এত অর্থ খরচ করে কেকে-র মতো গায়ককে ফেস্টে নিয়ে আসতে পারে?

https://p.dw.com/p/4CEy9
নজরুল মঞ্চের অনুষ্ঠানে কেকে।
নজরুল মঞ্চের অনুষ্ঠানে কেকে। ছবি: Satyajit Shaw

একদিন আগেই মুম্বইয়ের ভারসোভা শ্মশানে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে কেকে-র। চোখের জলে তাকে শেষ বিদায় জানিয়েছেন তার সমর্থক ও তারকারা। শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অলকা ইয়াগনিক, শ্রেয়া ঘোষাল, অভিজিৎ, সেলিম মার্চেন্ট, হরিহরণ, জাভেদ আলি, শঙ্কর মহাদেবনরা। ছিলেন তাঁর হাজারো দর্শক।

তবে কেকে-র মৃত্যু নিয়ে বিতর্ক থামা দূরস্থান, বরং আরো জোরালো হয়েছে। প্রচুর প্রশ্ন উঠছে। তুলছেন কেকে-র পরিচিতরা, বিরুদ্ধ রাজনৈতিক দলের নেতা থেকে তারকারা।

কী অভিযোগ

বলিউড তারকা ওম পুরীর সাবেক স্ত্রী নন্দিতা পুরী টুইট করে বলেছেন, কলকাতার প্রশাসকরা কেকে-কে হত্যা করেছে। আড়াই হাজারের হলে সাত হাজার মানুষ, এসি চলছে না, গায়ক দরদর করে ঘামছেন, চারবার নালিশ করেছেন, কেউ শুনল না। কোনো চিকিৎসক নেই, ফার্স্ট এইড নেই। গুরুত্বপূর্ণ সময় নষ্ট হয়েছে। তার দাবি, সিবিআই তদন্ত হওয়া দরকার এবং বলিউডের উচিত পশ্চিমবঙ্গে পারফর্ম করা বন্ধ করা। পশ্চিমবঙ্গকে বয়কট করা।

নন্দিতার এই পোস্টের ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়। তার এই মতের বিরুদ্ধে বহু মানুষ সোচ্চার হন। তারপর নন্দিতা ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, তিনি পশ্চিমবঙ্গ বা কলকাতা ও সেখানকার মানুষকে অপমান করতে চাননি। তিনি সরকার ও প্রশাসনের অকর্মন্যতার বিষয়টি তুলে ধরতে চেয়েছেন। বিশেষ করে নজরুল মঞ্চের ব্যবস্থাপকদের বিরুদ্ধে বলতে চেয়েছেন।

দুর্ঘটনায় প্রয়াত গায়ক কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্যের স্ত্রী ঋতচেতা আনন্দবাজারকে জানিয়েছেন, ''কেকে-র মৃত্যুর দায় আমাদের, এই শহরবাসীর। তিনি বলেছেন, হলে তিন-চারগুণ বেশি দর্শক ঢুকে পড়েছে। তারপরেও বাইরে প্রচুর দর্শক অপেক্ষা করছেন। তারা ইট ছুড়েছে। বাঁশ কেটে টুকরো করে ছুড়েছে। গান শুনতে গিয়ে কি এরকম করা যায়?''

অভিনেতা ও তৃণমূল বিধায়ক সোহম চক্রবর্তী মনে করেন, ''আয়োজকদের আরো সুশৃঙ্খল হওয়া উচিত ছিল। মঞ্চের ভিড় আয়ত্তে এনে, নির্দিষ্ট সংখ্যক দর্শক নিয়ে অনুষ্ঠান করলে এই অঘটন হয়তো ঘটত না।''

বলিউডের গায়ক অভিজিৎ আবার বলেছেন, ''আমি দুই সপ্তাহ আগে ওই নজরুল মঞ্চে অনুষ্ঠান করেছি। সবকিছু ঠিক ছিল। অনেক কিছু বলা হচ্ছে, সব গুজব। যাদের প্রচুর গান আছে, তাদের মানুষ স্টেজ থেকে যেতে দেয় না। শিল্পীও তাই চায়। শিল্পী এই চাপ পছন্দ করেন।''

সিপিএম, বিজেপি-র অভিযোগ

রাজ্য সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের অভিযোগ, ''তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর ছাত্র সংসদ থাকবে না বলেছিল। তাহলে এই উৎসব কী করে হলো? অনুষ্ঠানে নকল কার্ড বিলি হয়েছে। কেন তা আটকানো হয়নি?''

বিজেপি-র সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ তো সরাসরি বলেছেন, ''কেকে-কে তৃণমূলের লোকেরা খুন করে দিল। শিল্পীকেও ছাড়ল না।''

বিজেপি-র সাংসদ সৌমিত্র খান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে কেকে-র মৃত্যুর সিবিআই তদন্ত চেয়েছেন।

সামাজিক মাধ্যমে প্রশ্ন উঠেছে, কেকে-কে আনার মতো টাকা কী করে কলেজ ইইউনিয়ন পেল? এটা তো লাখখানেক টাকার গল্প নয়, বিশাল অর্থ দিয়ে বলিউডের গায়কদের এই ধরণের অনুষ্ঠানে আনতে হয়।

শেষ অনুষ্ঠানে কেকে।
শেষ অনুষ্ঠানে কেকে। ছবি: Satyajit Shaw

রূপঙ্করের পাশে নচিকেতা

কেকে-কে নিয়ে রূপঙ্কর বাগচী সামাজিক মাধ্যমে প্রশ্ন তুলেছিলেন, কে কেকে? দাবি করেছিলেন, বাংলার অনেক শিল্পীই কেকে-র মতো গাইতে পারেন। কেকে-র মৃত্যুর পর সামাজিক মাধ্যমে সাধারণ মানুষ মুখর হয়েছেন রূপঙ্করের সমালোচনায়। তাদের কাছে রাতারাতি ভিলেন হয়ে গেছেন রূপঙ্কর। তাদের ক্ষোভ আছড়ে পড়ছে টুইটার, ফেসবুক-সহ অন্য মাধ্যমে।

তবে রূপঙ্করের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন নচিকেতা। আনন্দবাজারে লেখা নিবন্ধে নচিকেতা বলেছেন, ''আমি রূপঙ্করের পাশে আছি। ইমন, রাঘবদেরও থাকা উচিত। নচিকেতার যুক্তি, রূপঙ্কর আসলে বাঙালি সংস্কৃতির কথা বলতে চেয়েছিল। ও শুধু একটা অভিমানের কথা বলতে চেয়েছিল। ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করতে চায়নি। তার বক্তব্য, বাঙালি শিল্পীরা যখন অন্য রাজ্যে যায়, তখন ক-টাকা পারিশ্রমিক পায়। আর বম্বের শিল্পীরা কত পায়! নচিকেতার মতে, এই অভিমানটা থাকবে। থাকাটাই স্বাভাবিক।''

সেই মঞ্চে অনুপম

নজরুল মঞ্চে আবার কলেজ ফেস্টের অনুষ্ঠান। এবার শিল্পী অনুপম রায়। তবে কেকে-র কথা মাথায় রেখে ঠিক হয়েছে, দুইটি অ্যাম্বুলেন্স রাখা হবে। থাকবেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও। হাসপাতালকেও জানিয়ে রাখা হয়েছে, কেউ অসুস্থ হলে দ্রুত সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে। আর ঢোকার ক্ষেত্রে খুবই কড়াকড়ি করা হয়েছে।

 এছাড়া রাজ্য সরকার ঠিক করেছে, ভবিষ্যতে কলেজ ফেস্টের উপর নজর রাখা হবে। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে একটি ফেস্ট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

জিএইচ/এসজি (পিটিআই, আনন্দবাজার, ইন্ডিয়া টুডে)