1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কমিক বই থেকে শিক্ষা

৩১ মে ২০১৮

কেনিয়ার মতো দেশে তরুণ প্রজন্মের সমস্যা, তাদের কাছে জরুরি বিষয়গুলি নিয়ে চর্চার সুযোগ এতকাল সীমিত ছিল৷ এক অভিনব উদ্যোগের আওতায় কমিক বই, ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সমন্বয় ঘটিয়ে দারুণ ফল পাওয়া যাচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/2ygnq
ছবি: Getty Images/AFP/S. Maina

কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবির সবচেয়ে বড় বস্তির নাম ‘কিবেরা’৷ কয়েক বছর ধরে স্থানীয় মানুষ বিনামূল্যের এক কমিক বই থেকে দৈনন্দিন জীবন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা গ্রহণ করছেন৷ ব্যাপক বেকারত্ব থেকে শুরু করে বিশেষ করে তরুণীদের মধ্যে অপরিকল্পিত গর্ভাবস্থার মতো বিষয় তাতে তুলে ধরা হয়৷ স্থানীয় ব্যবসায়ী ডেরিক ওয়েরে বলেন, ‘‘শাসনব্যবস্থা ও তাতে তরুণ প্রজন্মকে সামিল করা অত্যন্ত জরুরি৷ শুধু যৌনতার বদলে সামগ্রিকভাবে সেক্সুয়াল রিপ্রোডাকশনের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ৷ তরুণ ব্যবসায়ীদের জন্য জরুরি বিষয়ও রয়েছে৷ তরুণ প্রজন্মের ইস্যুগুলি নিয়ে চর্চা হয়৷’’

Comic Shujaaz

সোয়াহেলি ও ইংরেজি ভাষার মিশ্রণে তৈরি শেং নামের কথ্য ভাষায় ‘শুজ্যাজ’ মানে হিরো৷ কেনিয়ার কয়েক লক্ষ তরুণ-তরুণী এ ভাষায় কথা বলেন৷ কমিক বইয়ের স্রষ্টারা একইসঙ্গে মনোরঞ্জন ও তথ্য দিতে চান৷ নানা পরামর্শ ও ‘রোল মডেল’-এর মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়াই তাঁদের লক্ষ্য৷ এই উদ্যোগের অনুরাগী লুসি নিয়ামবুরা বলেন, ‘‘আমি অত্যন্ত ঢিলেঢালা ছিলাম, জীবনে কোনোকিছুরই পরোয়া করতাম না৷ পত্রিকাটি পড়ে পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিলাম৷ কারণ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলাম৷ বাকি তরুণরা পারলে আমি কেন পারবো না!’’

‘শুজ্যাজ’ পত্রিকার টিম সমাজকল্যাণকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়৷ পাঠকদের কাছেই প্রতিবেদনের বিষয় চাওয়া হয়৷ কমিক বইয়ের চরিত্রগুলি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও জায়গা করে নিয়েছে৷ এই উদ্যোগের সোশাল মিডিয়া টিমের ফরিদা জিলানি বলেন, ‘‘এই পর্যায়ে আমি ভাবছি, কেনিয়ার সব তরুণ-তরুণীদের সোশাল মিডিয়ায় থাকা অত্যন্ত জরুরি৷ তারা খবর রাখতে চায়, চলতি প্রবণতা সম্পর্কে জানতে চায়, নিজেদের বৃহত্তর গোষ্ঠীর অংশ হিসেবে দেখতে চায়৷ ঠিক সেখানেই শুজ্যাজ এগিয়ে আসে৷ বন্ধুদের মধ্যে সহযোগিতা গড়ে তোলে৷ অফলাইন মিডিয়ায় যা ঘটে, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে অনলাইন মিডিয়ায়ও যাতে কিছু ঘটে, তা নিশ্চিত করে৷’’

কেনিয়ায় প্রথাগত আর আধুনিক মিডিয়ার মিলন

পাঠকরা এসএমএস-এর মাধ্যমেও সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন৷ কেনিয়ায় এসএমএস অত্যন্ত জনপ্রিয়৷ যাদের ইন্টারনেট সংযোগ নেই, তাঁরা এক দৈনিক রেডিও শো শুনতে পারেন৷ ২০টিরও বেশি স্টেশন সেটি সম্প্রচার করে৷

‘শুজ্যাজ’ ও ‘ওয়েল টোল্ড স্টোরি’-র পেছনে ব্যক্তির নাম রব বার্নেট৷ এই ব্রিটিশ নাগরিক প্রায় ২০ বছর ধরে কেনিয়ায় বসবাস করছেন৷ ২০০৭ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর হিংসার জের ধরে তাঁর মাথায় এই আইডিয়া আসে৷ তিনি দেখলেন, তরুণ প্রজন্মের মনে হচ্ছে যে রাজনৈতিক নেতারা তাদের হাতিয়ার করছে এবং মূল স্রোতের সংবাদ মাধ্যম তাদের উপেক্ষা করছে৷ তিনি তখন তরুণ প্রজন্মের সহায়তায় এগিয়ে এলেন৷ রব বলেন, ‘‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক নামী অ্যাকাডেমিক প্রতিষ্ঠান এক বিস্তারিত সমীক্ষা চালিয়েছে৷ তাতে দেখা গেছে, ১৯ বা তার কমবয়সি যে সব নারী ‘শুজ্যাজ’ শোনে, ১৯ বছরের আগে তাদের বিয়ের সম্ভাবনা তিন গুণ কম৷ এবং ১৯ বছরেও অবিবাহিত থাকার অর্থ তুমি শিক্ষা গ্রহণ করছো, অথবা ব্যবসা করছো, আয় করছো৷ তোমার জীবনে অগ্রগতি ঘটছে, এখনো সন্তান হয় নি৷ বিয়ে না করার কারণে একগুচ্ছ ভালো দিক খুলে যায়৷’’

এখনো পর্যন্ত ৬০ লক্ষেরও বেশি মানুষের কাছে এই উদ্যোগের সুফল পৌঁছে গেছে৷ প্রতিবেশী দেশ তানজানিয়ায়ও অনুরাগীর সংখ্যা বাড়ছে৷ গোটা আফ্রিকা মহাদেশ জুড়ে অনলাইন উপস্থিতি বাড়ানোই আসল লক্ষ্য৷ রব বার্নেট বলেন, ‘‘আমাদের লক্ষ লক্ষ অনুরাগীদের মধ্যে উদ্যম ও সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে ইন্টারনেট আর কী করতে পারে? আমরা কিছু আইডিয়া কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি৷ শুজ্যাজ প্রভাবের প্রতিশ্রুতি কাজে লাগিয়ে আমরা ইন্টারেনেটে আরও বড় আকারে, আরও দ্রুত, আরও উন্নত, আরও সস্তায় কিছু দিতে চাই৷ সেই কাজই চলছে৷’’

কিবেরা-য় আরও বেশি সংখ্যায় মানুষ ইন্টারনেট সংযোগ পাচ্ছেন৷ কিন্তু এই মুহূর্তে পুরানো যুগের কমিক বইই মানুষকে তাদের কাহিনি বলতে ও নতুন আইডিয়া গ্রহণ করতে প্রেরণা যোগাচ্ছে৷

এলকে ওপিয়েলকা/এসবি