1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কেন মন্ত্রিত্ব ছাড়লেন লক্ষ্মীরতন?

৬ জানুয়ারি ২০২১

তৃণমূলের আরেকটি উইকেটের পতন হলো। সাবেক ক্রিকেটার লক্ষ্মীরতন শুক্লা মন্ত্রিত্ব ছাড়লেন। রাজনীতিও।

https://p.dw.com/p/3nYvd
ভোটের আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল ছাড়ছেন একের পর এক নেতা। ছবি: DW/S. Bandopadhyay

লক্ষ্মীরতন শুধু বলেছেন, তিনি আবার ক্রিকেটে মনোনিবেশ করতে চান। তাই মন্ত্রিত্ব, হাওড়ার তৃণমূল সভাপতির পদ এবং রাজনীতি সবই ছেড়ে দিলেন। বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেননি। কারণ, বিধায়ক পদের মেয়াদ আর মাত্র কয়েক মাস।

কিন্তু সত্যিই কি তাই? ৪০ বছর বয়সী লক্ষ্মীরতন তো ক্রিকেটের মাঠে ফিরতে পারবেন না। ক্রিকেট প্রশাসনে যেতে পারেন। তার জন্য তো এভাবে রাজনীতি ও মন্ত্রিত্ব এবং হাওড়া জেলা সভাপতির পদ ছাড়ার দরকার ছিল না। ভোটের কয়েক মাস আগে তৃণমূলের এক মন্ত্রী তথা সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটারের এভাবে পদত্যাগ করা নিয়ে তৃণমূলের অন্দরের রাজনীতিতে প্রচুর জলঘোলা হচ্ছে। রাজনীতিতে আসার পাঁচ বছরের মধ্যে কেন তাঁকে দল ও মন্ত্রিত্ব ছাড়তে হলো, তার ব্যাখ্যা লক্ষ্মী না দিলে কী হবে, আরেক তৃণমূল বিধায়ক বৈশালী ডালমিয়া দিয়েছেন। প্রয়াত ক্রিকেট প্রশাসক জগমোহন ডালমিয়ার মেয়ে  বৈশালী কোনো রাখঢাক না করেই বলেছেন, ''দলের ভিতর লক্ষ্মীকে কাজ করতেই দেয়া হচ্ছিল না। দলের ভিতর উইপোকারা তাঁকে কাজ করতে দিল না। এই উইপোকারা দলকে কুরে কুরে খেয়ে নিচ্ছে। তারা নেত্রীর কথা মানছে না। দলের কথা ভাবছে না।''

লক্ষ্ণীর মতো বৈশালীও হাওড়া জেলারই বিধায়ক। হাওড়া জেলাই এখন তৃণমূলের মাথাব্যথার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। হাওড়ার আরেক মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় দীর্ঘদিন ধরে মন্ত্রিসভার বৈঠকে যাওয়া বন্ধ করেছেন। তিনিও দল চালানো নিয়ে প্রকাশ্যেই সমালোচনা করেছেন। দলে সৎ লোকেদের জায়গা নেই, এমন মন্তব্যও করেছেন। তাঁকে সম্প্রতি বৈঠকে ডেকেছিলেন তৃণমূলের প্রবীণ মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু রাজীব যাননি।

লক্ষ্মী মন্ত্রিত্ব ও জেলা সভাপতির পদ ছাড়ার পর হাওড়ার জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান অরূপ রায় বলেছেন, এ তো যুদ্ধের আগে সেনাপতির সরে যাওয়া। হাওড়ায় অরূপের দাপট সর্বজনবিদিত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লক্ষ্মীর জায়গায় যাঁকে জেলা সভাপতি করেছেন তিনিও অরূপ-ঘনিষ্ঠ বলে তৃণমূলে পরিচিত। সম্প্রতি দলের একটি বৈঠকে সাবেক ফুটবলার ও তৃণমূলের সাংসদ প্রসূণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ''সভাপতি হওয়ার পর লক্ষ্মীর কোনো মুভমেন্ট নেই। কোনো কমিটি করা হয়নি। দলটা কেমন হয়ে যাচ্ছে। তবে রাজীব, অরূপ ও লক্ষ্মী মিলে পরিস্থিতি এখনো সামলাতে পারেন।'' কারা লক্ষ্মীকে কাজ করতে দেননি, সেই নেতাদের নাম বৈশালী বলেননি, কিন্তু দলের অন্দরের খবর, হাওড়ার গোষ্ঠী লড়াইয়ের ফলেই টিকতে পারলেন না লক্ষ্মী। 

লক্ষ্ণী পারেননি। তিনি শেষ পর্যন্ত নিজেই রাজনীতি ছেড়ে চলে গেলেন। প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''লক্ষ্মী নিঃসন্দেহে রাজ্যের নামি ক্রিকেটার ছিলেন। তবে খুব বড় রাজনীতিক ছিলেন এমন নয়। তবে তাঁর এভাবে মন্ত্রিত্ব ছাড়ার অর্থ হলো লোকের মনে একটা ধারণা তৈরি হওয়া। সেটা তৃণমূলের পক্ষে খুব একটা ভালো নয়।''

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লক্ষ্মীর পদত্যাগ নিয়ে বলেছেন, ''ও ক্রিকেটে মনোনিবেশ করতে চায়। লক্ষ্মী খুব ভালো ছেলে। এটা নিয়ে রাজনীতি খোঁজার চেষ্টা করবেন না।''

মমতা একথা বললেও জল্পনা থামছে না। নানা প্রশ্ন উঠছে। বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, লক্ষ্মী চাইলে তাঁদের দলে আসতে পারেন। বৈশালী বলেছেন, এটা ওয়ান ম্যান শো নয়। জেলার নেতৃত্ব আছেন। তাঁরা  যদি সবাইকে নিয়ে না চলেন, তা হলে অবস্থা আরো খারাপ হবে।

শুভাশিসের মতে, ''গত দুই বছর মমতা হাওড়ায় ঐক্য আনতে অনেক চেষ্টা করেছেন, পারেননি। সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, এই জেলায় ছোটখাট নেতারা অনেকেই তৃণমূল ছাড়ছেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে লক্ষ্মীরতনের দল ও মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেয়া বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে। লোকের মনে যে ধারণা তৈরি হচ্ছে, তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষে রাজনৈতিক দিক থেকে ক্ষতিকর।''

জিএইচ/এসজি(পিটিআই, এএনআই)