1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কোন পথে ডোপ টেস্ট

সুলাইমান নিলয় ঢাকা
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১

প্রধানমন্ত্রী থেকে উচ্চ আদালত, মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য-ডোপ টেস্ট নিয়ে কে কথা বলেননি? এমনকি ডোপ টেস্ট করিয়ে মাদকাসক্তির প্রমাণ মেলায় চাকরিচ্যুতির মতো ব্যবস্থাও নেয়া শুরু হয়েছে পুলিশে৷

https://p.dw.com/p/40Rhe
প্রতীকী ছবিছবি: picture-alliance/dpa

গেল জানুয়ারিতে কেবল ঢাকা মহানগর পুলিশেরই ২৫ সদস্য এই অভিযোগে চাকরি হারিয়েছেন৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডোপ টেস্ট নিয়ে গঠন করেছে কমিটি৷ কর্তৃপক্ষ বলছে, আগামীতে সম্মান প্রথম বর্ষে ভর্তির সময় থেকেই নবাগত শিক্ষার্থীদের ডোপ টেস্ট করা শুরু করবেন তারা৷

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যাযে এ রকম ডোপ টেস্টের বিপক্ষে সরব হয়েছেন অনেকে৷ তারা বলছেন, প্রশাসন এটাকে বিরুদ্ধ পক্ষের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারে৷ এটা হয়ে উঠতে পারে দমনের হাতিয়ার৷

‘আইন আছে, বিধিমালা নেই’

বাংলাদেশে মাদকদ্রব্য কেনাবেচা ও সেবন রোধে ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮’ প্রয়োগ করা হয়৷ এর আগের আইনটি করা হয় ১৯৯০ সালে৷

পুরনো আইনে ডোপ টেস্ট নিয়ে কোনো কথা না থাকলেও নতুন আইনে ডোপ টেস্ট সম্পর্কে দুই জায়গায় বলা হয়েছে৷ প্রথমে ২৪ (৪) ধারায় বলা হয়েছে, মাদকাসক্ত ব্যক্তি শনাক্ত করিবার প্রয়োজনে, বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে ডোপ টেস্ট  করা যাইবে৷ ডোপ টেস্ট পজিটিভ হইলে ধারা ৩৬ (৪) অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাইবে৷

এই ধারায় বলা আছে, মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে আদালত চিকিৎসার জন্য পাঠাতে পারবেন৷ তিনি চিকিৎসা গ্রহণে অনিচ্ছা প্রকাশ করলে তাকে ছয় মাস থেকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেয়া যেতে পারে৷

এই আইনের ৬৮ ধারায় সরকারকে ডোপ টেস্ট সম্পর্কে বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে৷ সেই আইনের তিন বছর হতে চললেও এখনো ডোপ টেস্ট নিয়ে কোনো বিধিমালা হয়নি৷

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আব্দুস সবুর মন্ডল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সরকার ডোপ টেস্ট করার জন্য নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ ডোপ টেস্টের দাবিটা অনেকদিন ধরে উঠছে৷ তার আলোকে সরকার ডোপ টেস্ট বিধিমালা-২০২১ করার উদ্যোগ নিয়েছে এবং এটি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে৷ এটি আইন মন্ত্রণালয়ে আছে৷ আমরা আশা করছি, দ্রুত এটি পাস হবে৷ পাস হলে এটি কার্যকর হবে৷’’

‘‘ইতিমধ্যে আমরা ডোপ টেস্ট করছি৷ আমাদের কেন্দ্রীয় নিরাময় কেন্দ্র তেজগাঁওতে৷ সেখানে কিন্তু আমরা ডোপ টেস্ট করছি৷ বিভিন্ন দপ্তর থেকে আমাদের কাছে যে রিকুইজিশন আসে, তার আলোকে আমরা ডোপ টেস্ট করে আমরা তাদেরকে রেজাল্ট দিয়ে দিচ্ছি৷’’

‘‘আমাদের কর্মচারীদেরকেও আমরা ডোপ টেস্ট করিয়েছি কয়েকদিন আগে৷’’

ডোপ টেস্ট: যেভাবে শুরু এখনকার আলোচনা

পৃথিবীর নানা দেশের মতো বাংলাদেশের আইনেও মাদক সেবনের চেয়ে মাদক সেবন করে গাড়ি চালানোকে বড় অপরাধ হিসাবে দেখা হয়৷ তাই গাড়ি চালকদের মাদকগ্রহণ বন্ধ করতে তাদের ডোপ টেস্টের আওতায় আনার দাবি দীর্ঘদিনের৷

২০২০ সালের অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও চালকদের ডোপ টেস্টের আওতায় আনার কথা বলেছিলেন৷ সেই উদ্যোগ বাস্তবায়নেও নেয়া হয়েছে কার্যক্রম৷

২০১৮ সালের নভেম্বরে হাই কোর্ট ডোপ টেস্ট নিয়ে একটি রুল দেয়৷ এই রিটের আইনজীবী এখলাস উদ্দিন ভূঁইয়া ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রুলে সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে যোগ দেওয়ার আগে ডোপ টেস্ট কেন বাধ্যতামূলক করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়৷’’

মন্ত্রিপরিষদ সচিব, আইন সচিব, স্বাস্থ্য সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়৷

রিটকারীর আইনজীবী জানান, এই রুলটির চূড়ান্ত শুনানির অংশ বিশেষ শেষ হয়েছে৷ শিগগিরই নতুন একটি কোর্টে চূড়ান্ত শুনানি শেষ করার উদ্যোগ নেবেন তিনি৷

সেই সময় এখলাস উদ্দিন ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘‘দেশের প্রায় ৭০ লাখ মানুষ মাদকাসক্ত৷ তাদের মধ্যে প্রায় ৬৫ ভাগ বয়সে তরুণ৷ তাছাড়া বিভিন্ন গবেষণা ও পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমানে দাম্পত্য কলহ ও বিবাহ বিচ্ছেদের অন্যতম কারণ মাদকাসক্তি৷ চাকরির ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট হলে সামাজিকভাবে মাদকাসক্তি অনেকাংশে কমে আসবে৷’’

গত ফেব্রুয়ারি মাসে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে কমিটির আহ্বায়ক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘‘যত কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ হবে, সেটা বিসিএস হোক আর যা-ই হোক, প্রত্যেকের ডোপ টেস্ট করা হবে৷’’

‘‘কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রেও ডোপ টেস্ট চালু করা হবে৷ যারা চাকরিতে আছেন, তাদের বিরুদ্ধে মাদক গ্রহণের অভিযোগ পাওয়া গেলে তাদেরও ডোপ টেস্ট করা হবে৷ এই কার্যক্রম ব্যাপক হারে প্রয়োগ হবে এবং বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে৷’’

এরপর গত জুন মাসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ঘোষণা দেন, ডোপ টেস্টে কারো ফল পজিটিভ এলে তিনি সরকারি চাকরির জন্য অযোগ্য বিবেচিত হবেন৷

তারপর আগস্টে তিনি আরেক ধাপ এগিয়ে বলেন, চাকরিতে ঢোকার সময় ডোপ টেস্টের পাশাপাশি বছরে একবার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এই পরীক্ষার আওতায় আনা হবে৷

ডোপ টেস্টে যারা পজিটিভ হবেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান তিনি৷

তবে ডোপ টেস্টে পজিটিভ আসার পর পুলিশের চাকরি হারানোর খবরই সংবাদ মাধ্যমে বেশি আসে৷ যেমন, ডোপ টেস্টে মাদকাসক্তির প্রমাণ পাওয়ার পর গত জানুয়ারি মাসে ঢাকা মহানগর পুলিশের ২৫ সদস্য চাকরি হারিয়েছেন৷

ঢাবি ভর্তিতে ডোপ টেস্টে পজেটিভ হলে সিদ্ধান্ত নেবে কমিটি

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডোপ টেস্ট করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে৷ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষকে প্রধান করে একটি নীতিমালা কমিটিও করেছে৷ গত ৩১ আগস্ট ওই কমিটি করার পর কমিটির প্রধান টিটো মিঞা বলেছিলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ডোপ টেস্টের আওতায় আনবেন তারা৷

পরে অবশ্য কমিটির অপর সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহ সংবাদ মাধ্যমে বলেছিলেন, তারা কেবল শিক্ষার্থীদেরই ডোপ টেস্ট করবেন৷

এই বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান মেডিক্যাল কর্মকর্তা সারওয়ার জাহান মুক্তাফী বলেন, ‘‘এ বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি৷ একটা মিটিং হয়েছে৷ কিছু প্রপোজাল আছে, সেগুলো রেডি করা হচ্ছে৷ এরপর আরো মিটিং হবে৷ সেখানে এ বিষয়ে অন্যান্য সিদ্ধান্ত হবে৷’’

টেস্ট আমরা করবো, নাকি বিএসএমএমইউ করবে-সেই বিষয়েও পরে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে: ঢাবির প্রধান মেডিকেল কর্মকর্তা

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘শিক্ষকদের বিষয়ে প্রথম মিটিং এ কোনো আলাপ হয়নি৷ শিক্ষার্থীদের বিষয়ে কথা হয়েছে৷’’

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘কেউ নেশা করে কিনা, পাঁচটা মাদক কেউ গ্রহণ করেছেন কিনা, সেটা পরীক্ষার মাধ্যমে ধরা পড়বে৷ টেস্ট আমরা করবো, নাকি বিএসএমএমইউ করবে-সেই বিষয়েও পরে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে৷’’

ভর্তিচ্ছুদের পজিটিভ ফল এলে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘এখানে প্রস্তাবনা থাকবে, হয় তাকে চিকিৎসার সুযোগ দিতে হবে, চিকিৎসা করে যদি সে আবার নেগেটিভ সনদ নিয়ে আসে, তখন কমিটি যদি সেটা অনুমোদন করে, তাহলে ভর্তি কবে৷ এগুলো এখনো ফাইনাল হয়নি৷’’

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এমন উদ্যোগ অবশ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই প্রথম নয়৷ বরং ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম এমন উদ্যোগ নেয়৷ তবে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তখন বলেছিল,  ডোপ টেস্টে ভর্তিচ্ছুদের কেউ পজিটিভ ধরা পড়লে তাকে ভর্তিতে বাধা দেয়া হবে না৷ বরং তাকে চিকিৎসার আওতায় আনা হবে৷

‘টেকনোলোজিস্ট ১ জন, প্রতিদিন পরীক্ষার সামর্থ ১০০ জনের’

বাংলাদেশে বর্তমানে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ছাড়াও দেশের নানা জায়গায় ডোপ টেস্ট করা যায়৷ ডোপ টেস্ট বিষয়ক বিধিমালা চূড়ান্ত হলে এই কার্যক্রমের কেন্দ্রে চলে আসবে এই অধিদপ্তর৷ সরকারি চাকুরিজীবী ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ডোপ টেস্ট করার যে কথা বলা হচ্ছে, সেখানে ডোপ টেস্টের বিপুল চাহিদা তৈরি হবে৷ কিন্তু বিপরীতে অধিদপ্তরের সামর্থ এখনো খুবই সীমিত৷ 

বর্তমানে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ডোপ টেস্ট করার জন্য একজন টেকনোলজিস্ট রয়েছেন৷ তিনি প্রতিদিন সর্বোচ্চ ১০০ জনের পরীক্ষা করতে পারেন৷

তাৎক্ষণিক চাহিদা সম্পর্কে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আব্দুস সবুর মন্ডল বললেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর টেকনলজিস্ট দিয়ে সাহায্য করলে এই সক্ষমতা বেড়ে যাবে৷

তিনি বলেন, ‘‘সকল শিক্ষার্থীর একসঙ্গে ডোপ টেস্ট করার প্রয়োজন আছে বলে আমার মন হয় না৷ কারণ, ডাক্তাররা, সাইকিয়াট্রিস্টরা যে পরামর্শ দিচ্ছেন যে, এটার একটা সার্টেন সময় থাকে৷ এই সময়ের মধ্যে যদি আপনি ডোপ টেস্ট করতে না পারেন, তাহলে আপনি পজিটিভ পাবেন না, নেগেটিভ পাবেন৷’’

‘‘সুতরাং আপনি যদি বলেন, আগামী মাসে, ১০দিন বা ১৫দিন পর আমরা ডোপ টেস্ট করবো- এ রকম ডোপ টেস্ট করে ফল পাওয়া যাবে কিনা, এটা নিয়ে বিতর্ক আছে৷’’

‘‘ঘোষণা দিয়ে করলে সতর্ক হলে আপনি পজিটিভ রেজাল্ট পাবেন না৷ ডোপ টেস্টে রেজাল্ট সবার পজিটিভ হোক, এটা আমাদের  উদ্দেশ্য নয়৷ ডোপ টেস্টের কথা শুনে মাদক থেকে যেন নিবৃত্ত হন, এটা হলো উদ্দেশ্য৷’’

‘‘যারা সরকারি চাকুরিতে ঢুকবেন বা যারা সরকারি চাকরিতে আছেন, তাদেরকে যদি বিধিমালার আলোকে ডোপ টেস্ট করা হয়, সেটা তাৎক্ষণিকভাবেই করতে হবে৷ ঘোষণা দিয়ে করা যাবে না৷’’

কী কী মাদকের পরীক্ষা হবে?

অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আব্দুস সবুর মন্ডল বলেন, ‘‘বাংলাদেশে যে সব মাদক রয়েছে, সবগুলোই ধরা পড়বে৷ গাঁজা-ইয়াবার মতো মাদকও ধরা পড়বে৷ ইউরিন নিয়ে পরীক্ষা করা যায়৷ তবে কাউকে সন্দেহ হলে ডোপ টেস্টে মাদকাসক্তি ধরা না পড়লে কেমিকেল টেস্টে করা যেতে পারে৷’’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘কাউকে হয়রানি করতে কোনো আইন নয়৷ এটা দিয়ে হয়রানি করা কারো উদ্দেশ্য নয়৷ এটার জন্য কাউকে ধরে আইনের আওতায় নিয়ে আসার নয়৷’’

‘‘ডোপ টেস্ট করে সবাইকে জেলে পুরে দেয়া সরকারের উদ্দেশ্য নয়৷ যে সব ছেলে-মেয়ে বন্ধু-বান্ধবের পাল্লায় পড়ে গ্রহণ করেছে, তারা সতর্ক হবে৷’’

মাদকের ব্যবহার বেড়েছে

অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আব্দুস সবুর মন্ডল বলেন, ‘‘মাদকের ভয়াবহতা বৃদ্ধি পেয়েছে, নাকি হ্রাস পেয়েছে-এটা হয়ত আমরা পুরোপুরি স্টাডি করি নাই৷ তবে অনুমান করি, মাদক গ্রহণের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে৷ আসামি ধরা, বড় বড় চালান ধরা থেকে আমরা এটা অনুমান করি৷’’

‘‘বাংলাদেশে কিন্তু মাদক উৎপাদন হয় না৷ সব বাহির থেকে আসে৷ ইয়াবা, ফেনসিডিল পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে আসে৷ এটা নিয়ে আমরা কিছুটা সমস্যায় আছি৷ কক্সবাজার একটা মারাত্মক রুট৷ বর্ডারের জেলাগুলোও রুট৷ এই রুটগুলো বন্ধ করতে সরকার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে৷’’

‘‘তবে মাদক একেবারে নির্মূল করা সম্ভব না৷ পৃথিবীর কোনো দেশই মাদক একেবারে নির্মূল করতে পারেনি৷ আমরা এটাকে সহনীয় মাত্রায় আনতে চাচ্ছি৷’’

কত শতাংশে নামিয়ে আনলে সেটাকে ‘সহনীয় পর্যায়’ বলা হয়- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কাছে মাদকগ্রহীতা ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে একটা ডাটাবেজ তৈরির চেষ্টা করছি৷ সহনীয় পর্যায়ে আনা মানে আমাদেরকে তো একটা বেজলাইন ঠিক করতে হবে৷ সেই মাদকাসক্ত ব্যক্তির বেজলাইন ধরতে পারলে সেটা থেকে নিম্নমুখী করাই হবে আমাদের চ্যালেঞ্জ৷’’

তিনি বলেন, ‘‘আমরা ইউনিয়নকে একটা ইউনিট ধরতে চাই৷ সর্বস্তরের মানুষকে নিয়ে মোটিভেশনাল কাজ করবো৷ স্কুল, মাদ্রাসা, রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি, কৃষক, মজুর, ইউনিয়ন পরিষদ, এনজিও, সোশাল অ্যাক্টিভিস্ট, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব- সবাইকে নিয়ে আমরা কাজ করবো৷ জেলা-উপজেলা থেকে সম্ভব হলে ওয়ার্ড পর্যন্ত আমরা যেতে চাই৷ মাদকের বিরুদ্ধে সব সময় জনমত রয়েছে৷ আমাদের কাজের মাধ্যমে এই জনমত সক্রিয় হবে৷ সরকার অনুমোদন করলে সেটা মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন শুরু করবো৷

‘‘অপারেশনাল কাজ আমাদের চলছে৷ পুলিশ, র‌্যাব সব সময় অভিযান পরিচালনা করছে৷ বিজিবি এবং আমরাও করছি৷’’

তিনি বলেন, ‘‘ঢাকায় আমাদের নিরাময় কেন্দ্র রয়েছে৷ রাজশাহী, খুলনা, চট্টগ্রামেও আছে৷ ৩৬৬ টি বেসরকারি নিরাময় কেন্দ্রকে আমরা অনুমোদন দিয়েছি৷ তারা ট্রিটমেন্ট দিচ্ছে৷ এখানে প্রশিক্ষণের দরকার আছে৷ তাদেরকে আমরা প্রশিক্ষণ দিচ্ছি৷ ৬৪ জেলায় সরকারিভাবে আমরা নিরাময় কেন্দ্র করতে চাই৷’’

‘জনগণ না চাইলে ডোপ টেস্ট হবে না’

আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির আহ্বায়ক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘‘ভবিষ্যতে যারা চাকরি পাবে, তারা যদি মাদকাসক্ত হয়, সেটা ঠিক হবে না৷ তাই চাকরিতে যোগ দেয়ার পূর্বে সবার ডোপ টেস্ট করার কথা আমরা বলেছি৷ চাকরিতে যোগ দেয়ার পূর্বে মেডিক্যাল টেস্ট করতে হয়, তারই অংশ হিসাবে এই টেস্ট৷’’

‘‘একজন বিসিএস কর্মকর্তা বা অন্য লেভেলে হোক বা কেউ যদি ছাত্র জীবনেই নেশাগ্রস্ত থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে আরো বেশি ঝুঁকি তৈরি হয়৷ তাই এখন থেকে কেউ চাকরিতে যোগ দিতে হলে বাধ্যতামূলক ডোপ টেস্ট করবে, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি দিতে হলেও ডোপ টেস্ট করবে৷’’

‘‘আমাদের এটার উদ্দেশ্য হচ্ছে, কেউ যদি জানে নেশাগ্রস্ত হলে তাকে সমস্যায় পড়তে হবে, তখন সে এটা থেকে দূরে থাকবে৷ কারণ, কেউ যদি একবার নেশাগ্রস্ত হয়, তাকে সেখান থেকে ফেরানো কঠিন৷’’

ডোপ টেস্ট করে কাউকে শিক্ষা বা চাকরি থেকে বাদ দিয়ে দিলে তিনি আরো বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘যুক্তি সব দিকেই আছে৷ জনমত যদি এমন হয় যে, ডোপ টেস্ট করা হবে না৷ তাহলে হবে না৷ সরকার তো জনমতের বাইরে গিয়ে নয়৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান