1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কোভিড মোকাবিলায় উদ্যোগ

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১৩ মে ২০২১

কোভিড সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী৷ হাসপাতালে শয্যা, অক্সিজেন থেকে করোনা পরীক্ষা, সব পরিকাঠামোয় প্রবল চাপ৷ রাজ্য সরকারের সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনও তৎপর হচ্ছে৷ কিন্তু তা কি প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট?

https://p.dw.com/p/3tLQb
Indien Kolkatta | Sauerstoffflaschen
ছবি: PRABHAKAR/DW

পশ্চিমবঙ্গে দৈনিক করোনা সংক্রমণ ২০ হাজার পার করে গিয়েছে৷ মৃতের সংখ্যা অনেকদিনই একশোর উপরে৷ বুধবার সন্ধ্যায় দেওয়া স্বাস্থ্য দফতরের হিসেব অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ২০ হাজার ৩৭৭ জন৷ মৃতের সংখ্যা ১৩৫৷ সংক্রামিতের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে অক্সিজেনের চাহিদা৷ কোভিড নির্ণয়ের আরটিপিসিআর পরীক্ষা থেকে হাসপাতালে শয্যা, সর্বত্র সঙ্কটের ছবি মোটামুটি একই৷ গবেষকদের দাবি, দ্বিতীয় ঢেউয়ে ৭ মে ভারত সংক্রমণের শিখর ছুঁয়েছে৷ এর পর দৈনিক সংক্রমণ কমলেও সব রাজ্যে ছবিটা এক হবে না৷ এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন উদ্যোগী হচ্ছে৷

দুয়ারে পুরসভা

নির্বাচনের আগে দুয়ারে সরকার প্রকল্প শুরু করেছিল রাজ্য সরকার৷ সেই আদলেই কলকাতা পুরসভা শুরু করছে দুয়ারে পুরসভা কর্মসূচি৷ এই কর্মসূচিতে পুরকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে লালারসের নমুনা সংগ্রহ করবেন বিনামূল্যে৷ এর পাশাপাশি পুরসভা আগে থেকেই স্যানিটাইজেশনের কাজ চালাচ্ছে৷

উপসর্গ থাকলেও সঠিক সময়ে পরীক্ষা করাতে পারছেন না অনেকে৷ কিংবা নমুনা দেওয়ার পরেও রিপোর্ট মিলতে দেরি হয়ে যাচ্ছে৷ তাই পুরসভা সরাসরি নমুনা সংগ্রহের কাজ শুরু করছে৷ একটি নির্দিষ্ট নম্বরে ফোন করে নাম, ঠিকানা জানালেই পুরসভার কর্মীরা নমুনা সংগ্রহে যাবেন৷ এমনকি রিপোর্ট ঘরে বসেই হাতে পেয়ে যাবেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি৷ রিপোর্ট অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা অর্থাৎ প্রয়োজনে সেফ হোমে রাখা বা কোয়ারান্টিনের দায়িত্ব পুরসভাই নেবে৷ দরকার হলে হাসপাতালেও পাঠাবে৷ এই উদ্যোগের প্রশংসা করে ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের সম্পাদক ডাঃ কৌশিক চাকি বলেন, ‘‘আমাদের রাজ্যে এখন ৬০-৬৫ হাজার পরীক্ষা হচ্ছে৷ ৮-৯ কোটি জনসংখ্যার রাজ্যে এই সংখ্যা যথেষ্ট কম৷ সরকার যদি টেস্ট করাতে মানুষের কাছে পৌঁছয়, তাহলে পরীক্ষার সংখ্যা বাড়বে৷ রোগী চিহ্নিত হলে সংক্রমণের আশঙ্কা কমবে৷''

ডা. কৌশিক চাকি

তবে এই উদ্যোগের সাফল্য নিয়ে প্রশ্নও আছে৷ সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের ডাঃ সজল বিশ্বাসের বক্তব্য, ‘‘কোটি কোটি মানুষের কাছে পৌঁছতে যে পরিকাঠামো দরকার, তা কি আছে? দু-একটা বাড়ি গিয়ে পরীক্ষা করে সংবাদমাধ্যমে প্রচার করা যায়৷ কিন্তু দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে সেই চাহিদা মেটানো যায় না৷ এটা অবাস্তব ব্যাপার৷''

সাধারণ মানুষের অভিজ্ঞতা কী? দমদমের বাসিন্দা স্বপ্না বিশ্বাস বলেন, ‘‘দুয়ারে পুরসভা প্রকল্পে যে নম্বরে ফোন করতে বলা হয়েছিল, তাতে দু-বার ফোন করে কাউকে পাইনি৷ অবশেষে বেসরকারি ডায়গনস্টিকে গিয়ে পরীক্ষা করালাম৷''

দুয়ারে অক্সিজেন

শুধু প্রশাসনিক স্তর নয়, অনেক সংগঠন অতিমারিতে আপনজনের ভূমিকা নিচ্ছে৷ বাম যুবদের সংগঠন রেড ভলান্টিয়ার্স কাজ করছে রাজ্য জুড়ে৷ এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে ছোট ছোট উদ্যোগ৷ আসানসোলের পলাশডিহা, সরাগডিহা গ্রামে দুয়ারে দুয়ারে অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছেন এক ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অধ্যাপক চন্দ্রশেখর কুণ্ডু ও তার বন্ধুরা৷

সমীর ঘোষ

এবার দুর্গোৎসব আয়োজনের জন্য পরিচিত কলকাতার চেতলা অগ্রণী ক্লাবের সভ্যরা ‘দুয়ারে অক্সিজেন' নিয়ে পথে নেমেছেন৷ তারা চেতলা অঞ্চলের কোভিড রোগীদের বাড়ি বাড়ি বিনামূল্যে পৌঁছে দিচ্ছেন অক্সিজেন কনসেনট্রেটর৷ ক্লাবের সভাপতি, মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের উদ্যোগে আপাতত ২০টি অক্সিজেন কনসেনট্রেটর জোগাড় করা হয়েছে৷ অক্সিজেন সিলিন্ডারের বিকল্প হিসেবে এই যন্ত্র পরিবেশ থেকে অক্সিজেন সংগ্রহ করে শ্বাসবায়ুর চাহিদা মেটায়৷ একটি বাড়িতে কোনও রোগীর জন্য ১০ দিন অবধি একটি কনসেনট্রেটর রাখা যেতে পারে৷ তারপর তা ক্লাবকে ফেরৎ দিতে হবে৷

ক্লাবের সদস্য সমীর ঘোষ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রচুর ফোন আসছে৷ তবে চেতলার বাইরে আমরা এই পরিষেবা এখনই দিতে পারছি না৷ অক্সিজেন লেভেল ৮৫-৯৪ থাকলে কনসেনট্রেটর দিচ্ছি৷ তার নীচে নামলে হাসপাতালে যেতে হবে৷''

এই অতিমারিতে মানুষ আতঙ্কের বশে ওষুধ, অক্সিজেন মজুত করছে৷ যার প্রয়োজন, তাকে দেওয়া হচ্ছে৷ সমীর বলেন, ‘‘নিছক লাগতে পারে বলে অনেকে অক্সিজন চাইছেন৷ আমাদের টেকনিশিয়ানরা যন্ত্র নিয়ে যাওয়ার পরে অক্সিজেন লেভেল মাপতে গিয়ে সেটা ধরাও পড়ছে৷''