1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কোলনের আর্কাইভ ভবন ভেঙে পড়ার এক বছর

৩ মার্চ ২০১০

ঠিক এক বছর আগে তেসরা মার্চ তারিখে পাতাল রেলের এক নতুন লাইনের কাজ চলার সময় ভেঙে পড়ে এ শহরের ঐতিহাসিক আর্কাইভ৷ নিহত হন দুই ব্যক্তি৷ কিন্তু ধ্বংস হয়ে গেছে আর্কাইভের বেশ কিছু মহামূল্য নথিপত্র৷

https://p.dw.com/p/MIp2
ধ্বংস হয়ে গেছে বেশ কিছু মহামূল্য নথিপত্রছবি: AP

কী ছিলনা কোলনের এই আর্কাইভে ? ছিল নোবেলজয়ী জার্মান লেখক প্রয়াত হাইনরিশ ব্যোয়েল-এর বহু পান্ডুলিপি, চিঠিপত্র, মধ্যযুগের নামী জার্মান দার্শনিক ও ধর্মতাত্ত্বিক আলব্যার্টুস মাগনুসের হাতের লেখা, ষোড়শ ও সপ্তদশ শতকের বহু লেখা, সংগীতকার রিশার্ড ভাগনারের বিখ্যাত অপেরার মহামূল্য স্বরলিপি, কোলন শহরের ইতিহাসঋদ্ধ সব নথিপত্র দলিল দস্তাবেজ৷ আর্কাইভ ভবন ভেঙে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে গেছে বহু লিপি, বহু নথি৷ ভূগর্ভ থেকে বেশ কিছু জিনিস উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে৷ তবে এ কাজ এখনও বহু দিন ধরে চলবে ধরে নেয়া যায়৷ ইতিমধ্যে নির্মাণকাজে অনিয়ম, গাফিলতি আর ব্যর্থতার নানা তথ্য ফাঁস হয়ে গেছে৷ সক্রিয় হয়েছে আইন৷

Jahresrückblick 2009 Einsturz Stadtarchiv in Koeln
আর্কাইভটির ধ্বংসস্তুপছবি: AP

কোলনের এই ঐতিহাসিক আর্কাইভের পরিচালিকা বেটিনা শ্মিট-চাইয়া স্পষ্ট স্মরণ করতে পারেন ২০০৯ সালের তেসরা মার্চ-এর সেই দিনটি৷ একজন অতিথি নিয়ে তিনি বসে ছিলেন তাঁর অফিস ঘরে৷ স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘‘হঠাৎ কানে এল যেন হৈহল্লার শব্দ৷ দ্রুত আমার রুমে ঢুকলেন বাড়ির টেকনিশিয়ান৷ সাঙ্ঘাতিক উত্তেজিত দেখাচ্ছিল তাঁকে৷ মুখটা একেবারে লাল৷ বলতে গেলে গোটা ফ্লোর জুড়ে দৌড়াচ্ছিলেন তিনি৷ আবার ছুটে গেলেন তিনি পরের রুমে৷ আমিও তাঁর পিছন পিছন কিছুটা দৌড়ে গেলাম রিডিং রুম পর্যন্ত৷ রুমের দরজা টেনে খুলে ফেললাম৷ চিৎকার করে বললাম, বেরিয়ে এস, বেরিয়ে এস সবাই৷ আর তারপর, আমি নিজেও দৌড়ে বাইরে বেরিয়ে আসি৷''

বেলা তখন ১টা বেজে ৩৮ মিনিট৷ এর ঠিক পাঁচ মিনিট আগে নির্মাণকর্মীরা পাতাল রেলের গুহায় কংক্রিটের দেয়ালের দিকে মাটি সরে আসার চিহ্ন দেখতে পান৷ তাঁরা দৌড়ে আর্কাইভ ভবন এবং আশপাশের বাড়িগুলোতে গিয়ে সবাইকে বেরিয়ে আসতে বলেন৷ আর্কাইভের ২১ জন কর্মী আর দর্শনার্থীরা ভবন ভেঙে পড়ার অল্প আগে নিরাপদ জায়গায় সরে যেতে সক্ষম হন৷ তাঁরা দাঁড়িয়েছিলেন পাশের একটি হাইস্কুলের খেলার জায়গায়৷ মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তাঁদের চোখের সামনে ধসে পড়ে বিশাল এই আর্কাইভ৷ এখানেই সংরক্ষিত ছিল কোলনের হাজার বছরের ইতিহাস, ৬৫ হাজার দলিল, এক লক্ষ চার হাজার ম্যাপ, পাঁচ লাখ ফটো এবং বহু লেখককের পান্ডুলিপি৷

ইতিমধ্যে অবশ্য আর্কাইভের জিনিসপত্রের ৮৫ শতাংশ উদ্ধার করা হয়েছে৷ দশ শতাংশ এখনও ধ্বংসস্তূপের নীচে৷ আশঙ্কা, পাঁচ শতাংশ আর কখনো হয়ত উদ্ধার করা সম্ভব হবেনা৷ এপ্রিল মাসে বিশেষ ধরণের এক ড্রেজার ব্যবহার করে দশ মিটার গভীরে খোঁড়াখুঁড়ি করে উদ্ধার করা হবে পড়ে থাকা আরও নথিপত্র৷

Jahrestag Einsturz Kölner Stadtarchiv Flash-Galerie
একটি ডকুমেন্ট উদ্ধারের চেষ্টা চলছেছবি: AP

লেখক হাইনরিশ ব্যোয়েল-এর পুত্র রেনে ব্যোয়েল খুবই ক্ষুব্ধ৷ ভেঙে পড়ার মাত্র তিন সপ্তাহ আগে আর্কাইভকে দেয়া হয়েছিল ব্যোয়েল-এর ৪০০ পান্ডুলিপি, কয়েক হাজার চিঠি, গোটা পরিবারের ইতিহাস সম্বলিত ৬০০০ থেকে ৮০০০-এর মত ফোটো আর নথিপত্র৷ কিন্তু এর কতটা হারিয়ে গেছে তা তিনি এখনও জানেননা৷ রেনে ব্যোয়েল শুধু এই ভেবে খুশি যে তাঁর বাবার পান্ডুলিপির বড় অংশই রাখা আছে হাইনরিশ ব্যোয়েল আর্কাইভে৷

প্রতিবেদক: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

সম্পাদনা: আবদুস সাত্তার