1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কোহিনূর কি ফিরবে ভারতে?

অনিল চট্টোপাধ্যায়, নতুন দিল্লি৩০ এপ্রিল ২০১৬

অধিকাংশ মানুষই মনে করেন, কোহিনূর হীরা ভারতে ফিরিয়ে আনা সরকারের পক্ষে আদৌ সম্ভব হবে না, বিশেষ করে আইনি পথে৷ কারণ ভারত থেকে যেভাবে প্রাচীন সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যময় নিদর্শনগুলি পাচার হয়ে যাচ্ছে, তা আটকাতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার৷

https://p.dw.com/p/1Iebp
হীরা
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Berg

ভারতের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক নিদর্শন ১০৮ ক্যারেটের কোহিনূর হীরা আজ থেকে প্রায় ১৬৭ বছর আগে ব্রিটিশদের হাতে চলে যায়৷ সেই কোহিনূর ফিরিয়ে আনাটা যে সহজ নয়, সরকার তা ভালোভাবেই উপলব্ধি করতে পেরেছে৷ তাই এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার বারংবার তার অবস্থান পাল্টেছে৷ সম্প্রতি এক জনস্বার্থ মামলায় অভিযোগ তোলা হয় যে, মোদী সরকার কোহিনূর ফিরিয়ে আনতে আগ্রহী নয়৷ শুনানিকালে সুপ্রিম কোর্ট ইংল্যান্ডের রানির মুকুটে বসানে কোহিনূর হীরা ভারতে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সরকারের অবস্থান সুস্পষ্টভাবে জানতে চায়৷ তখন সলিসিটার জেনারেল আদালতকে জানান, কোহিনূর ফেরত আনার চেষ্টা করা ঠিক নয়৷ কারণ ব্রিটিশরা তা চুরি করে বা জোর করে ছিনিয়ে নিয়ে যায়নি৷ উপহার হিসেবে পেয়েছিল৷ শুধু মোদী সরকারই নয়, অতীতে অন্য সরকারও এ বিষয়ে নানা যুক্তি দেখিয়েছেন৷ এর প্রেক্ষিতে, সর্বোচ্চ আদালত সরকারকে ছয় সপ্তাহ সময় দিয়েছে নিজেদের চূড়ান্ত অবস্থান জানাতে৷ কেননা জনস্বার্থ আর্জিটি যদি খারিজ হয়ে যায়, তাহলে আইনের সব পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে, তাও আবার চিরদিনের জন্য৷

ইংল্যান্ডের রানি ভিক্টোরিয়া
ইংল্যান্ডের রানির মুকুটে বসানে কোহিনূর হীরা

বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ডক্টর অমল মুখোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘দেখুন এটা ভারতের আমজনতার আবেগের প্রশ্ন, আইনের প্রশ্ন নয়৷ এই আবেগের ওপর নির্ভর করে সরকার যদি তা ফিরিয়ে আনতে পারেন, তো ভালো কথা৷ কিন্তু আইন বা সাংবিধানিক পথে তা সম্ভব হবে বলে আমি মনে করি না৷ গত ৫০০ বছরে বিদেশি শক্তিগুলোর হাতে ভারত লুণ্ঠিত হয়েছে বহুবার, বহু সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক নিদর্শন দেশ থেকে চলে গেছে৷ কোহিনূরও একটা ঐতিহাসিক পরিস্থিতিতে চলে গেছে ব্রিটেনে৷ তাই এটা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা বৃথা৷ সরকার এখন জনসাধারণের আবেগকে কাজে লাগিয়ে সস্তা জনপ্রিয়তা কুড়াতে চাইছে মাত্র৷ তবে হ্যাঁ, সুপ্রিম কোর্টের রায় যদি অন্যকথা বলে সেক্ষেত্রে অবশ্য তা মেনে নিতে হবে''৷

অন্যদিকে শিখ গুরুদোয়ারা প্রবন্ধক কমিটি কোহিনূর শিখদের হাতে ফিরিয়ে দেবার দাবি জানিয়ে বলেছে, শিখরাই এর বৈধ উত্তরাধিকারী৷ কোহিনূর চুরি যায়নি বা ছিনিয়ে নেওয়া হয়নি, শিখ মহারাজা রণজিত সিং উপহার হিসেবে তৎকালীন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে দিয়েছিলেন৷ কেন্দ্রীয় সরকারের এই বক্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করে শিখ গুরুদোয়ারা প্রবন্ধক কমিটি বলেছে, এটা ঐতিহাসিক তথ্যের অপব্যাখ্যা৷ সরকারের উচিত এই অবস্থান সংশোধন করা৷ শিখ মহারাজা যদি দিয়েও থাকেন, তাহলে দেখা উচিত যে কী পরিস্থিতিতে তা দেওয়া হয়েছিল৷ দেখা উচিত এমনটা হয়েছিল চাপে পড়ে কিনা৷ উল্লেখ্য, লর্ড ডালহৌসির আমলে ইঙ্গ-শিখ যুদ্ধে শিখরা পরাজিত হবার পর শিখ মহারাজা রনজিত সিং-এর কাছ থেকে কোহিনূর কার্যত ছিনিয়ে নিয়ে ডালহৌসি উপহার দেন রানি ভিক্টোরিয়াকে৷ শুধু কি কোহিনূর? লাহোর থেকে ময়ুর সিংহাসনটিও নিয়ে যায় ব্রিটিশরা৷ ঐতিহাসিকদের মতে, কোহিনূরের মতো বহু দুষ্প্রাপ্য নিদর্শন হাতবদল হয়েছে বারবার৷ অন্ধ্রপ্রদেশের এক খনি থেকে তোলার পর তা কাকতীয় শাসকদের হাতে ছিল৷ তারপর মুঘল, আফগান, শিখ সাম্রাজ্য থেকে হাতবদল হয়ে চলে যায় ব্রিটিশদের হাতে৷

কোহিনূর প্রত্যর্পণে ব্রিটিশ সরকার যে রাজি নয়, সেকথা স্পষ্টভাবে অনেকবার জানিয়ে দিয়েছে ব্রিটেন৷ সর্বশেষ ২০১০ সালে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামারন দিল্লি সফরে এসে কোহিনূর প্রত্যর্পণ করতে অস্বীকার করেন৷ মুখ বাঁচাতে ভারত সরকার তখন যুক্তি দেয় যে, কোহিনূরের মতো সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ইউনেস্কো কনভেনশন ১৯৭২-এর মধ্যে পড়ে না৷ কাজেই তা ফেরাতে জোর করা যায় না৷ জার্মানি কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম৷ ২০০০ সালে ভারতের জম্মু-কাশ্মীর থেকে নবম শতাব্দীর একটি প্রাচীন দুর্গা বিগ্রহ পাচার হয়েছিল জার্মানিতে৷ কিন্তু জার্মান সরকার অন্য দেশের সাংস্কৃতিক সম্পদ আটকে না রেখে বিনা ক্ষতিপূরণে গত বছর তা ভারতকে ফিরিয়ে দেয়৷ আসল কথা হলো সদিচ্ছা ও নৈতিক মূল্যবোধ৷ তাই আইনই শেষকথা নয়৷

ভারতের কি কোহিনূর ফিরে পাওয়া যুক্তিসঙ্গত? আপনার কী মনে হয়? লিখুন নীচের ঘরে৷