1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ক্যাপিটল: পুলিশের দ্বিচারিতা ও বর্ণবাদ

১০ জানুয়ারি ২০২১

অভিযোগ উঠল মার্কিন পুলিশের বিরুদ্ধে। দাঙ্গাকারী শ্বেতাঙ্গ বলে ক্যাপিটলে তারা কড়া ব্যবস্থা নেয়নি।

https://p.dw.com/p/3nfLd
ক্যাপিটলে শ্বেতাঙ্গ বিক্ষোভকারীদের প্রতি পুলিশ নরম মনোভাব দেখিয়েছে। ছবি: Tasos Katopodis/Getty Images

ওয়াশিংটন ডিসি-তে দাঙ্গাকারীরা অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল বদল করতে পারেনি। হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভ ও সেনেট দুই জায়গাতেই জো বাইডেন ও কমলা হ্যারিসকে জয়ী বলে ঘোষণা করা হয়েছে। তাই পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ার ক্ষেত্রে তাঁদের আর কোনো বাধা থাকল না। কিন্তু তার আগে যে ঘটনা ঘটল, তা অ্যামেরিকার ইতিহাসে 'কালো অধ্যায়' বলে চিহ্নিত হবে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উস্কানিতে মূলত শ্বেতাঙ্গ বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে হঠিয়ে ক্যাপিটলে ঢুকে পড়ে। তারা পতাকা নিয়ে সেনেটের হলঘরে ঘুরে বেড়ায়, ছবি তোলে, স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি সহ অন্য নেতাদের জিনিস চুরি করে।

ক্যাপিটলে ঝড় যখন থামে, ততক্ষণে চারজন মারা গেছেন। তার মধ্যে একজন নারীকে গুলি করা হয়েছে, তিনজন 'মেডিক্যাল এমারজেন্সি'র কারণে মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন মেট্রোপলিটান পুলিশ প্রধান রবার্ট কন্টি। তিনি জানিয়েছেন, ৫২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কারণ, সন্ধ্যা ছয়টায় জারি হওয়া কার্ফিউ তাঁরা মানেননি।

কৃষ্ণাঙ্গ বনাম শ্বেতাঙ্গ বিক্ষোভকারী

ক্যাপিটলের ঘটনার পর অ্যামেরিকার মানুষের সামনে একটা বিষয় পরিষ্কার হয়ে গেছে, কৃঙ্গাঙ্গ ও শ্বেতাঙ্গ বিক্ষোভকারীদের বিক্ষোভের মোকাবিলা সমানভাবে করেনি পুলিশ। ২০২০-র মে মাসে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর আফ্রিকান-অ্যামেরিকান মানুষরা মিনেপোলিসে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। সেই 'ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার' বিক্ষোভ হোয়াইট হাউসের সামনেও হয়।

২০২০-র ১ জুন পরিস্থিতি খারাপ হয়।  ট্রাম্প যাতে কাছের চার্চে যেতে পারেন, সে জন্য পুলিশ শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের উপর কাঁদানে গ্যাসের মতো কেমিক্যাল ব্যবহার করে এবং বলপ্রয়োগ করে তাদের সরিয়ে দেয়। ট্রাম্পের ফটো অপ পর্ব শেষ হয়।

Washington I Sturm gegen U.S. Capitol
সেনেটের ভিতর ঢুকে পড়েন কিছু বিক্ষোভকারী।ছবি: Win McNamee/Getty Images

ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার-এর টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে ক্যাপিটলের ঘটনার পর একটা গুরুত্বপূর্ণ টুইট করা হয়। সেখানে বলা হয়েছে, যখন কৃষ্ণাঙ্গ মানুষেরা নিজেদের জীবন বাঁচানোর জন্য প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন, তখন ন্যাশনাল গার্ড, অ্যাসল্ট রাইফেলধারী পুলিশ হেলমেট পরে কাঁদানে গ্যাস নিয়ে হাজির হয়ে যায়। কিন্তু যখন শ্বেতাঙ্গ মানুষরা অভ্যুত্থানের চেষ্টা করে, তখন নিরাপত্তা বাহিনী নিষ্ক্রিয় ও ক্ষমতাহীন হয়ে যায় এবং হস্তক্ষেপ করে না।

আফ্রিকান-অ্যামেরিকান লেখক মেলভিন এডোয়ার্ডস জানিয়েছেন, যেভাবে ক্যাপিটল হিলের ঘটনা ঘটেছে, তা দেখে তিনি অবাক হয়ে গেছেন। তাঁর মতে, অন্যত্র যেভাবে শক্তিপ্রয়োগ করা হয়, আর ক্যাপিটলে যা হলো তার মধ্যে বিস্তর ফারাক আছে।

তিনি ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''পুলিশ আগে থেকেই ধরে নেয়, কিছু মানুষ অন্যদের থেকে বেশি সহিংস। এখনো ভাবা হয়, কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষরা শ্বেতাঙ্গ পুরুষদের থেকে অনেক বেশি ভয়ঙ্কর। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক ভাবনা।''

'যদি কৃষ্ণাঙ্গরা ক্যাপিটলে ঢুকতেন'

ঘটনা হলো, পুলিশ খুব বেশি বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেনি। তাঁরা বেআইনিভাবে ক্যাপিটলে ঢুকেছিলেন এবং হাঙ্গামা করেছেন, জিনিস ভেঙেছেন, রাজনীতিকরা প্রাণ বাঁচাতে টেবিলের নীচে আশ্রয় নিয়েছেন, তাও বিক্ষোভকারীরা বেঁচে গেছেন। এটা দেখে অনেকে অবাক হয়েছেন, অনেকের বিশ্বাসই হচ্ছে না।

বাইডেন যাঁকে পরিবহনমন্ত্রী করছেন সেই পিট বুটাজাজের স্বামী চাস্টেন বুটাজাজ টুইট করে বলেছেন, ''শ্বেতাঙ্গরা ক্যাপিটলে সহিংসতা করল, আর তাদের বাড়ি যেতে দেয়া হলো।''

ন্যাশনাল বাস্কেটবল অ্যাসোসিয়েশনের প্রচুর প্লেয়ার ও কোচও ক্যাপিটলের ঘটনা নিয়ে মুখ খুলেছেন। কোচ ডক রিভারস বলেছেন, ''যদি কৃষ্ণাঙ্গ বিক্ষোভকারীরা ক্যাপিটলে ঢুকতেন তো কী হতো ভাবতে পারছেন?'' তিনি বলেছেন, ওখানে দাঙ্গা হলো, কিন্তু কাউকে মারা হলো না, পুলিশি কুকুরদের কাজে লাগানো হলো না। পুলিশ এসকর্ট করে তাদের ক্যাপিটলের বাইরে বের করে দিল। এটাই বুঝিয়ে দিচ্ছে, শান্তিপূর্ণভাবেও বিক্ষোভকারীদের ফেরত পাঠানো যায়। অনেক দিক থেকেই আমাদের কাছে এটা খুবই দুঃখের।''

কার্লা ব্লেইকার/জিএইচ