1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘ক্রসফায়ারের মাধ্যমে সমাধান সম্ভব নয়’

সমীর কুমার দে ঢাকা
১৯ মে ২০১৮

বাংলাদেশে ঘোষণা দিয়ে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানে নেমেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী৷ এই অভিযানের অগ্রভাগে রয়েছে ব়্যাব৷ এই অভিযানে গত ৫ দিনে ‘ক্রসফায়ারে’ মারা গেছেন অন্তত ৯ জন মানুষ৷

https://p.dw.com/p/2y0GC
ছবি: Getty Images/AFP

র‌্যাব বা পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ‘ক্রসফায়ারে' নিহত প্রত্যেকেই মাদক ব্যবসায়ী৷ মাদক বহনের সময় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে তারা মারা গেছেন৷ তবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর এই কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধ' বা ‘ক্রসফায়ার' নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে৷ মানবাধিকার কর্মীরা বিভিন্ন ‘ক্রসফায়ারের' নিরপেক্ষ তদন্ত করতে বলছেন বহুদিন ধরে৷ তাদের ভাষ্য, যথাযথ আইনের মাধ্যমেই অপরাধীদের বিচার হতে হবে৷

Rafoqul Islam 19.05.18.mp3 - MP3-Stereo

মানবাধিকার কর্মী, পুলিশের সাবেক প্রধানসহ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ক্রসফায়ারের মাধ্যমে মাদক সমস্যার সমাধান মিলবে না৷ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর যথাযথ অভিযান এবং আইনের সঠিক প্রয়োগ ও জনগণকে সচেতন করে সমস্যা কমিয়ে আনা সম্ভব৷ 

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নুরুল হুদা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বন্দুকযুদ্ধ কোনো সমাধান হতে পারে না৷ এটা একটা পথ, যেটা দিয়ে দীর্ঘমেয়াদী সমাধান সম্ভব নয়৷ মাদক ব্যবসা যারা করে, তারা তো ভয়ঙ্কর লোক৷ সে ক্ষেত্রে অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে যদি গোলাগুলিতে কেউ মারা যায়, সেটা ঠিক আছে৷ কারা ব্যবসা করছে, কারা এদের মদদ দিচ্ছে, এর মূল খুঁজে বের করতে হবে৷ তাদের আইনের আওতায় এনে বিচারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের পথ খুঁজতে হবে৷''

প্রসঙ্গত, মাদক বিরোধী অভিযানে সর্বশেষ শুক্রবার রাতে যশোরে বন্দুকযুদ্ধে ৩ জন মারা গেছেন৷ ব়্যাব-৬ এর প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি খন্দকার রফিকুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বেনাপোল থেকে তারা একটি মোটরসাইকেলে করে অভয়নগরের বাগদাহ গ্রামে যাচ্ছিল৷ এ সময় ব়্যাবের চেকপোষ্টে তাদের চ্যালেঞ্জ করলে তারা গুলি ছোড়ে৷ র‌্যাবও পাল্টা গুলি ছোড়ে৷ এতে তিন জন মারা যান৷''

Nur Khan Liton 19.05.18.mp3 - MP3-Stereo

তিনি বলেন, ‘‘এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি পালসার মোটরসাইকেল, দুইটি পিস্তল, এক বস্তা ফেনসিডিল, একটি চাইনিজ কুড়াল ও গুলিভর্তি একটি ম্যাগজিন উদ্ধার করা হয়েছে৷ নিহত তিন জনই মাদক ব্যবসায়ী৷''

তবে নওয়াপাড়া পৌর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিম শেখ স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেছেন, ‘‘তার বড় ভাই সহ তিনজনকে ধরে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে৷ বৃহস্পতিবার তাদের যার যার বাড়ি থেকে সাদা পোশাকে ব়্যাব পরিচয়ে ধরে নেওয়া হয়৷ এরপর কোথাও তাদের খোঁজ মেলেনি৷ শনিবার সকালে তাদের মৃত্যুর খবর পাই৷ আমরা এই হত্যার সঠিক তদন্ত চাই৷'' 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল শনিবার রাজধানীতে পূজা উদযাপন পরিষদের সম্মেলনে শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘সরকার মাদকের বিষয়ে ‘জিরো টলারেন্স' নীতি অবলম্বন করেছে৷''

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে মাদকসেবী ও ব্যবসায়ী নিহত হওয়ার ঘটনার বিষয়ে প্রশ্ন করলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, ‘‘এসব ঘটনার তদন্ত করা হবে৷ তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে৷''

উল্লেখ্য, গত ৩ মে ব়্যাবের ১৪ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে ব়্যাব কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন৷ এরপর থেকেই ব়্যাব মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান শুরু করে৷ ১৮ মে পর্যন্ত দেড় হাজার মাদকসেবীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে৷ তবে মূল অভিযান শুরু হয়েছে গত মঙ্গলবার থেকে৷

Nurul Huda 19.05.18.mp3 - MP3-Stereo

এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে' এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন৷ ব়্যাবের দাবি, নিহত ব্যক্তি একজন শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী৷ এর আগে সোমবার রাতে ব়্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ ও কুষ্টিয়ায় দুই ব্যক্তি, বুধবার রাজশাহীতে এক ব্যক্তি ও বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রামে দুই ব্যক্তি নিহত হন৷ সর্বশেষ যশোরে বন্দুকযুদ্ধে মারা গেলেন তিন জন৷

পুলিশ সদরের এক হিসেবে দেখা গেছে, গত কয়েক বছরে দেশে মাদক সংক্রান্ত মামলার সংখ্যা বেড়েছে৷ ২০১৭ সালে মাদক মামলা হয়েছে ৯৮ হাজার ৯৮৪টি৷ ২০১৬ সালে ১৮ হাজার ২৮৭টি, ২০১৫ সালে ৪৬ হাজার ৫১২টি, ২০১৪ সালে ৪২ হাজার ১৯০টি, ২০১৩ সালে ২৯ হাজার ৩৪টি৷ পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে প্রতি বছরই মামলা বাড়ছে৷

‘ক্রসফায়ারে' কি মাদক সমস্যার সমাধান সম্ভব? এমন প্রশ্নের জবাবে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খান লিটন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এভাবে সমাধান মিলবে না৷ সরকার বা আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সব সময়ই শর্ট-কার্ট পদ্ধতিতে সমাধান চায়৷ যেটা সম্ভব নয়৷ বরং একটা অপরাধ নির্মূল করতে গিয়ে আরেকটা অপরাধের জন্ম দিচ্ছে৷ ফলে মূল সমস্যার সমাধান হচ্ছে না৷ আমি মনে করি, আইনের সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমেই এর সমাধান সম্ভব৷ উৎসগুলো খুঁজে বের করে সমাধান করতে হবে৷''