1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ক্ষুদ্রঋণ এবং ভারতের মহিলারা

৪ ফেব্রুয়ারি ২০১০

যাদের উপার্জন সীমিত সেই স্বল্প আয়ের মধ্যেই তাদের চলতে হয়, চালাতে হয় সংসার৷ ভারতীয় উপমহাদেশে সাধারণত সংসারে অর্থ উপার্জনের দায়িত্ব থাকে একজন পুরুষের হাতে এবং সেই অর্থ দিয়ে সংসার চালানোর দায়িত্ব পালন করে নারী

https://p.dw.com/p/Lsl4
রাজস্থানের দরিদ্র মহিলারা সংঘবদ্ধ হয়েছেনছবি: DW

রাজস্থানের ডোলি কা বাস গ্রামের মহিলারা দেখিয়ে দিয়েছেন উপার্জিত অর্থ সঠিকভাবে ব্যয় করার পথ৷

ভারতের রাজস্থানের ডোলি কা বাস গ্রামের প্রায় ২০ জন মহিলা মিলে ঠিক করেছেন যেভাবেই হোক সীমিত আয়ের মধ্যে থেকেই জীবনযাত্রার ধরণ পাল্টাতে হবে, উন্নত করতে হবে৷ উপার্জিত স্বল্প আয়ের মধ্যেই আরো ভালভাবে থাকার ব্যবস্থা করতে হবে৷

গানের কথাগুলো হচ্ছে - প্রচুর ছোট ছোট পাখি তারা জাল পেতে আটকাচ্ছে৷ পাখিগুলো প্রাণপণে চেষ্টা করে জাল থেকে নিজেদের মুক্ত করতে কিন্তু কিছুতেই পেরে ওঠে না৷ কিন্তু আটকে থাকা পাখিগুলো এক ধরণের সুর তুলছে, সুরের তালে তালে তারা ডানা ঝাপটাচ্ছে৷ এবং এক সময় জাল নিয়েই তারা আকাশে উড়ে যাচ্ছে৷

Händler und Kunden auf einem Gewürz- und Gemüsemarkt in Jaipur, der Hauptstadt des indischen Bundesstaates Rajasthan
রাজস্থানের মশলার বাজারছবি: dpa

রাজস্থানের ঐ অঞ্চলে প্রায় প্রতিটি শিশুই এই গল্প জানে৷ এমনকি ডোলি কা বাসের মত ছোট গ্রামের শিশুরাও এই গল্পের সঙ্গে পরিচিত৷ এই গল্পে আটকে থাকা পাখিগুলোর সঙ্গে গ্রামের মহিলারা নিজেদের মিল খুঁজে পেয়েছেন৷ সুশীলা দেবী আত্মপরিচয় দিয়ে বললেন, আমার নাম সুশীলা দেবী৷ মহিলাদের নিয়ে গঠিত এই দলের প্রধান আমি৷ আমার এই দলটি ৬ বছর আগে গঠন করা হয়৷ তখন থেকেই বেশ ভাল মত আমরা কাজ চালিয়ে আসছি৷

সুশীলা জানালেন, কিভাবে আরো ১৯ জন মহিলাকে নিয়ে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছেন যেখানে মহিলারা নিজেরাই নিজেদের সাহায্য করছে৷ সবাই দারিদ্র্য দূর করার চেষ্টা করছে৷ আত্ননির্ভর হতে চায় অসহায় এবং সরল এসব মহিলা৷ তবে সবাই একটা কথা বুঝেছিল যে এককভাবে তা সম্ভব হবে না৷ তাদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছিল ভারতের ন্যাশনাল ব্যাংক ফর এগ্রিকালচার এন্ড রুরাল ডেভেলপমেন্ট এবং একটি জন-সম্বল নামের এক সংগঠন৷

Internationale Koproduktion in Indien
ডোলি কা বাস গ্রামছবি: DW/Peter Weitzmann

সুশীলা এবং তাঁর দল প্রতি মাসের শুরুতে একবার মিলিত হন৷ গ্রামের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে তারা আলোচনা করেন৷ ব্যক্তিগত সমস্যার কথাও তারা তুলে ধরেন৷ বাড়িতে কি হচ্ছে বা কি হয়নি৷ এসব আলোচনায় উঠে আসে আর্থিক সমস্যা এবং লেনদেনের প্রশ্ন৷ প্রতিবার যখন মহিলারা মিলিত হন তখন কয়েক সেন্ট অর্থাৎ ১০ রুপি করে চাঁদা তোলা হয়৷ শুরু হয়েছিল এভাবেই৷ সুসিলা আরো জানান, শুরুতে আমরা মাত্র ১০ রুপি করে চাঁদা তুলতে থাকি৷ এরপর তা বাড়িয়ে ২০ রুপি করা হয়৷ এখন প্রতিমাসে এক একজনের কাছ থেকে ১০০ রুপি তোলা হয়৷

অর্থের অংক খুবই কম৷ বোঝা যায় যে স্বচ্ছলভাবে ডোলি কা বাস গ্রামে কেউই বসবাস করে না৷ এই সমস্যা শুধু ডোলিকা বাসেই নয় সারা ভারতেই রয়েছে৷ দারিদ্র্যের জালে জড়িয়ে রয়েছে মানুষর, সবাই চেষ্টা করছে সেখান থেকে বেরিয়ে আসার৷ কেউ পারছে, কেউ পারছে না৷ যেভাবেই হোক আজকের দিনটা পার করতে হবে - আগামীকাল কি হবে তা নিয়ে তাদের কেউ-ই যেন ভাবতে চায় না৷ এসবের মধ্যে থেকেই ব্যতিক্রমী কাজে নেমেছে ডোলি কা বাসের গ্রামের মহিলারা৷ খুব সামান্য হলেও তারা অর্থ সংগ্রহ করছে৷ টাকা জমাচ্ছে৷ কয়েক বছরেই তারা প্রমাণ করছে টাকা জমানোর মত মন মানসিকতা মহিলাদের রয়েছে৷ সাহায্য পেয়েছে তারা ‘জন সম্বল' সংস্থা আর ব্যাংক থেকে৷ এবার তাদের লক্ষ্য গ্রামের কাছেই একটি ব্যাংক থেকে ক্ষুদ্রঋণ নেয়া৷ যোগেশ কুমার সমবায় ব্যাংকের একটি শাখায় কর্মরত৷ তিনি বললেন, আমরা মহিলাদের বোঝাই ক্ষুদ্রঋণ নেয়ার জন্য কোন ধরণের ফর্ম পূরণ করতে হবে, কিভাবে পূরণ করতে হবে৷ ক্ষুদ্রঋণ নেয়ার শর্তগুলো কী কী ? বেশি টাকা হাতে থাকলে ক্ষুদ্রঋণের পরিমাণও অনেক বেড়ে যায়৷ কিভাবে এই ঋণ ধীরে ধীরে শোধ করতে হবে সে বিষয়েও আমরা পরামর্শ দিয়ে থাকি৷

ঋণ নিয়ে কেউ প্রশিক্ষণ নিয়েছে বুননের কাজে, কেউ শিখছে শাড়িতে জরি লাগানোর কাজ৷ সবাই বাড়িতে বসেই এখন কাজগুলো করছে৷ এধরণের ছোট খাট কাজের প্রশিক্ষণ নিচ্ছে তারা - খুঁজে পেয়েছে বেঁচে থাকার সম্বল৷

সততা এবং একতা - এরই সমন্বয় ঘটিয়েছেন ডোলি কা বাস গ্রামের মহিলারা৷ এবং তার ফলে সত্যিই নিজেদের স্বাবলম্বী করতে সক্ষম হয়েছেন৷ তারা সবাই জানেন ঋণ নিয়ে কিভাবে এগিয়ে যাওয়া যায়৷ দারিদ্র্য বিমোচনের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ডোলি কা বাস গ্রামের সংঘবদ্ধ নারীরা৷

প্রতিবেদক: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদক: আবদুল্লাহ আল-ফারূক