1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ক্ষেপণাস্ত্র চুক্তি বাতিলের ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার

২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

রাশিয়ার সঙ্গে ঠান্ডা যুদ্ধের সময় করা পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র চুক্তি থেকে নিজেদের সরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র৷ তাদের ঘোষণার একদিন পর শনিবার রাশিয়াও চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে৷

https://p.dw.com/p/3Cbpk
USA Mittelstreckenraketen
ছবি: picture-alliance/abaca

চুক্তি থেকে সরে গেলে তাদের পক্ষে মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতে আর কোনো বাধা থাকবে না৷ শনিবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে টিভিতে প্রচারিত এক বৈঠকে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন বলেন, ‘‘অ্যামেরিকা যেহেতু চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে, তাহলে আমরাও তা বাতিলের ঘোষণা দিচ্ছি৷''

এর আগে যুক্তরাষ্ট্র জানায়, আনুষ্ঠানিকভাবে মাঝারি পাল্লার পরমাণু অস্ত্র বা আইএনএফ চু্ক্তি থেকে পুরোপুরি সরে আসতে ৬ মাস সময় লাগবে তাদের৷

ট্রাম্প সরকার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘‘ছয় মাসের মধ্যে চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাবার প্রক্রিয়া শেষ হবে, যদি না রাশিয়া চুক্তি ভঙ্গ করে যেসব ক্ষেপণাস্ত্র, উৎক্ষেপণযন্ত্র ও আনুসঙ্গিক যন্ত্রাংশ তৈরি করেছে, তা ধ্বংস করে৷''

অন্যদিকে, রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা থেকে নিজেদের মুক্ত করার একটি ‘অজুহাত'৷

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশ্য একটি বিকল্প চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছেন৷ ‘‘আমি আশা করি, আমরা সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে বসে একটি নতুন চুক্তি করতে পারব, যা আগেরটির চেয়ে অনেক ভালো হবে,'' বলেন তিনি৷ তবে বিস্তারিত কিছু বলেননি৷

এদিকে অ্যামেরিকা ও ইউরোপের ২৯টি দেশের সম্মিলিত সামরিক জোট ন্যাটো'র মহাসচিব ইয়েন্স স্টোল্টেনব্যের্গ যুক্তরাষ্ট্রের এই ঘোষণাকে সম্পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন৷

‘‘রাশিয়া চুক্তি ভঙ্গ করেছে৷ তাদের আগামী ৬ মাস অবশ্যই পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে অভিযোগগুলো নিয়ে কাজ করা উচিত, নতুবা চুক্তি বাতিলের পুরো দায়ভার নিতে হবে,'' এক টুইটে এমন মন্তব্য করেন তিনি৷

জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল বলেছেন, এই ছয় মাসের মধ্যে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো সমাধান করার ব্যাপারে মস্কোর সঙ্গে কাজ করবে বার্লিন৷

জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস মনে করেন, অস্ত্র বানানো নয়, সবার আলোচনার বিষয়বস্তু হওয়া উচিত অস্ত্র বিস্তার রোধ৷ চুক্তি ছাড়া রাশিয়ার জন্য অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করেন তিনি৷ তিনি বলেন, ‘‘চুক্তি ছাড়া কোনো নিরাপত্তা বলয় থাকবে না৷''

যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্তে হতাশা প্রকাশ করেছে ফ্রান্স৷ আবার রাশিয়াকেও আগামী ছয় মাসে চুক্তি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবার আহ্বান জানিয়েছে তারা৷

১৯৮৭ সালে ঠান্ডা যুদ্ধের সময় চীন ও রাশিয়া এই ঐতিহাসিক চুক্তি করে৷ চুক্তিতে সই করেন দুই দেশের দুই নেতা রোনাল্ড রিগান ও মিখাইল গর্বাচেভ৷

চুক্তি অনুযায়ী, দুই দেশের কেউই স্থল থেকে পরিচালিত ৫শ' থেকে সাড়ে ৫ হাজার কিলোমিটার (৩০০ থেকে ৩,৪০০ মাইল) দূরত্বে আঘাত হানতে পারে এমন ক্রুজ মিসাইল ব্যবহার, তৈরি ও পরীক্ষা না করার বিষয়ে একমত হয়৷ চুক্তির পর দুই দেশ মিলিয়ে কমপক্ষে ২ হাজার ৬শ' মিসাইল নষ্ট করে৷

যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ রাশিয়া ৫শ' কিলোমিটারের বেশি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে৷ রাশিয়া বলেছে, এগুলোর কোনোটিই ৪৮০ কিলোমিটারের বেশি পাল্লার নয়৷

তবে অনেকেই মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের আসল মাথাব্যথা রাশিয়া নয়, চীন, যদিও চুক্তিতে তারা কোনো পক্ষ নয়৷ সম্প্রতি চীন মাঝারি পাল্লার অনেকগুলো ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে৷

গত বছর অক্টোবরেও ট্রাম্প এ নিয়ে কথা বলেছিলেন৷ তখন তিনি বলেছিলেন, ‘‘যতক্ষণ পর্যন্ত রাশিয়া ও চীন আমাদের কাছে আসে এবং বলে যে, আসুন সুবুদ্ধির পরিচয় দিই এবং কেউই আমরা পরমাণু অস্ত্র তৈরি না করি, আমরা আমাদের অস্ত্র বানিয়ে যাবো৷ রাশিয়াও বানিয়ে যাবে, চীনও বানিয়ে যাবে আর আমরা চুক্তি মেনে যাব, তা তো হয় না৷''

আলেক্সান্ডার পেয়ারসন, চেজ উইন্টার/জেডএ