1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

খরাঞ্চলে ফসল ফলাতে চান বিজ্ঞানীরা

১১ এপ্রিল ২০১১

পৃথিবীর অন্যতম চরমভাবাপন্ন জায়গা হিমালয় পর্বতাঞ্চল৷ ভূপৃষ্ঠ থেকে সাড়ে চার হাজার মিটার উঁচুতে যেখানে বাতাস খুব হালকা, মাটি বেশিরভাগ সময় বরফে ঢাকা, এবং মাসের পর মাস কোন বৃষ্টি হয় না, এমন জায়গাতে গাছপালা টিঁকে থাকে কী করে?

https://p.dw.com/p/10r9V
ছবি: dpa

জার্মানি ও ভারতের বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি সেটি নিয়েই গবেষণা চালিয়ে দেখছেন৷ কী কারণে এসব ছোট বড় গাছ প্রচণ্ড ঠান্ডাও অনাবৃষ্টিতেও কাবু হয় না সেটি তারা খতিয়ে দেখছেন৷ গাছের এই ক্ষমতা যদি শষ্যের বীজেও ঢোকানো যায় সেগুলোও চরমভাবাপন্ন জলবায়ুতে টিঁকে যেতে পারবে৷ বিজ্ঞানীরা স্বপ্ন দেখছেন যে এর ফলে অদূর ভবিষ্যতে খরা প্রবণ এলাকাতেও দেখা যাবে বিস্তীর্ণ সবুজ শষ্য শ্যামল ফসলের ক্ষেত৷

জার্মানির কোলোনের কাছে অবস্থিত ইউলিশ প্ল্যান্ট ফেনোটাইপিং সেন্টার বা জেপিপিসি-র গবেষণাগারে চলছে এই নিয়ে গবেষণা৷ এখানকার ভেতরের আবহাওয়া পুরোপুরি নিয়ন্ত্রিত৷ গবেষণাগারের ভেতরে ছোট ছোট বিভিন্ন ধরণের টবে বেশ কিছু গাছ রাখা৷ প্রত্যেকটি গাছকেই বিশেষ ধরণের ফ্লাশ লাইট দিয়ে স্টিমুলেইট করা হচ্ছে৷ পাশেই কম্পিউটারগুলোতে দেখা যাচ্ছে গাছগুলোকে বিশেষ লেজারের মাধ্যমে যে স্ক্যান করা হচ্ছে সেগুলোর ফলাফলের চিত্র৷ জীব বিজ্ঞানী আনিকা ভিজে ক্লিনকেনবার্গ জেপিপিসি এ কাজ করছেন গবেষক হিসেবে৷ তিনি দেখালেন, গাছগুলোর মধ্যে যে পরিবর্তন হচ্ছে সেগুলো কম্পিউটারের মনিটরে ভেসে উঠছে৷

Future Now Pflanzen
গবেষণাগারে চলছে গাছের ওপর গবেষণাছবি: DW

তিনি বলেন, ‘‘এভাবে আমরা গাছের ফটোসিনথেসিস এবং নিউট্রন ট্রান্সপোর্ট পুরোপুরি লক্ষ্য করতে পারি৷ গাছটি কীভাবে বেড়ে উঠছে সেটাও আমরা খালি চোখেই দেখতে পাই৷ প্রতি ঘন্টা এবং প্রতি মিনিটে গাছে কী পরিবর্তন হচ্ছে সেটাও ধরা পড়ছে এখানে৷''

৩৭ বছর বয়সী এই জার্মান নারী বিজ্ঞানীর জন্য কাজটি বেশ উপভোগ্য৷ তিনি গবেষণা করে দেখছেন কীভাবে গাছগুলো চরমভাবাপন্ন আবহাওয়াতেও টিঁকে থাকতে পারে এবং এবং এজন্য কী ধরণের জেনেটিক পরিবর্তন হয়৷

Future Now Pflanzen
বিজ্ঞানী আনিকা ভিজে ক্লিনকেনবার্গছবি: DW

জার্মানির জেপিপিসি-র সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছেন ভারতের ইন্সটিটিউট ফর হিমালয়ান বায়োরিসোর্স টেকনোলজি বা আইএইচবিটির বিজ্ঞানীরা৷ তাদের লক্ষ্য হিমালয় অঞ্চলের গাছগুলোর জেনেটিক কোড অনুসরণ করে নতুন ধরণের শষ্য উৎপাদন করা যাতে করে প্রচণ্ড গরম কিংবা প্রচণ্ড ঠান্ডাতেও সেগুলো টিঁকে থাকতে পারে৷ জার্মান বিজ্ঞানী আনিকা এই প্রকল্পের ব্যাপারে বললেন, ‘‘আমি মনে করি এই প্রকল্পের বিশেষ দিক হচ্ছে যে আমরা বায়ো ডাইভারসিটির ক্ষেত্রে নতুন একটি দিক খুলতে যাচ্ছি৷ প্রথমে যেসব গাছ চরম আবহাওয়াতে টিঁকে থাকতে পারে তাদের জেনেটিক কোড বের করা হয়েছে৷ দেখা হয়েছে কীভাবে তারা অনেক ভূপৃষ্ঠ থেকে অনেক উঁচুতে টিঁকে থাকে এবং বংশ বৃদ্ধি করে৷ আমরা চেষ্টা করছি প্রথমে এই জিন গবেষণাগারের গাছে স্থানান্তর করতে এবং পরে সেটি কোন শষ্যের মধ্যে প্রবেশ করাতে৷''

জার্মান বিজ্ঞানীরা গাছের এই বিশেষ জিনকে আরাবিডোপসিস থালিয়ানা নামে গবেষণাগারের একটি গাছের মধ্যে প্রবেশ করাতে ইতিমধ্যে সক্ষম হয়েছেন৷ এই গাছের গোটা জেনেটিক কোডও ইতিমধ্যে বিশ্লেষণ করা হয়েছে৷ এখন শুধু বাকি কীভাবে এই গাছটি বেড়ে ওঠে সেটাই লক্ষ্য করা৷ এবং সেটিই এখন করে যাচ্ছেন জীব বিজ্ঞানী আনিকা ভিজে ক্লিনকেনবার্গ৷ তিনি জানান, ভারত সহ বিশ্বের বহু জায়গা এখন খরায় আক্রান্ত এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে৷ তাই বিরূপ আবহাওয়ায় টিঁকে থাকার মত শষ্য উৎপাদন ভবিষ্যতের জন্যই খুব প্রয়োজনীয়৷

প্রতিবেদন: রিয়াজুল ইসলাম

সম্পাদনা: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী