1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

খাদ্যে অনেক ‘রাজনীতি’ মিশেছে...

আশীষ চক্রবর্ত্তী১ জুন ২০১৬

খাদ্যে ভেজালের সঙ্গে খুব রাজনীতিও মিশেছে৷ রাজনীতিতে তো ‘ভেজাল’ বেশি৷ সেই ভেজালের কারণেই খাদ্যে ফর্মালিন, ইটের গুঁড়ো, কাঠ বা বিভিন্ন ধরনের রং মেশানো বন্ধ করা যাচ্ছেনা৷

https://p.dw.com/p/1IyHs
Symbolbild Bäuerin auf den Philippinen
ছবি: AFP/Getty Images/R. Gacad

বন্ধ করার চেষ্টা কিন্তু হয়েছে৷ এখনো হয়৷ চেষ্টা মানে মোবাইল কোর্টের অভিযান৷ সেই অভিযানে কোনো বাজারে ফর্মালিনযুক্ত মাছ-মাংস, কোনো ঐতিহ্যবাহী মিষ্টির দোকানে রং দেয়া মিষ্টি অথবা কিছু ফলের দোকানে ‘সকল অসুখের আঁকড়' হিসেবে কিছু ফল চিহ্নিত করে কিছু টাকা জরিমানা করা৷ ব্যস৷ এর বেশি কিছু হয়না৷ আজকাল খুব বেশি কিছু হবে বলে কেউ বোধহয় আশাও করেনা৷ আশা করা বোকামি, কেননা, যে সব ব্যবসায়ী বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ‘ব্যবস্থা' নেয়া হয় তারা তো খুব নির্বিঘ্নেই ব্যবসা চালিয়ে যায়৷

২০০৭ সালে যখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে তথাকথিত শুদ্ধি অভিযান শুরু করা হলো, তখনও প্রকৃত অর্থে বড় কোনো ব্যতিক্রম চোখে পড়েনি৷ শুরুর দিকে খুব ঘটা করে অভিযান চালানো হলো৷ সব অসাধু ব্যবসায়ীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ল আতঙ্ক৷ সেনা সদস্যদের সরাসরি অংশ গ্রহণে তখন দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের চেষ্টাও হয়েছে৷ মজুদদারদের গুদামেও দেয়া হয়েছে হানা৷ মনে হচ্ছিল, অসাধু ব্যবসায়ীদের দুর্দিন অবশেষে বুঝি এসেই গেল৷ কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই সব হম্বি-তম্বি শেষ৷ ওয়ান ইলেভেনের সরকার ক্ষমতায় থাকতে থাকতেই দেশ আবার হয়ে গেলে অসাধুদের স্বর্গরাজ্য৷

এখনও একই নিয়মে চলে মোবাইল কোর্টের অভিযান এবং একই নিয়মে অসাধুরা আরো ফুলে-ফেঁপে ওঠে৷ সুতরাং এ পর্যন্ত সব অভিযানই কার্যত ব্যর্থ হয়েছে বলা যেতেই পারে৷

কেন ব্যর্থ হলো? কেন ব্যর্থ হচ্ছে?

অনেকে বলবেন, ‘অসাধু ব্যবসায়ীদের হাত অনেক লম্বা৷ তাদের কারো কারো ক্ষমতার প্রায় শীর্ষবিন্দু পর্যন্ত যোগাযোগ৷ তাদের রুখবেন কী করে?'' অসৎকর্মে অসাধুরা সবসময়ই ঐক্যবদ্ধ – এ কথাও নিশ্চয়ই বলবেন৷

কথা ঠিক৷ আর ও চিত্রটা একেবারে রাজনীতির ময়দানের মতো৷ অপরাজনীতিবিদদের মতো অসাধু ব্যবসায়ীরাও নিজেদের হীন স্বার্থ রক্ষার প্রশ্নে সবসময়ই জোটবদ্ধ৷ ওপরে ওপরে যত বিভেদই থাক, ভেতরে ভেতরে কিন্তু সবাই এক৷

তার নমুনা কয়েকদিন আগেও দেখলাম৷ দেখলাম, ‘নীতিমালায় বৈষম্য ও আইনের অপপ্রয়োগের মাধ্যমে হয়রানি'র প্রতিবাদের কথা বলে দেশের সব চেইন সুপার শপ একদিনের জন্য বন্ধ রাখা হলো৷ প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে সুপার শপের মালিকরা বলেছেন, ‘‘সুপার শপগুলোকে অনর্থক হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে৷ নিরাপদ খাদ্যের নামে ভ্রাম্যমাণ আদালত সুপার মার্কেটে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছেন৷ কেবল ভ্রাম্যমাণ আদালত নন, পুলিশ-র‌্যাব ও মিডিয়া নিয়ে বারবার অভিযান চালানো হচ্ছে৷ অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে খাদ্য পরীক্ষা করে জরিমানাও করা হচ্ছে৷ যেন অভিযানে সুপার মার্কেটগুলোকেই টার্গেট করা হচ্ছে৷''

বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তাঁরা আরো দাবি করেছেন, ‘‘সুপার মার্কেটে একেক সময় একেকটি কর্তৃপক্ষ মিডিয়াকে সঙ্গে নিয়ে, বিশাল বহর নিয়ে অভিযানে আসে৷ অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, খাদ্যের গুণগত মানের চেয়ে মিডিয়ায় প্রচারণাই তাদের প্রধান উদ্দেশ্য৷''

খাদ্য পরীক্ষায় অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণের অভিযোগ সব ক্ষেত্রে নিশ্চয়ই কেউ অস্বীকার করতে পারবেননা৷ একেক সময় একেকটি কর্তৃপক্ষের মিডিয়াকে সঙ্গে নিয়ে অভিযানে নামার মধ্যে যে ‘প্রচারলালসা' থাকতে পারে তা-ও ঠিক৷

Deutsche Welle DW Ashish Chakraborty
আশীষ চক্রবর্ত্তী, ডয়চে ভেলেছবি: DW/P. Henriksen

তাই বলে ব্যবসায়ীরা অভিযানের সময় তাদের প্রতিষ্ঠানে যেসব ভেজাল পণ্য পাওয়া গেছে সেগুলোর সম্পর্কে একদম চুপ কেন? মানুষকে ভেজাল খাইয়ে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে কৌশলে এড়িয়ে তাঁরা ধর্মঘট ডেকে দিলেন?

‘‘ঠাকুর ঘরে কে রে?-'' এই প্রশ্নের উত্তরে যদি কেউ বলে ওঠে ‘‘আমি কলা খাইনা'', তাহলৈ কী বুঝে নিতে হয়?

দেশের মানুষ কম তো দেখেনি৷ অন্যায্য দাবিতে বাস মালিক, লঞ্চ মালিকদের ধর্মঘট দেখেছে বহুবার৷ আবার ধর্মের কথা, মানুষের প্রতি মানবিক আচরণের দায়বদ্ধতার কথা ভুলে যখন-তখন নিয়ম-নীতি না মেনে ভাড়া বাড়াতেও দেখেছে৷ দেশটা তাদের কাছে মগের মুল্লুক৷ ভেজাল ব্যবসায়ীদের কাছেও দেশটা আসলে তাই৷

আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য