1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

খাদ্য সংকট থেকে মুক্তি মিলবে?

৬ সেপ্টেম্বর ২০১০

বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকট নতুন কোন খবর নয়৷ দিন দিন এই সংকট আরও গভীর হচ্ছে৷ কারণ প্রতিদিনই মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু বাড়ছে না জমির পরিমাণ৷

https://p.dw.com/p/P52N

বিজ্ঞানীরা বলছেন, সব মানুষের চাহিদা মেটাতে আগামী চল্লিশ বছরের মধ্যে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে শতকরা প্রায় ৫০ শতাংশ৷ তাই প্রয়োজন হয়ে পড়েছে এমন ফসল উৎপাদন করা যেটা কম জমিতে বেশি করে ফলানো যাবে৷

গমের জিন নকশা উন্মোচন

অনেকদিন থেকেই বিজ্ঞানীরা বলছিলেন, একবিংশ শতাব্দী হবে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারদের৷ এখন মনে হচ্ছে, ভুল বলেননি তাঁরা৷ গত সপ্তাহেই জেনেটিক ইঞ্জিনিয়াররা, মানে জিন বিজ্ঞানীরা তিন তিনটি আনন্দের খবর দিয়েছেন৷ এর মধ্যে একটিতো শুধু আনন্দেরই নয়, বরং বলতে হবে স্বস্তির৷ কারণ এর ফলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম খাদ্য সংকটের হাত থেকে মুক্তি পেতে পারে৷ খবরটা হলো - একদল ব্রিটিশ বিজ্ঞানী গমের জিনোম সিকোয়েন্স বা জিন নকশা, বা আরও সহজ করে বললে গমের জীবনরহস্য উন্মোচন করেছেন৷ এর ফলে ভবিষ্যতে আরও বেশি করে গম উৎপাদন করা যাবে৷ শুধু তাই নয়, খরার সময়ও টিকে থাকতে পারবে এবং রোগশোকে সহজে নুয়ে পড়বে না – এমন গম উৎপাদন করাও সম্ভব হবে৷ আর গুণগত মানের দিক থেকেও আরও ভাল হবে এই গম৷ আরেকটা সুবিধা আছে, উৎপাদন করতে সময় কম লাগবে৷

Verbraucherministerin Renate Künast
অ্যামেরিকার এই হলুদ আপেল ইউরোপের মানুষেরও প্রিয়ছবি: AP

পৃথিবীর মানুষের প্রধান খাদ্য হিসেবে ধরা হয় তিনটি খাবারকে৷ এর মধ্য একটি হলো গম৷ কারণ সারা বিশ্বের প্রতি তিনজন মানুষের একজনের প্রধান খাবারই হলো গম বা গম থেকে তৈরি হওয়া খাবার৷ আর গম ছাড়া বাকী দুটি প্রধান খাদ্য হলো ধান আর ভুট্টা৷ এই দুটির জিন নকশা অনেক আগেই বের করা হয়েছে৷ তবে গমের ক্ষেত্রে অনেক বিজ্ঞানীই বলছিলেন সেটা প্রায় অসম্ভব৷ কারণ এর নকশা খুবই জটিল৷ কিন্তু তারপরও শেষ পর্যন্ত দুই বছর চেষ্টা করে সফল হয়েছেন বিজ্ঞানীরা৷ তবে এর কৃতিত্ব পেতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের একটি কোম্পানি, যার নাম ‘৪৫৪ লাইফ সায়েন্সেস'৷ কারণ এই কোম্পানির তৈরি করা উন্নত সিকোয়েন্স প্রযুক্তির ফলেই সম্ভব হয়েছে গমের জটিল নকশা উন্মোচন – যেটার দৈর্ঘ্য মানুষের নকশার চেয়ে পাঁচগুন বড়৷

সম্প্রতি গমের দাম অনেক বেড়ে গিয়েছিল৷ কারণ প্রাকৃতিক দুর্যোগ৷ বিশ্বের সবচেয়ে বেশি গম উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে একটি রাশিয়া৷ সেখানে গত বেশ কিছুদিন ধরে প্রচণ্ড গরমে দাবানল ছড়িয়ে পড়েছিল৷ তাই ব্যাহত হয়েছিল ফসল উৎপাদন৷ তাই রাশিয়া গম রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছিল৷ ফলে বিশ্বব্যাপী বেড়ে গিয়েছিল এর দাম৷ তবে শুধু রাশিয়া নয়, বন্যার কবলে পড়ে রয়েছে পাকিস্তান, যা এশিয়ার মধ্যে তৃতীয় বৃহত্তম গম উৎপাদনকারী দেশ৷ বন্যায় তাদেরও ফসল নষ্ট হয়ে গেছে৷ এছাড়া চীনে হয়েছে ভূমিধ্বস আর কানাডায় খারাপ আবহাওয়া৷ সব মিলিয়ে এবার গম উৎপাদন পরিস্থিতি খুব খারাপ৷ তাই রোগ প্রতিরোধে সক্ষম আরও শক্তিশালী গমের জাত উৎপাদন – বিষয়টা আমাদের জন্য স্বস্তির বৈকি!

আপেলের জিন নকশা উন্মোচন

আপেল - সুস্বাদু এই খাবারকে আরও সুস্বাদু করার প্রক্রিয়া বের করে ফেলেছেন জিন বিজ্ঞানীরা৷ তাঁরা উন্মোচন করেছেন ‘হলুদ' আপেলের জিন৷ অ্যামেরিকার এই আপেল ইউরোপের মানুষেরও প্রিয়৷ সাধারণত সালাদ, সস বা বাটার বানিয়ে খাওয়া হয় এই আপেল৷ পাঁচ দেশের তেরটি প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরা মিলে উন্মোচন করেছেন এই আপেলের জিন নকশা৷ বলা হচ্ছে, এখন পর্যন্ত যত উদ্ভিদের নকশা উন্মোচন করা হয়েছে, তার মধ্যে এই আপেলের নকশাটাই সবচেয়ে জটিল৷ এর ফলে এখন আরও মিষ্টি স্বাদের আপেল উৎপাদন করা যাবে বলে বলছেন বিজ্ঞানীরা৷ তাঁরা বলছেন, হলুদ আপেলের নকশা বের করার পর এখন লাল আপেলের নকশা বের করা সহজ হবে৷

এদিকে এই নকশা উন্মোচন করে বিজ্ঞানীরা আপেলের পূর্বপুরুষ সম্পর্কেও একটা ধারণা পেয়েছেন৷ তাঁরা বলছেন, আজ থেকে প্রায় ৬৫ মিলিয়ন বছর আগে নাকি আপেলের পূর্বপুরুষদের জন্ম হয়েছিল! মজার ব্যাপার হলো, ঐসময় ডাইনোসররাও পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছিল৷

পিঁপড়ার জিন

মার্কিন বিজ্ঞানীরা বলছেন, তাঁরা প্রথমবারের মত দুই জাতের পিঁপড়ার জিন নকশা আবিষ্কার করতে সমর্থ হয়েছেন৷ এর মধ্যে একটি হলো ভারতের ‘জাম্পিং পিঁপড়া'৷ যার গায়ের রং লাল৷ আর অন্যটি অ্যামেরিকার ‘কার্পেন্টার পিঁপড়া'৷ যার রং কালো৷ বিজ্ঞানীরা বলছেন, পিঁপড়ারাও মানুষের মত সামাজিক জীব৷ অর্থাৎ মানুষের মতই মিলে মিশে দল বেঁধে থাকতে পছন্দ করে তারা৷

প্রতিবেদন: জাহিদুল হক

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন