ভর্কুকি নিয়ে সংকট
১৩ জুন ২০১৪জুন মাসে জেনিভায় বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার আসন্ন সম্মেলনে ভারতসহ বিকাশমুখী দেশগুলির জন্য পুরানো সংকট আবার নতুন করে দেখা দিতে পারে৷ বিকাশমুখী দেশগুলির দাবি, গরিব কৃষি পরিবারদের খাদ্য নিরাপত্তা দিতে সরকার সমর্থন মূল্যে তা বাজার থেকে কিনে মজুত করতে পারে, যাতে তা ভরতুকি দামে গরিব ও কৃষি পরিবারদের মধ্যে বিতরণ করা যায়৷
এই দাবির তীব্র বিরোধিতা করে এসেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত রাষ্ট্রসহ ধনী দেশগুলি৷ সফলভাবে এর মোকাবিলা করাই হবে নতুন মোদী সরকারের সামনে এখন সব থেকে বড় আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ৷ কারণ ভারতের বর্তমান খাদ্য সুরক্ষা আইন অনুসারে সরকার নির্ধারিত সমর্থন মূল্য বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার চলতি কৃষি পণ্য চুক্তি নির্ধারিত ভরতুকির মাত্রা ছাড়িয়ে যাবার আশঙ্কা আছে৷ সে ক্ষেত্রে ডবলিউটিও দেশগুলি ভারতের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারে৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে ভারতকে নিতে হবে ব্রিকস গোষ্ঠীর দেশগুলির সাহায্য৷ বিশেষ করে চীনের৷ ব্রিকস গোষ্ঠীতে আছে ভারত ছাড়া ব্রাজিল,রাশিয়া,চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা৷ ব্রাজিল, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়ে ভারতকে আরো বেশি চাপ সৃষ্টি করতে হবে৷ মোদী সরকার এই কাজে যদি সফল হয়, তাহলে আন্তর্জাতিক শক্তি হিসেবে ভারত এক ধাপ এগিয়ে যাবে, প্রতিষ্ঠিত হবে মোদী সরকারের কূটনীতি এবং কৌশলনীতির সাফল্য৷
কয়েকটি দেশের তাগাদায় বিশ্ব বাণিজ্য সুষ্ঠু ও সহজতর করতে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার চুক্তি বাস্তবায়নে অগ্রগতি হয়েছে, যাতে বালি মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে ধার্য ৩১শে জুলাই-এর সময়সীমার মধ্যে তা কার্যকর হয়৷ কিন্তু দুঃখের বিষয়, ভারত তথা বিকাশমুখী দেশগুলির উত্থাপিত খাদ্য নিরাপত্তা এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ইস্যুগুলিতে কোন অগ্রগতি হয়নি, যা ভারত দাবি করে আসছে৷
২০০৮ সালে বিশ্ব মন্দার কারণে সদস্য দেশগুলি দোহা চুক্তি ঐকমত্য থেকে সরে আসে৷ বলা হয়, চলতি কৃষি চুক্তিতে সরকার খাদ্য সুরক্ষার জন্য খাদ্য ভাণ্ডার গড়ে তুলতে পারে, কিন্তু তা কিনতে হবে বাজার দামে৷ ঃনঃসরকার নির্ধারিত দামে নয়৷ সরকার নির্ধারিত দামে হলে তা হবে ভরতুকির নামান্তর৷
উরুগুয়ে বৈঠকে অবশ্য কিছুটা নমনীয় প্রস্তাবে বলা হয় যে, সরকার নির্ধারিত সমর্থন মূল্য ১০ শতাংশের বেশি হতে পারবে না৷ ভারতের বক্তব্য, সমর্থন মূল্য ধার্য হয়েছিল ১৯৮৬-৮৮ সালের দামে৷ এর সঙ্গে মুদ্রাস্ফীতি যোগ করা হয়নি৷ তাই জি-৩৩ গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে ভারত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার কৃষিপণ্য চুক্তিতে সংশোধনের দাবি জানায়৷ মুদ্রাস্ফীতি দিকটি বিবেচনা করতে অস্বীকার করে উন্নত দেশগুলি৷ ভারত কিন্তু এই দাবিতে অবিচল আছে৷ কারণ ভারত মনে করে এর সঙ্গে যেহেতু স্বল্পবিত্তদের জীবিকা, খাদ্য সুরক্ষা এবং গ্রামীণ উন্নয়নের প্রশ্ন জড়িত, তাই এই দাবি থেকে সরে আসা অসম্ভব৷
এই দাবি ২০০১ সালে দোহা সম্মেলনে বহুপাক্ষিক বাণিজ্য আলোচনার জন্য এক সর্বাত্মক উন্নয়ন অ্যাজেন্ডায় গৃহিত হয়েছিল৷ গত বছর অর্থাৎ ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে ইন্দোনেশিয়ার বালি সম্মেলনেও এই ইস্যুতে ভারতকে একঘরে করার চেষ্টা হয়েছিল৷ পরে শেষ মুহূর্তে এই প্রথম মোটামুটি একটা সহমতের ইঙ্গিত পাওয়া যায়৷ বলা হয় যতদিন না একটা স্থায়ী সমাধান খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে, ততদিন একটা অন্তর্বর্তী মেকানিজম বলবৎ থাকবে৷ বিকাশমুখী দেশগুলির প্রশ্ন, ধনী দেশগুলির অনমনীয় অবস্থান নিয়ে৷