1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গণপরিবহণ হিসেবে কেবেল কার

২৯ মার্চ ২০১৮

ঘনবসতিপূর্ণ পাহাড়ি শহরে গণপরিবহন সত্যি এক চ্যালেঞ্জ৷ বলিভিয়ার রাজধানী লা পাস কেবেল কার চালু করে সেই অসাধ্য সাধন করেছে৷ তবে অস্ট্রিয়ার এক কোম্পানিকে সেই প্রকল্প রূপায়নের পথে অনেক বাধার মুখে পড়তে হয়েছে৷

https://p.dw.com/p/2vA7H
ছবি: picture-alliance/dpa/G.Ismar

বলিভিয়ার রাজধানী লা পাস শহরের পরিবহণ কাঠামো ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ছে৷ শহরতলি ধরলে প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ সেখানে  বসবাস করেন৷ এতকাল গণপরিবহণ বলতে শুধু মিনিবাসই ছিল৷ কিন্তু শহরের সরু রাস্তার জন্য সেগুলি মোটেই উপযুক্ত নয়৷ কেউ সময়মতো দফতরে পৌঁছাতে পারেন না৷ লাগাতার যানজটের কারণে সবাই বিরক্ত৷

কিন্তু লেওকার্ডিয়া নিঃশব্দে সেই বিশৃঙ্খলার উপর দিয়ে কার্যত উড়ে চলেছেন৷ তিনি কেবেল কারে বসে রয়েছেন৷ ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার উপর প্রায় ৮,০০০ মিটার দীর্ঘ তার ঝুলছে৷ চড়াই-উতরাইয়ের কারণে এই শহর পাতাল রেলের উপযুক্ত নয়৷ কেবেল কার যানজট কিছুটা কমাতে সাহায্য করছে৷ কামরা থেকে নীচে তাকালে কোনো গোলোযোগ টের পাওয়া যায় না৷

পাহাড়ে গণপরিবহণ হিসেবে কেবল কার

কেবেল কারে চড়ে এল আল্টো থেকে লা পাস শহরের কেন্দ্রস্থল পর্যন্ত যাওয়া যায়৷ মোট ৫টি রুট চালু হয়ে গেছে৷ প্রায় ১৯ কিলোমিটার জুড়ে এই নেটওয়ার্ক এর মধ্যেই বিশ্বের সবচেয়ে বড় শহুরে কেবেল কার নেটওয়ার্ক হয়ে উঠেছে৷ আরও ছ'টি রুট নির্মাণের কাজ চলছে৷

টেলেফেরিকো নামের এই কেবেল কার দু'টি ভিন্ন জগতের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটাচ্ছে৷ ধনী ও দরিদ্র এলাকার উপর দিয়ে কামরাগুলি ভেসে বেড়াচ্ছে৷ সেখানেই পশ্চিমা জীবনযাত্রা ও বলিভিয়ার আদি সংস্কৃতির সাক্ষাৎ ঘটছে৷

অস্ট্রিয়ার ডপেলমায়ার কোম্পানি কেবেল কার ও স্টেশনগুলি তৈরি করছে৷ ২০১৪ সালে সূচনার সময় থেকেই প্রকল্পের ম্যানেজার টরস্টেন বয়ারলাইন এই পরিবর্তনের সাক্ষী৷ তিনি বলেন, ‘‘শহরের মধ্যে ১,০০০ মিটার উচ্চতার তারতম্য রয়েছে৷ অত্যন্ত সরু, আঁকাবাঁকা গলি, পথঘাটের উপর প্রবল চাপ৷ সেই অবস্থায় কেবেল কার শহরের আকাশ কাজে লাগিয়েছে৷’’

প্রত্যেকটি কামরায় ১০ জন যাত্রী ধারণের জায়গা রয়েছে৷ প্রত্যেক রুটে, প্রত্যেক দিকে, ঘণ্টায় ৩,০০০ যাত্রী বহন করা যায়৷ ছোট্ট এক প্রযুক্তিগত কৌশলের মাধ্যমে বিশাল চাহিদা মেটানো সম্ভব৷ টরস্টেন বয়ারলাইন বলেন, ‘‘সেই প্রযুক্তি গতি বাড়ায়, দুই কামরার মধ্যে দূরত্ব কিছুটা কমিয়ে আনে৷ এর মাধ্যমে যাত্রীসংখ্যা ৩ থেকে ৪ হাজারে বাড়ানো সম্ভব৷’’

লা পাস শহরে ৬৫ মিটার পর্যন্ত উচ্চতার খুঁটি পোঁতাও বড় চ্যালেঞ্জ৷ রাজপথের মাঝে অথবা বাড়িঘর ধ্বংস করে সেগুলির জন্য জায়গা খোঁজা চলবে না৷ কয়েক টন ওজনের অংশগুলি জোড়া দেওয়াও বেশ কঠিন৷ সাধারণত সেই কাজে হেলিকপ্টারের সাহায্য নেওয়া হয়৷ কিন্তু এ ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব নয়৷ বয়ারলাইন বলেন, ‘‘কারণ এই শহরে বেশিরভাগ বাড়িতে টিনের চাল রয়েছে৷ হেলিকপ্টারের পাখার বাতাসের ধাক্কায় সেই চাল ভেঙে চারিদিকে উড়ে যাবে৷ তাই এখানে সেটা সম্ভব নয়৷’’

তাই ইউরোপ থেকে বিশেষ ক্রেন এনে অংশগুলি জোড়া দেওয়া হচ্ছে৷ বলিভিয়ায় এমন সরঞ্জাম নেই৷ খুঁটিসহ অনেক প্রয়োজনীয় বস্তুও সেখানে তৈরি হয় না৷ অস্ট্রিয়ায় সব প্রস্তুত করে এখানে এনে সেগুলি জোড়া দেওয়া হয়৷

প্রযুক্তিগত সমাধান খোঁজা অবশ্যই একটি চ্যালেঞ্জ৷ অন্য চ্যালেঞ্জ হলো, সাধারণ মানুষের কাছে কেবেল কারের গ্রহণযোগ্যতা৷ প্রথমদিকে অনেকে এমন উচ্চতার কারণে ভয় পেতেন৷ এখন সেই আশঙ্কা দূর হয়েছে৷ এর মধ্যে কেবেল কার শহরের সবচেয়ে জনপ্রিয় পরিবহণের মাধ্যম হয়ে উঠেছে৷ দিনে প্রায় ১ লক্ষ মানুষ এটি ব্যবহার করেন৷ টেলেফেরিকো লা পাস শহরের জীবনযাত্রা বদলে দিয়েছে এবং শহরের প্রতীক হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে৷ মানুষের গর্বের কারণও হয়ে উঠেছে পরিবহণের এই মাধ্যম৷

নুশ/নিকোলাইট/এসবি