1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গাছপালাই মাটি থেকে ধাতু সংগ্রহ করতে পারে!

৪ নভেম্বর ২০১৯

চাষ করে ধাতু সংগ্রহ করা যে সম্ভব, এ খবর ক'জন জানে? আলবেনিয়ার এক খেতে বিশেষ ফসলের মাধ্যমে নিকেল আহরণ করা হচ্ছে৷ শেষে মাটিও উর্বর হয়ে উঠবে৷

https://p.dw.com/p/3SR00
প্রতীকী ছবিছবি: imago images//Design Pics/S. Orlov

আলবেনিয়ার পূর্বাঞ্চলে চাষিরা এবার অ্যালিসাম চাষ করছেন৷ এই গাছ মাটি থেকে নিকেল শুষে নিতে পারে৷ এর মাধ্যমে চাষিরা মাটি থেকে ধাতু হিসেবে নিকেল তুলে নিয়ে বিক্রি করতে চান৷ ২০ বছর পর মাটি এতটাই ধাতুমুক্ত হয়ে উঠবে, যে সেখানে স্বাভাবিক চাষবাস করা সম্ভব হবে৷

কৃষিবিজ্ঞানী হিসেবে গিয়োম এচেভারিয়া এই প্রকল্পের নেতৃত্ব দিচ্ছেন৷ এক মোবাইল এক্স-রে যন্ত্রের মাধ্যমে তিনি ফসল পরীক্ষা করছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি গাছের বিভিন্ন অংশে নিকেলের অনুপাত পরীক্ষা করছি৷ পাতায় এক থেকে দুই শতাংশ নিকেল রয়েছে৷’’

এই ফসল সত্যি একটা সাফল্য বটে৷ সূর্যের আলোয় শুকানোর জন্য গাছগুলি এবার কয়েক দিন ফেলে রাখা হবে৷ তারপর শুকনা গাছপালাগুলি ফ্রান্সে রপ্তানি করা হবে৷ সেখানে গবেষকরা নিকেল বার করে নেবেন৷

ফ্রান্সের নঁসি বিশ্ববিদ্যালয় গত কয়েক বছরে গাছপালা থেকে ধাতু নিষ্কাশনের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে৷ শহরের উপকণ্ঠে এক গবেষণা কেন্দ্রে গিয়োম এচেভারিয়া ও তাঁর সহকর্মীরা আলবেনিয়া থেকে আনা ফসল প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজে ব্যস্ত৷ সেই লক্ষ্যে গাছপালার অংশগুলি একটি চুলায় পোড়ানো হয়৷ ছাইয়ের মধ্যে নিকেল জমা হয়৷ গিয়োম এচেভারিয়া জানান, ‘‘এটাই আমাদের চূড়ান্ত পণ্য৷ ছাইয়ের রূপে অরগ্যানিক এক আকরিক৷ এই থলের মধ্যে প্রায় ৫ কিলোগ্রাম ছাই রয়েছে৷ তার মধ্যে প্রায় এক কিলো বিশুদ্ধ নিকেল পাওয়া গেছে৷’’

বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নশাস্ত্রের গবেষণাগারে ছাই থেকে নিকেল বার করা হয়৷ তবে সেই ধাতু বিশুদ্ধ নয়৷ সেটা সম্ভব হলেও সেই প্রক্রিয়ার মূল্য অত্যন্ত বেশি৷ তার বদলে রসায়নবিদরা বিশেষ ধরনের নিকেল লবণ উৎপাদন করেন, যা ভালো বিক্রি হয়৷ রসায়নবিদ হিসেবে মারি-ওদিল সিমোনো বলেন, ‘‘শিল্পক্ষেত্রে সারফেস ট্রিটমেন্টের জন্য নিকেল লবণ ব্যবহার করা হয়৷ যেমন বিমান অথবা গাড়ি শিল্পে এর প্রয়োজন হয়৷ সেখানে নিকেল মেশানো তরল পদার্থে ধাতু ডুবিয়ে ক্ষয় থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়৷’’

ভবিষ্যতে ফসলের মাধ্যমে আরও বেশি পরিমাণ নিকেল সংগ্রহ করতে নঁসি শহরের বিজ্ঞানীরা এই ধরনের গাছপালা চাষের পদ্ধতি আরও নিখুঁত করে তোলার চেষ্টা করছেন৷ যেমন আরও ভালোভাবে গাছের শিকড়ের বিকাশের চেষ্টা চলছে৷ এমন গাছপালার সঙ্গে একযোগে চাষের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, ষেগুলি মাটি আরও আলগা করে তোলে৷ ফলে ভবিষ্যতে ইয়েলো টাফট গাছের শিকড় মাটির আরও গভীরে প্রবেশ করে সেখান থেকেও নিকেল বার করে আনতে পারবে৷

গবেষকরা ইতোমধ্যে এও জানতে পেরেছেন, যে মাটির মধ্যে বিশেষ কিছু ব্যাকটিরিয়া ধাতু আহরণে আরও সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে৷ নঁসি বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন গবেষণাগারে সেভেরিন লোপেস সেই ব্যাকটিরিয়া পরীক্ষা করছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এই সব ব্যাকটিরিয়া সরাসরি হাইপার অ্যাকুমুলেটর গাছপালার শিকড়ের আশপাশ থেকেই আসে৷ বিচ্ছিন্ন করে আমরা সেগুলির কার্যকলাপ পরীক্ষা করি৷ সেই কার্যকলাপ গাছপালার জন্য সুবিধা বয়ে আনে৷ গাছের বৃদ্ধির উন্নতি, মাটির মধ্যে ধাতুর সঞ্চালন অথবা গাছগুলিকে আরও ভালোভাবে ধাতু শুষে নিতে সেগুলি সাহায্য করে৷’’

তবে এই গবেষণা এখনো প্রাথমিক স্তরে রয়েছে৷ অদূর ভবিষ্যতে এই ব্যাকটেরিয়া ধাতুর ফসল আরও সফল করে তুলতে অবদান রাখতে পারে৷

আলবেনিয়ায় সেই উদ্যোগের সূচনা হয়েছে৷ এই ‘সুপার প্লান্ট’-এর ফলে চাষিরা এখনই উপকৃত হচ্ছেন৷ গবেষণা প্রকল্পের ফলে তাঁদের ভালো আয় হচ্ছে এবং মাটিরও উন্নতি হচ্ছে৷

ক্লাউস উয়রিশ/এসবি

গতবছরের ২ মে’র ছবিঘরটি দেখুন...