1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গতি কমাতে অভিনব ব্যবস্থা

১৮ আগস্ট ২০১৭

জার্মানি একমাত্র দেশ, যেখানে হাইওয়ের অনেক অংশে গতির ঊর্দ্ধসীমা নেই৷ কিন্তু অন্যান্য রাস্তায় সেই সীমা লঙ্ঘন করলে চালকদের জরিমানা হতে পারে৷ অত্যাধুনিক এক সিস্টেমের মাধ্যমে দুর্ঘটনা কমানোর কথা ভাবা হচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/2iRLr
ছবি: Imago/STPP

চোখে পড়তে পড়তে বড় দেরি হয়ে যায়৷ প্রথমে আলোর ঝলক, তারপর জরিমানার ধাক্কা৷ অনেক গাড়ি চালকের জন্য রাডার ক্যামেরা সত্যি ক্রোধের কারণ বটে৷ তারা বলে, ফাঁকা রাস্তায় এর প্রয়োজনই নেই৷ ভুল জায়গায় বসানো আছে৷ শুধু টাকা আদায় করার ফন্দি৷ কিন্তু বেপরোয়া চালকদের ভয় দেখানোই এমন রাডারের কাজ৷

পরিবহণ বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রায়ই তাতে কাজ হয় বটে৷ কিন্তু এতে নতুন সমস্যা দেখা দেয়৷ টোমাস বুখহাইট বলেন, ‘‘অনেক চালক রাডার ক্যামেরার সামনে আচমকা ব্রেক করেন, কখনো গাড়ি থামিয়ে দেন৷ ফলে শুধু নিজেরা নয়, অন্য চালকদেরও বিপদে ফেলেন৷’’

ফলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা আরও বেড়ে যায়৷ ব্যস্ততার সময়ে আচমকা ব্রেক করলে দ্রুত যানজট সৃষ্টি হয়৷ হানোফার শহরের কাছে একটি রাস্তায় একেবারে নতুন এক ধরনের স্পিড ক্যামেরা সিস্টেম পরীক্ষা করা হচ্ছে৷ তার আওতায় কোনো একটি স্থানে ক্যামেরার বদলে একটি বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে গাড়ির গতি মাপা হবে৷ সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়ে গেছে৷ টোমাস বুখহাইট বলেন, ‘‘এই পথে শুধু ২০১১ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে ৩২টি দুর্ঘটনা ঘটেছে, যার ফলে তিনজন নিহত, চারজন গুরুতরভাবে আহত ও সাতজন সামান্য আহত হয়েছেন৷’’

‘সেকশন কনট্রোল' নামের এই রাডার ব্যবস্থা রাস্তার এই অংশে আরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ মোট ২ দশমিক ২ কিলোমিটার জুড়ে গাড়ির গতি মাপা হচ্ছে৷

গোটা সিস্টেম এক বিশেষ প্রক্রিয়া অনুযায়ী কাজ করে৷ শুরুর অংশে প্রত্যেক গাড়িকে নথিভুক্ত করা হয় এবং পেছন থেকে তার ছবি তোলা হয়৷ স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা গাড়ির নম্বরপ্লেট ও মডেলের মতো বৈশিষ্ট্য চিনে নেয়৷ সেই তথ্য এনক্রিপ্টেড অবস্থায় ধারণ করা হয়৷ দ্বিতীয় পয়েন্টে আবার নতুন করে গাড়ি নথিভুক্ত হয় এবং তার গড় গতি পরিমাপ করা হয়৷ গতি খুব বেশি হলে সামনে থেকে চালক ও গাড়ির ছবি তোলা হয়৷ সেই তথ্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে যায়৷ তারপর জরিমানার চিঠি পাঠানো হয়৷

এই ‘সেকশন কনট্রোল’ রাডার ব্যবস্থার ফলে চালকরা অনেকটা পথ জুড়ে সাবধানে গাড়ি চালাবেন বলে আশা করা হচ্ছে৷

সমালোচকরা অবশ্য বলছেন, যে এক্ষেত্রে সব গাড়ির তথ্য রেকর্ড করা হচ্ছে – অর্থাৎ বিনা কারণে সবাইকেই ঢালাওভাবে সন্দেহের পাত্র করা হচ্ছে৷ এর ফলে কি আমরা সার্বিক নজরদারির দিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে চলছি? পরিবহণ নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ টোমাস বুখহাইট বলেন, ‘‘কোনো গাড়ি গতি সংক্রান্ত নিয়ম না ভাঙলে সিস্টেমে রাখা তথ্য অবিলম্বে মুছে ফেলা হয়৷’’

জার্মান অটোমোবাইল অ্যাসোসিয়েশনও এই ব্যবস্থা সম্পর্কে সংশয় প্রকাশ করেছে৷ সংগঠনের প্রতিনিধি ‘সেকশন কনট্রোল’ রাডার ব্যবস্থা চালু করার বিষয়ে সন্দিহান৷ সংগঠনের প্রতিনিধি ক্রিস্টিনে রেটিশ বলেন, ‘‘এই পরীক্ষামূলক প্রয়োগের সময় তথ্য সংরক্ষণ বিধি সত্যি কতটা মেনে চলা হচ্ছে, তার প্রমাণ চাই৷ অর্থাৎ সব গাড়ি শুরুতেই নথিভূক্ত করা হলে নিয়ম অনুযায়ী পরে সেই তথ্য নির্ভরযোগ্যভাবে মুছে ফেলা হচ্ছে কিনা, তা দেখতে হবে৷’’

কারণ একবার তথ্য ধারণ করলে তা নজরদারির অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা সম্ভব৷ জার্মানির কয়েকটি প্রতিবেশী দেশে অবশ্য সফলভাবেই এই ব্যবস্থা কাজে লাগানো হচ্ছে৷

নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় এই সিস্টেম প্রয়োগ করে অস্ট্রিয়া, সুইজারল্যান্ড, ইটালি, নেদারল্যান্ডস ও ব্রিটেনে দুর্ঘটনার সংখ্যা কমে গেছে৷ জার্মানি ও পোল্যান্ডও তাই এই ব্যবস্থা চালু করতে চায়৷ কিন্তু সংশয় থেকেই যাচ্ছে৷ ক্রিস্টিনে রেটিশ বলেন, ‘‘অন্যান্য দেশের সাফল্য তুলে ধরার সময় আমাদের সতর্ক থাকতে হবে, কারণ তুলনামূলক বিশ্লেষণের অভাব রয়েছে৷ অর্থাৎ অনেক কম মূল্যের সাধারণ রাডার ব্যবস্থা প্রয়োগ করেও একই সাফল্য অর্জন করা যেত কিনা, তা জানার উপায় নেই৷’’

জার্মানির উত্তরে এই প্রকল্প সফল হলে সম্ভবত অন্যান্য অঞ্চলেও এই সিস্টেম গড়ে তোলা হবে৷

নাজিল নুক্রাশ/এসবি