1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গুম হওয়া মানুষেরা কোথায়?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৩০ আগস্ট ২০২০

গত ১৩ বছরে বাংলাদেশে ৬০৪ জন গুমের শিকার হয়েছেন৷ তাদের বড় একটি অংশই আর ফিরে আসেননি৷ তারা আদৌ আর কখনো ফিরে আসবেন কিনা তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই৷

https://p.dw.com/p/3hlki
Bangladesch Dhaka Menschenrechtsorganisation Odhikar zu Verschwundenen
ফাইল ছবিছবি: Sazzad Hossain

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুয়ায়ী ৬০৪ জনের মধ্যে ৭৮ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে৷ ৮৯ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে এবং ৫৭ জন কোনো না কোনোভাবে ফিরে এসেছেন৷ অন্যরা কোথায় আছেন, কেমন আছেন তার কোনো তথ্য নাই পরিবারের কাছে৷ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও কোনো তথ্য দিতে পারছে না৷

আসক বলছে, র‌্যাব, ডিবি, পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগের পরিচয়ে সাদা পোশাকে বিভিন্ন সময়ে ওইসব ব্যক্তিদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট বাহিনী তাদের গ্রেফতার বা আটকের বিষয়টি অস্বীকার করে৷ পরিচিত কিংবা প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ অথবা আলোচনা বা আলোড়ন সৃষ্টি না হলে খুব কমই উদ্ধারের তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়৷

কিছু কিছু ক্ষেত্রে গুম হওয়ার কিছুদিন পর হঠাৎ করেই তাদের কোনো মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় বা ‘ক্রসফায়ারে’ তাদের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া যায়৷ যারা ফিরে আসতে পেরেছেন তাদের ক্ষেত্রে নিখোঁজ থাকার সময় কী ঘটেছে তাও জানা যায় না৷

অপেক্ষা শেষ হয় না
সূত্রাপুর থানা ছাত্রদলের সভাপতি সেলিম রেজা পিন্টুকে পল্লবী এলাকায় তার ভাইয়ের বাসা থেকে অপরহণ করা হয় ২০১৩ সালের ১১ ডিসেম্বর মধ্যরাতে৷

‘ফিরে আসার অপেক্ষা করা ছাড়া আর কিছুই করার নাই’

তার বোন রেহনা বানু মুন্নি জানান, ‘‘তাকে সাদা পোশাকে অস্ত্রধারীরা সরকারি লোক পরিচয়ে ধরে নিয়ে যায়৷ এরপর সে আর ফিরে আসেনি৷ আমরা তখন থানায় জিডি করেছি৷ থানা মামলা নেয়নি৷ পরে আদালতে মামলা করেছি৷ মামলার তদন্ত শেষে পল্লবী থানা চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে৷ তারা বলেছে ওই নামে একজন নিখোঁজ হয়েছেন সত্য, কিন্তু এর বেশি আর কোনো তথ্য তদন্তে পাওয়া যায়নি৷’’

পিন্টুর বাবা এবছরই মারা গেছেন৷ মাও অসুস্থ৷ পুরো পরিবারটি এখন সব দিক দিয়েই বিপর্যস্ত৷ মুন্নি বলেন, ‘‘আমাদের এখন আমার ভাইয়ের ফিরে আসার অপেক্ষা করা ছাড়া আর কিছুই করার নাই৷ আমার ধারণা, রাজনীতি করার কারণেই পিন্টুকে অপহরণ করা হয়েছে৷ যতদিন বেঁচে থাকব আমার ভাইকে আমি ফেরত চাইব৷’’

ক্যানাডার ম্যাগগিল ইউনিভার্সিটির ছাত্র ইশরাক আহমেদ ২০১৭ সালের ২৮ আগস্ট রাত সাড়ে ৮ টার দিকে ধানমন্ডির স্টার কাবাবের সামনে থেকে নিখোঁজ হন৷ তিনি কোরবানির ঈদ করতে ঢাকায় এসেছিলেন৷ ওই এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে তাকে অপহরণের বিষয়টি নিশ্চত হওয়া যায়৷ কিন্তু এত দিনেও তার কোনো খোঁজ দিতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী৷ ইশরাকের বাবা গার্মেন্টস মালিক জামাল আহমেদ জানান,‘‘পুলিশ প্রথম দিকে আন্তরিক হলেও পরে আর তারা ইশরাককে উদ্ধারে তৎপরতা দেখায়নি৷ র‌্যাব এসে ইশরাকের ল্যাপটপসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক গ্যাজেট নিয়ে গেছে৷’’

জামাল আহমেদ জানান, তার ছেলে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিল না৷ কোনো অপরাধের ঘটনার সঙ্গেও জড়িত ছিল না৷ ম্যাগগিল ইউনিভার্সিটিতে মাত্র প্রথম সেমিস্টার শেষ করেছিলেন তিনি৷ তারপরই দেশে এসে নিখোঁজ হয়ে যান৷ ‘‘আমি বাবা হয়েও তার জন্য অপেক্ষা ছাড়া আর কিছুই করতে পারছি না৷’’ নিখোঁজ হওয়ার পর কেউ মুক্তিপন চায় নি৷ জামাল আহমেদ এখনও জানেন না তার ছেলেকে কারা নিয়ে গেল৷ ‘‘মুক্তিপনের জন্য অপহরণ করলে আমার কাছে তো অপহরণকারীরা মুক্তিপণ চাইতো৷ তাও তো চায়নি৷ তাহলে আমার ছেলেকে অপহরণ করল কারা?’’ প্রশ্ন এই হতভাগ্য বাবার৷

গল্পগুলো একই রকম

‘সমাজে একটি ভয়ার্ত পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে’

নিখোঁজ আর গুমের ঘটনাগুলোর গল্প প্রায় একই রকম৷ প্রায় ক্ষেত্রেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে সাদা পোশাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়৷ তাদের হাতে আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্রও থাকে৷ যারা ফিরে আসতে পারেন তারা সাধারণত কোনো কথা বলেন না৷ তাদের মধ্যে সব সময় এক ধরনের ভয় কাজ করে৷ মানবাধিকার কর্মী এবং আসক-এর সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খান বলেন, ‘‘যারা ফিরে এসেছেন তাদের কয়েকজনের সাথে আমি কথা বলতে পেরেছি৷ তাদের ভাষ্য মতে অপহরণের পর তাদের গোপন জায়গায় বন্দি রাখা হয়৷ পাহারায় যারা থাকেন তারা প্রশিক্ষিত৷ আর অপহরণ করা হয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে৷ অপহরণকারীরাও প্রশিক্ষিত৷ তাদের শারীরিক গঠনই বলে দেয় তারা পেশাদার৷’’

তিনি বলেন, এই নিখোঁজ হওয়াদের কাউকে কাউকে কয়েক মাস পরও গ্রেপ্তার দেখানোর নজির আছে৷ নিখোঁজ ও গুম নিয়ে যা একটি বড় প্রশ্নের জন্ম দেয়৷

নূর খানের মতে, যারা নিখোঁজ বা গুম হন তাদের একটি অংশ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী, ক্ষমতাসীন দলের লোকও এর শিকার হয়েছেন৷ যাদের নামে বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগ আছে এরকম ব্যক্তিরাও গুমের শিকার হয়েছেন৷

নিখোঁজ বা গুমের শিকার যারা হন তাদের পরিবার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তেমন কোনো সহযোগিতা পায় না৷ উল্টো হয়রানির শিকার হন বলেও অভিযোগ আছে৷ নূর খান বলেন, ‘‘এর মাধ্যমে সমাজে একটি ভয়ার্ত পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে৷’’

এনিয়ে চেষ্টা করেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি৷ আর পুলিশ সদর দপ্তর কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি৷

এদিকে আসক এক বিবৃতিতে গুমের শিকার নিখোঁজ ব্যক্তিদের অবিলম্বে খুঁজে বের করা এবং স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করে দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছে৷ একই সঙ্গে বাংলাদেশকে গুম সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সনদ স্বাক্ষর করে গুম প্রতিরোধে সরকারের সদিচ্ছা প্রকাশে আহ্বান জানিয়েছে এই মানবাধিকার সংগঠনটি৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান