1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশে গৃহকর্মী নির্যাতন

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫

ক্রিকেটার শাহাদাত হোসেন ও তাঁর স্ত্রী শিশু গৃহকর্মী নির্যাতনের মামলার আসামি হওয়ার পর আলোচনায় উঠে এসেছে গৃহকর্মী নির্যাতনের ভয়াবহতা৷ জাতীয় দলের ক্রিকেটার মানেই ‘বীর'৷ তাই বীরের ‘অপকর্ম' সাধারণ মানুষ মানতে পারছেন না৷

https://p.dw.com/p/1GT9m
Symbolbild Indien Mädchen Hausarbeit Hausmädchen Ausbeutung
ছবি: picture-alliance/Godong

এই নির্যাতনের ঘটনা তিনদিন আগে ঘটলেও এখনো শাহাদাত বা তাঁর স্ত্রী কেউই গ্রেপ্তার হননি৷ পুলিশ বলছে তাঁরা পলাতক, বাসায় তালা ঝুলছে৷ কিন্তু এটা ব্যতিক্রম কোনো ঘটনা নয়৷ কারণ গত ১০ বছরে বাংলাদেশে গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনায় কারুর শাস্তি হয়েছে বলে শোনা যায়নি৷ এখানে আইন যেন গৃহকর্মীদের ঠিক নাগরিক হিসেবে মেনে নিতে পারছে না৷ তার প্রমাণও আছে৷ ২০১২ সাল থেকে ‘ডোমেস্টিক ওয়ার্কার রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড প্রটেকশন অ্যাক্ট' নামে একটি আইনের জন্য কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন আন্দোলন করে আসলেও, তাতে সরকার এখনো সাড়া দেয়নি৷

বাংলাদেশে সাধারণ হিসেবে ২০ লাখ গৃহকর্মী থাকার কথা বলা হয়৷ এর বড় একটি অংশ নারী এবং শিশু৷ গত ১০ বছরে ৮৯৯ জন গৃহকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে তথ্য-প্রমাণ রয়েছে৷ ইন্সটিউট অফ লেবার স্টাডিজ-এর হিসাব মতে, গত বছর ৫১ জন গৃহকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, যাঁদের মধ্যে ঢাকায় নির্যাতনের শিকার হন ৩৪ জন৷

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব মতে, ২০১৩ সালে অন্তত ১০০ জন গৃহকর্মী বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন৷ এঁদের মধ্যে ৩৮ জন শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন৷ যাঁদের মধ্যে আবার ২০ জনের বয়স ৭ থেকে ১২ বছরের মধ্যে৷ শারীরিক নির্যাতনের পর মৃত্যু হয়েছে ১৫ জনের৷ অন্যান্য নির্যাতনে মৃত্যু হয়েছে ৩২ জনের৷ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন তিনজন, ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে আরো তিনজনকে৷ এছাড়া আত্মহত্যা করেছেন আটজন এবং গর্ভপাতকালে মুত্যু হয় একজনের৷ পুলিশের হিসাব অনুযায়ী, গত বছরের শেষ চার মাসে ১০৭ জন গৃহকর্মী আত্মহত্যা করেছেন৷

‘ডোমেস্টিক ওয়াকার্স রাইটস নেটওয়ার্ক'-এর হিসাব অনুযায়ী ২০০১ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে শুধু ঢাকা শহরেই ৫৬৭ জন গৃহকর্মীর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে৷ বলা বাহুল্য, বাংলাদেশে গৃহকর্মীদের মধ্যে প্রায় ৩০ ভাগের বয়স ৬ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে৷ এই শিশুদের মধ্যে ১৭ ভাগই কোনো না কোনো ধরণের নির্যাতনের শিকার৷

এ সব তথ্যের মধ্যে অসঙ্গতি থাকতে পারে৷ কারণ গৃহকর্মী নিবন্ধন এবং তাঁদের নির্যাতনের ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো তথ্য-ভাণ্ডার নেই৷ নানা সংগঠন বিচ্ছিন্নভাবে কিছু জরিপ এবং তথ্য সংগ্রহ করেছে মাত্র৷ তবে তথ্যগত অসঙ্গতি থাকলেও এইসব জরিপে গৃহকর্মী নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র স্পষ্ট৷ আর এটাও পূর্নাঙ্গ চিত্র ন৷ কারণ যেসব তথ্য দেয়া হয়েছে, তা সংগ্রহ করা হয়েছে থানায় দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে৷ অধিকাংশ ঘটনাতেই অবশ্য থানায় অভিযোগ করা হয় না৷ নির্যাতনের পর চাপের মুখে বা টাকার বিনিময়ে সমঝোতা করা হয় মাত্র৷

এই পরিসংখ্যানের একটি দিক একটু বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন৷ তবে তা করতে হবে ধর্ষণ-হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বাদ দিয়ে৷ কারণ হত্যাকাণ্ড তো স্পষ্টতই হত্যাকাণ্ড৷ কিন্তু আরো অনেক হত্যা আছে, যা সাদা চোখে বোঝা যায় না৷ পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৩ সালে আটজন গৃহকর্মী আত্মহত্যা করেছেন৷ আর ২০১৪ সালের শেষ চার মাসে ১০৭ জন গৃহকর্মী আত্মহত্যা করেছেন৷ তাছাড়া ১২ বছরে অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে ৫৬৭ জন গৃহকর্মীর৷ কেন? কেউ কি তলিয়ে দেখার চেষ্টা করেছেন এত বিপূল সংখ্যায় কেন গৃহকর্মীরা আত্মহত্যা করেছেন? তাঁরা আত্মহত্যা করেছেন না তাঁদের আত্মহত্যায় বাধ্য করা হচ্ছে? অথবা হত্যাকেই কি আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে?

গত ১০ বছরে বাংলাদেশে গৃহকর্মী নির্যাতনের বিচার হওয়ার কোনো নজির আমাদের জানা নেই৷ ‘বাংলাদেশ ইন্সটিউট অফ লেবার স্ট্যাডিজ'-ও তাই বলছে৷ তাহলে প্রশ্ন কেন বিচার হয় না? এই প্রশ্নের উত্তর খুব সোজা৷ যাঁরা গৃহকর্মী তাঁরা সবচেয়ে দরিদ্র৷ আর যাঁরা গৃহকর্মী রাখেন, তাঁরা কম-বেশি সম্পদশালী, ক্ষমতাবান৷ মামলা করলেও সেই মামলা চালানোর মতো আর্থিক ক্ষমতা থাকে না নির্যাতিত বা নিহতের পরিবারের৷ তাই তাঁরা শেষ পর্যন্ত সমঝোতা করেন বা মামলা চালাতে পারেন না৷

বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) ২০১২ সালে সরকারের কাছে গৃহকর্মীদের জন্য ‘ডোমেস্টিক ওয়ার্কার রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড প্রেটেকশন অ্যাক্ট' নামে একটি আইনের খসড়া প্রস্তাব করে৷ দেশের সর্বোচ্চ আদালত একটি সুরক্ষা আইন করার নির্দেশ দিয়েছে৷ কিন্তু এখনো সরকার সেই আইন করেনি৷ প্রস্তাবিত আইনে গৃহশ্রমিকদের কর্মঘণ্টা, বেতন কাঠামো, সুরক্ষা সব কিছুর কথাই বলা আছে৷ কিন্তু কে সেই আইন প্রণয়ন করবে? নির্যাতিত এই দরিদ্র গৃহকর্মীদের জন্য সংসদ সদস্যরাও হয়ত সময় বের করতে পারছেন না৷

ক্রিকেটার শাহাদাত পালিয়েছেন বলে পুলিশ দাবি করেছে৷ কিন্তু অনেক প্রভাবশালীর গৃহকর্মী নির্যাতনের পর পালাবারও প্রয়োজন পড়ে না৷ কারণ তাঁরা উল্টো গৃহকর্মীকেই মানসিক রোগী সাজিয়ে পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেন৷ এরকম অনেক নজির আছে৷ ক্রিকেটার শাহাদাত হয়ত সে সুযোগ পাননি সংবাদমাধ্যম সরব হওয়ার কারণে৷ বলা বাহুল্য, সংবাদমাধ্যম এবার সরব হয়েছে খবরটি ‘সেল' বা বিক্রি করার জন্য৷ কারণ এ ঘটনায় ‘জাতীয় বীরদের' একজন জড়িত৷ এমনটা না হলে নির্যাতিত গৃহকর্মীর জন্য সংবাদমাধ্যমের মন এত কাঁদত কি? তা না হলে আমরা প্রতিদিনই যে সংবাদমাধ্যমে গৃহকর্মী নির্যাতনের খবর পেতাম৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য