1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পাহাড়ি গোরিলা

সিমোনে শ্লিন্ডভাইন/এসি৯ নভেম্বর ২০১২

আফ্রিকার প্রাচীনতম অভয়ারণ্য হল কঙ্গোর ভিরুঙ্গা ন্যাশনাল পার্ক, কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের সীমান্ত এলাকায়৷ এখানেই অতি দুষ্প্রাপ্য পাহাড়ি গোরিলাদের বাস৷ অথচ ঠিক এখানেই সশস্ত্র বিদ্রোহীরা আস্তানা গেড়েছে৷

https://p.dw.com/p/16ftd
ছবি: Reisedoktor/Wikipedia

এ'বছরের বসন্তেই আবার যুদ্ধ শুরু হয়েছে৷ ভিরুঙ্গা ন্যাশনাল পার্কে আবার বিদ্রোহী, সরকারি সৈন্য এবং দস্যুদের দেখতে পাওয়া যাচ্ছে৷ অপরদিকে এম টোয়েন্টি-থ্রি নামধারী একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী পাহাড়ি গোরিলা দেখতে আসা পশ্চিমা পর্যটকদের অর্থোপার্জ্জনের উৎস হিসেবে আবিষ্কার করেছে৷ বিশেষভাবে বিপন্ন পাহাড়ি গোরিলাদের জন্য সেটা শাপ, না বর, তা বলা শক্ত৷

কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলে ভিরুঙ্গা ন্যাশনাল পার্কের একটি অংশে বাচ্চা গোরিলাদের রাখা হয়৷ শুধু রাখা নয়, রীতিমতো প্রতিপালন করা হয়৷ বাচ্চা গোরিলাদের জন্য বিভাগটির সৃষ্টি একটি ট্র্যাজেডি থেকে: ২০০৭ সালে ভিরুঙ্গা পার্কে বহু পাহাড়ি গোরিলা মারা পড়ে৷ পার্ক রেঞ্জাররা তাদের কিছু বাচ্চা খুঁজে পায় এবং তাদের পার্কের মুখ্য কার্যালয়ে নিয়ে আসে৷ সেখানেই তাদের রাখা এবং মানুষ করা হয়৷ পরে এ'ধরণের আরো অনেক মা-মরা গোরিলা শিশু যুক্ত হয়৷

Gorillas Virunga Nationalpark Ostkongo
কঙ্গোর ভিরুঙ্গা ন্যাশনাল পার্কের দুষ্প্রাপ্য পাহাড়ি গোরিলাছবি: DW/S.Schlindwein

পার্কের রেঞ্জার অন্দ্রে বহুমা এই অনাথ গোরিলাগুলির লালন-পালনের দায়িত্বে৷ বহুমা বলেন:

‘‘এই বাচ্চাগুলো আমার নিজের ছেলেমেয়ের মতো, আর ওরা আমাকে ওদের বাবা বলে মনে করে৷ ওদের যখন খুঁজে পাওয়া যায়, তখন ওরা এতো ছোট ছিল যে, আমাকে সর্বক্ষণ ওদের সঙ্গে থাকতে হতো৷ আমার সঙ্গে একই বিছানায় শুতো, ফিডিং বটল দিয়ে ওদের খাওয়াতে হতো৷ পিঠে করে নিয়ে ঘুরেছি, হাঁটাতে শিখিয়েছি, খেতে শিখিয়েছি৷ তার ফলে আমাদের একটা গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠেছে৷''

আর কোনো অভয়ারণ্য ভিরুঙ্গা পার্কের মতো এতো যুদ্ধ-বিগ্রহ দেখেছে কিনা সন্দেহ৷ এ বছরের বসন্তে যুদ্ধ আবার শুরু হওয়া যাবৎ বিদ্রোহীদের অগণিত দল জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছে৷ জঙ্গলই তাদের গা ঢাকা দেবার জায়গা৷ তারা এখানেই তথাকথিত ‘বুশ মিট' বা জংলি প্রাণীর মাংস শিকার করে খায়৷ তাদের জন্যই দুষ্প্রাপ্য বণ্য প্রাণীদের মধ্যে মানুষের আনা রোগজীবাণু ছড়ায়৷ অভয়ারণ্যের পরিচালক এমানুয়েল দ্য মেরোদ বলেন:

Gorilla mit Blatt
নির্বিচারে গাছ কাটার ফলে গোরিলাদের বিপদ ঘনাচ্ছেছবি: CC/by-sa-sentouno

‘‘বিদ্রোহীদের ফলে অভয়ারণ্য প্রায় দু'ভাগে বিভক্ত৷ দক্ষিণাংশ এম টোয়েন্টি-থ্রি বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে৷ আমাদের মুখ্য কার্যালয় এখানেই৷ উত্তরাংশটি সরকারি সৈন্যদের নিয়ন্ত্রণে৷ সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা নিরপেক্ষ৷ কিন্তু এটা একটা কঠিন পরিস্থিতি৷ গোরিলারা পার্কের যে অংশে, সেখানে আমাদের যাবার উপায় নেই৷ আমরা বিদ্রোহীদের সঙ্গে একটা সমঝোতায় আসার চেষ্টা করছি৷ ''

দ্য মেরোদ জানালেন যে শুধু এম টোয়েন্টি-থ্রি বিদ্রোহীরাই নয়, অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীও অভয়ারণ্যে অনুপ্রবেশ করেছে৷ রুয়ান্ডার হুটু সশস্ত্র গোষ্ঠী এফডিএলআর নিয়মিতভাবে পার্ক রেঞ্জারদের আক্রমণ করে থাকে৷ ১৯৯৬ সালে যুদ্ধ শুরু হওয়া যাবৎ ১৪০ জন পার্ক রেঞ্জার নিহত হয়েছে৷ শুধুমাত্র বিগত দেড় বছরেই ১২ জন পার্ক রেঞ্জার প্রাণ হারিয়েছে৷

সেক্ষেত্রে পাহাড়ি গোরিলারা কেমন আছে, সে বিষয়ে দ্য মেরোদ কিছু বলতে অক্ষম৷ গোরিলাদের এলাকায় গোলাগুলি চলেছে এবং কিছুকাল আগে সরকারি সেনাবাহিনী ও জাতিসংঘের রক্ষীবাহিনীর জঙ্গি হেলিকপ্টার সেখানে বোমা ফেলেছে, বলে জানালেন তিনি৷

Berggorillas in Uganda
গোরিলা দেখার চেষ্টা করছেন পর্যটকরাছবি: Rainer Dückerhoff

গোরিলাদের আরেকটি বিপদ ঘনাচ্ছে গাছ কাটার ফলে৷ অভয়ারণ্যের গাছ কেটে কাঠকয়লা বানানোটা একটা ব্যবসা হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ পূর্ব কঙ্গোয় বিদ্যুৎ সরবরাহ নেই, কাজেই কাঠ এবং কাঠকয়লাই একমাত্র ভরসা৷ পার্কের দক্ষিণ সীমান্তেই গোমা শহর৷ হুটু বিদ্রোহীরা এই কাঠের ব্যবসা আবিষ্কার করেছে, যার আয়তন এখন বছরে সাড়ে তিন কোটি ডলার৷

ওদিকে এম টোয়েন্টি-থ্রি বিদ্রোহীরা আবিষ্কার করেছে ‘গোরিলা পর্যটন'৷ তারা এখন নিজেদের পরিবেশ সংরক্ষণকারী হিসেবে দেখাতে চায়৷ গত জুলাইতে ভিরুঙ্গা পার্কের সেই অংশটা তাদের হাতে আসে, যেখানে পাহাড়ি গোরিলাদের বাস৷ এছাড়া তারা এখন তাদের নিজেদের সরকার, প্রশাসন, এ সবও স্থাপন করছে, তা সে স্বীকৃত হোক আর নাই হোক৷ তাদের নবনিযুক্ত পরিবেশ তথা উন্নয়ন মন্ত্রী স্ট্যানিসলাস বালেকে বলেছেন:

‘‘পর্যটনমন্ত্রী হিসেবে আমি বলতে পারি, পর্যটকরা আমাদের মাধ্যমে গোরিলা দেখতে আসছেন৷ অগাস্ট মাস যাবৎ ৩৮ জন বিদেশি পর্যটক এসেছেন৷....মার্কিন, ব্রিটিশ এবং বেলজিয়ান ট্যুরিস্টরা আসছেন এবং আমরা তাদের পূর্ণ নিরাপত্তার গ্যারান্টি দিচ্ছি৷''

সেই নিরাপত্তার কিছুটা যদি পাহাড়ি গোরিলাদেরও দেওয়া যেতো...

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য