1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গোচারণ নাকি ম্যানগ্রোভ?

২৭ এপ্রিল ২০১৭

পানামার ম্যানগ্রোভ অরণ্যগুলোর বিপদ ঘনিয়েছে পরিবেশের দরুণ নয়৷ এখানকার মানুষজন গরু পোষেন আর গরুর চামড়া ‘ডাই' বা রং করার প্রিয় উপাদান হলো ম্যানগ্রোভ গাছের ছাল৷ তাও ধারাবদলের চেষ্টা চলেছে৷

https://p.dw.com/p/2c0ME
Mangrovenwald in Australien
ছবি: picture-alliance/dpa/ZMT

পানামার দক্ষিণ উপকূলে চিরিকি প্রদেশ৷ সেখানকার ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট বা শ্বাসমূল অরণ্য গ্রামগুলিকে সাগরের বান থেকে রক্ষা করে; ম্যানগ্রোভ শিকড়ের ফাঁকে-ফোকরে বহু প্রাণী বাস করে৷ আর তা থেকে এখানকার বাসিন্দাদেরও কিছুটা রোজগার হয়৷ যেমন রোবের্তো মারিয়ানো ও তাঁর ১২ সদস্যের পরিবারের দিন চলে এই ম্যানগ্রোভ এলাকার খালে-বিলে মাছ ধরে৷

কিন্তু পানামার ম্যানগ্রোভ অরণ্য বিগত কয়েক দশকের মধ্যে অতিরিক্ত কাঠ কাটার ফলে অর্ধেক হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ রোবের্তো বলেন, ‘‘ওরা কাছেই একটা মোটরওয়ে তৈরি করেছে৷ তার ফলে অনেক তেল নদীতে এসে পড়েছে৷ ফলে আগে এখানে যত ঝিনুক ছিল, তার অনেকটাই ধ্বংস হয়েছে৷ কাঁকড়া আর চিংড়ির মতো অন্যান্য ছোট ছোট প্রাণীও বিপন্ন৷ আমার ছেলেবেলায় এই এলাকাটা ঝিনুকে ভর্তি ছিল; এখন তার সবই উধাও হয়েছে৷''

অতীতের ভুলের পুনরাবৃত্তি করতে চান না তারা৷ ম্যানগ্রোভগুলো যেন অক্ষত থাকে, সেজন্য এখানে অনেকেই সচেষ্ট – যেমন রোবের্তো মারিয়ানোর দশ বছর বয়সের মেয়ে সিলভিয়া৷ সিলভিয়া বলল, ‘‘কাঠ কাটা ও ম্যানগ্রোভ নোংরা করা উচিত নয়৷''

বাঁচানোর চেষ্টা

পানামার জলাভূমি অঞ্চলকে বাঁচানোর একটি প্রকল্পে অংশ নিচ্ছে সিলভিয়া৷ সে আর তার স্কুলের সাথীরা মিলে ‘তরুণ ম্যানগ্রোভরক্ষী'-দের একটি দল গড়ে তুলেছে৷ দিনে দু'বার করে তারা হ্রদ থেকে জল তুলে নিয়ে যায় খাড়া ঢাল বেয়ে৷ এই জল দিয়ে স্কুলের কম্পাউন্ডে ম্যানগ্রোভের চারা বড় করছে তারা৷ এই শিশুরা তাদের অবসরসময়ে একটা নার্সারি গড়ে তুলেছে আর সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে ম্যানগ্রোভ চারাগুলোর যত্ন নিচ্ছে৷

নীচের জলাভূমিতে পানামার পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের প্রযুক্তিবিদরা প্রকল্পের আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ দিকের উপর নজর রাখছেন৷ জলাভূমি কতটা কার্বন ডাই-অক্সাইড শুষে নেয়, সেটা তারা মেপে দেখছেন৷ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, এ ব্যাপারে ম্যানগ্রোভ অরণ্য খুবই কার্যকরি: ম্যানগ্রোভ অরণ্য সাধারণ গাছগাছালির চেয়ে পাঁচগুণ বেশি কার্বন ডাই-অক্সাইড শুষে নিতে পারে৷

পানামার পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের রোসিলেনা লিন্দো বললেন, ‘‘আমরা জানতে চেয়েছিলাম, এখানকার ম্যানগ্রোভগুলো ঠিক কী পরিমাণ কার্বন ডাইঅক্সাইড শুষে নিতে পারে আর তা আর কত বেশি হতে পারে৷ তা থেকে আমরা জানতে পারব, জলবায়ু সুরক্ষায় পানামা কতটা অবদান রাখতে পারে৷ সেজন্যই আমরা এই কাজ করছি৷''

‘কাস্কারেরোস'

জাতিসংঘের সহযোগিতায় পানামা সরকার একটি নির্দেশাবলী সৃষ্টি করছে, যার লক্ষ্য হবে, দেশটি যাতে জলবায়ু সংরক্ষণের ক্ষেত্রে তার আন্তর্জাতিক বিধিবদ্ধতা পূরণ করতে পারে, তার ব্যবস্থা করা৷ এক্ষেত্রে মূল বাধা হলো গো-পালন৷ বাসিন্দারা বন কেটে চারণভূমি সৃষ্টি করেন৷ গরুর চামড়া রং করার জন্য এই ‘কাস্কারেরোস' আবার ম্যানগ্রোভ গাছের ছাল ব্যবহার করেন৷

রঞ্জনকার্য সমিতির প্রধান আরিস তেহেইরা বললেন, ‘‘হ্যাঁ, কাস্কারেরোস হিসেবে আমাদের ম্যানগ্রোভ গাছের ছালের প্রয়োজন পড়ে৷ যুগপৎ আমরা ম্যানগ্রোভ অরণ্যের পুনর্বনানীকরণে প্রতিবছর সাহায্য করছি৷ ২০১৪ সালে আমরা লাহাস হ্রদে ৩০,০০০ চারা পুঁতেছি, ২০১৫ সালে পুঁতেছি ন'হাজার চারা আর গতবছর পাঁচ হাজার৷''

কাস্কারেরোদের কয়েকজনকে মৌমাছি পুষতে শেখানো হচ্ছে৷ মধু বেচেও বাড়তি রোজগার হওয়ার আশা আছে, যদিও প্রকল্পের এই অংশ সবে শুরু হয়েছে৷ চামড়া রং করার পরিবর্তে মধু বেচে একই পরিমাণ রোজগার করার আশা কম৷ তেহেইরা বললেন, ‘‘মানুষজন চামড়ার উৎপাদন আর সেই চামড়া ছোপানোর জন্য ম্যানগ্রোভ গাছের ছালের উপর বিশেষভাবে নির্ভর করে৷ এ অঞ্চলের প্রায় ১,০০০ পরিবারের জীবিকা আসে ঐ কাজ থেকে৷ এদেশে চামড়ার চাহিদা অনেক৷''

এলাকায় চামড়ার ব্যবসা বেশ ভালো শিকড় গেড়েছে৷ ম্যানগ্রোভ গাছের ছাল দিয়ে ঐ চামড়া রং করা হয়৷ গাছের ছাল গুঁড়ো করে চৌবাচ্চার জলে মেশানো হয়, যা থেকে কাঁচা চামড়ায় লালচে রং ধরে৷ এই ছোট্ট কারখানাটি থেকে সপ্তাহে হাজার দেড়েক মার্কিন ডলার মুনাফা হয়৷

ক্রিস্টোফার স্প্রিংগেট/এসি