1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গোড়াতেই সুরক্ষা বিধির দফারফা

পায়েল সামন্ত কলকাতা
৬ জুন ২০২০

লকডাউন তোলার প্রথম পর্যায়েই সামাজিক দূরত্বের দফারফা৷ গণপরিবহণে বিপুল ভীড়ে সংক্রমণের আশঙ্কা৷ ঢিলেঢালা মনোভাবে অনেকের মুখেই নেই মাস্ক৷

https://p.dw.com/p/3dLFf
গণপরিবহণে বিপুল ভীড়ে সংক্রমণের আশঙ্কা৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay

আড়াই মাসের লকডাউনের পর কিছুটা শিথিল হতে শুরু করেছে বিধিনিষেধ৷ সরকারের ঘোষণায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আবেদন থাকলেও আনলক-এর প্রথম দফায় যথেষ্ট ঢিলেঢালা মনোভাব চোখে পড়ছে৷ শহরতলির ট্রেন এখনো চালু হয়নি৷ গণপরিবহণ হিসেবে বাস রাস্তায় নেমেছে কলকাতায়৷ কিন্তু, বাসে ভীড় দেখলে মনে হচ্ছে না, লকডাউন সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়নি৷ বাজার থেকে সেলুন, সর্বত্রই একই ছবি৷ এরই মধ্যে বেড়ে চলেছে সংক্রমণ৷

দীর্ঘ দুমাসের বেশি সময় পশ্চিমবঙ্গে গণপরিবহণ কার্যত বন্ধ ছিল৷ জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের জন্য হাতে গোনা সরকারি বাস চলত৷ ধীরে ধীরে বাড়ানো হয়েছে বাসের সংখ্যা৷ প্রথমে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, প্রতি বাসে ২০ জনের বেশি যাত্রী তোলা যাবে না৷ এ মাসে সিদ্ধান্ত হয়েছে, বাসে যতগুলি আসন, তত সংখ্যায় যাত্রী বাসে উঠতে পারবেন৷ তবে কেউ দাঁড়াতে পারবেন না৷ বাস্তবে কী দেখা যাচ্ছে? লকডাউন শিথিল হতে  রাস্তায় মানুষ নেমে পড়েছে৷ টার্মিনাসে লম্বা লাইন৷ ঘণ্টা দুয়েক দাঁড়িয়ে বাসে উঠতে হচ্ছে৷ ডানলপ থেকে এস-৯ বাসে চেপে ভবানীপুরের অফিসে যান বরাহনগরের বাসিন্দা অরিন্দম রক্ষিত৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘টার্মিনাসে বাসের সংখ্যা যথেষ্ট নয়৷ একটা বাসে অল্প কয়েকজন যাত্রীকে তুলছে৷ তার থেকে বেশি মানুষ সেই সময়ে লাইনে এসে দাঁড়াচ্ছে৷ এর ফলে লাইন ক্রমশ বড় হচ্ছে৷ বাস বেশি না চালালে মুশকিল৷’’

ডা. শুভজিৎ রায়

বাসে কোনো যাত্রীর না দাঁড়ানোর নির্দেশ থাকলেও বাস্তবে তা হচ্ছে না৷ স্টপে দাঁড়িয়ে থাকা অসংখ্য যাত্রী কন্ডাক্টরের নিষেধ তোয়াক্কা না করে বাসে উঠে পড়ছেন৷ এর ফলে সামাজিক দূরত্বের দফারফা৷ দিনকয়েক আগে রুবি যাওয়ার জন্য এস-২৪ বাসে উঠেছিলেন তালতলার বাসিন্দা মুকুল অধিকারী৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘গায়ের উপর মানুষ উঠে যাচ্ছে৷ আমাকেও অফিস যেতে হত৷ এত ভিড় হয়ে গেল যে নেমে যাব ভেবেছিলাম৷ কিন্তু, সেই উপায়ও ছিল না৷’’ বৃহস্পতিবার থেকে বেসরকারি বাস পথে নামায় সমস্যার কিছুটা সুরাহা হওয়ার কথা ছিল৷ কিন্তু, এক্ষেত্রে অন্য সমস্যা দেখা দিয়েছে৷ সরকারি বাসের ভাড়া নিয়ে বিতর্ক না থাকলেও বেসরকারি বাস যেমন খুশি ভাড়া চাইছে বলে অভিযোগ৷ বাঙুর থেকে ছেড়ে আসা বেসরকারি ২২৭ নম্বর বাসে লেকটাউন থেকে উঠেছিলেন শর্মিলা বসাক৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘অন্য সময় শিয়ালদহ যেতে ৯ টাকা ভাড়া দিই৷ আমার কাছে ১৫ টাকা চেয়েছেন কন্ডাক্টর৷ এখন তো বাস ২০ জনকে নিয়ে চলছে না যে এত টাকা বেশি দিতে হবে৷’’

জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেট-এর কর্তা তপন বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য জানিয়েছেন, ‘‘বেশি ভাড়া নেওয়ার কথাই নয়৷ যাঁরা নিয়েছেন, তাঁদের নিষেধ করা হয়েছে৷’’

আনলক-এর প্রথম পর্যায়ে খুলে গিয়েছে অধিকাংশ দোকানপাট৷ তেলেভাজা, ফাস্টফুড থেকে ফুচকা, সবই পাওয়া যাচ্ছে রাস্তার ধারে৷ তবে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা যেখান থেকে সবচেয়ে বেশি, সেই সেলুনও চলছে হইহই করে৷ ইটালগাছার একটি সেলুনে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা মানস তরফদার দেখেন, সুরক্ষা বিধি মানা হচ্ছে না৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সেলুন কর্মী গ্লাভস পরেননি৷ নেই স্যানিটাইজার৷ এটা দেখে আমি বাড়ি ফিরে আসি৷ কিন্তু, অনেকেই চুল-দাড়ি কাটাচ্ছেন৷ তাঁদের অনেকের মুখে মাস্ক নেই৷ বিউটি পার্লার, মল, রেস্তোরাঁয় কী অবস্থা হবে ভাবছি৷’’

অথচ এর মধ্যেই সংক্রমণের হার রোজই বাড়ছে৷ গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে প্রায় ১০ হাজার মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন৷ কোভিড সেন্টারের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন চিকিৎসকরা আশঙ্কিত৷ দুরবারজপুর হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার ডা. শুভজিৎ রায় বলেন, ‘‘পর্যাপ্ত গণপরিবহণের ব্যবস্থা না করে সব খুলে দিলে সংক্রমণ বেড়ে যাবে৷ লকডাউন চিরকাল চলতে পারে না৷ এই সময়টায় ভাইরাস রুখতে আমরা প্রস্তুতি নিই৷ লকডাউনের পর রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়লে সেটার মোকাবিলা করতে হবে৷ কিন্তু, আমাদের দেশের মানুষের অজ্ঞানতার জন্য পরিস্থিতি আরো প্রতিকূল হয়ে যায়৷’’