1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গ্রহাণুর ওপর নজর রাখবে নতুন ‘কমপ্যাক্ট’ স্যাটেলাইট

২৯ মার্চ ২০১০

পৃথিবীর বুকে বসে আমরা নিজেদের সমস্যা নিয়েই সদা ব্যস্ত রয়েছি৷ কিন্তু আকাশ থেকে যে বিপদ আমাদের মাথার উপর নেমে আসতে পারে, তার কথা আমরা খুব একটা ভাবি কি?

https://p.dw.com/p/Mgh5
মহাশুন্যে ভাসছে নাসার কেপলার দূরবীনছবি: AP

চিন্তা নেই, আমার-আপনার না ভাবলেও চলবে৷ জার্মান মহাকাশ সংস্থা ডিএলআর এবার অভিনব এক প্রকল্পের মাধ্যমে নজরদারি আরও বাড়াতে চলেছে৷ কীভাবে?

একবার ভেবে দেখুন৷ পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে বিশাল এক অ্যাস্টারয়েড বা গ্রহাণু৷ বায়ুমণ্ডলের স্তর ভেদ করে সব বাধা অতিক্রম করে তা এসে আছড়ে পড়লো পৃথিবীর বুকে৷ এককালে ডাইনোসরদের সঙ্গে যা ঘটেছিল, এবার সমগ্র জীবজগতের সঙ্গেও সেই একই ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটল৷ পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল প্রাণের স্পন্দন৷

না, ভয় পাবেন না৷ অদূর ভবিষ্যতে এমন আশঙ্কার কোন কারণ বিজ্ঞানীরা দেখছেন না৷ তবে তাঁদের সতর্ক দৃষ্টি রয়েছে মহাকাশের দিকে৷ সম্ভাব্য সব মহাজাগতিক বস্তুর গতিবিধির উপর সর্বদা নজর রেখে চলেছে নানা টেলিস্কোপ ও যন্ত্রপাতি৷ জাতিসংঘের ছত্রছায়ায় এই সব উদ্যোগের মধ্যে সমন্বয় করা হয়৷ এবার তার সঙ্গে যোগ হচ্ছে এক বিশেষ ধরনের স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক – যাকে বলা হয় ‘কমপ্যাক্ট' স্যাটেলাইট৷ জার্মানির মহাকাশ সংস্থা ডিএলআর পৃথিবীর চারিদিকে কিছুটা নিচু কক্ষপথে এমন এক যন্ত্রচক্ষু ছাড়ার পরিকল্পনা নিয়েছে, যার দৃষ্টি এড়িয়ে কোন গ্রহাণু পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসতে পারবে না৷ ‘অ্যাস্টারয়েড-ফাইন্ডার' নামের এই অভিযান বিশেষ নজর রাখবে সেই সব গ্রহাণুর উপর, যারা পৃথিবীর কাছাকাছি ঘোরাফেরা করছে, যাদের বিপদ ঘটানোর ক্ষমতা সবচেয়ে বেশী৷ তবে শুধু বিপদের পূর্বাভাষ নয় – এই যন্ত্রচক্ষু গ্রহাণুদের সংখ্যা, চরিত্র, চালচলনের মত যাবতীয় তথ্যও সংগ্রহ করে যাবে৷ এমন বিপদ চিহ্নিত করতে আন্তর্জাতিক স্তরে যেসব উদ্যোগ রয়েছে, তার সঙ্গে যোগ হবে ‘অ্যাস্টারয়েড-ফাইন্ডার'৷ এর মাধ্যমে আমাদের সৌরজগতে বিভিন্ন মহাজাগতিক বস্তুর গতিবিধি সম্পর্কে আরও স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে৷

Schwarm von Sternen
মহাশুন্যে তারার মেলাছবি: NASA

আমরা সবাই হয়তো জানি না, যে ছোট-বড় অসংখ্য গ্রহাণু কিন্তু পৃথিবীর কক্ষপথেই বিচরণ করছে৷ বিজ্ঞানীদের ধারণা, এর মধ্যে ১,০০০-এরও বেশী বস্তুর ব্যাস ১০০ মিটারের চেয়ে বেশী৷ মহাকাশ বিজ্ঞানের পরিভাষায় এগুলিকে বলা হয় ‘ইনার আর্থ অবজেক্ট' বা আইইও৷ পৃথিবীর বুকে বসানো কোন টেলিস্কোপের মাধ্যমে এদের পর্যবেক্ষণ করা অত্যন্ত কঠিন৷ ফলে এখন পর্যন্ত মাত্র ৯টি এমন গ্রহাণুকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে৷ সূর্যোদয়ের ঠিক আগে এবং সূর্যাস্তের ঠিক পরে কিছু সময় ধরে এদের দেখা মেলে৷ এমনিতে এরা মোটামুটি শান্তই থাকে, কিন্তু শুক্রগ্রহের মত কোন বড় আকারের মহাজাগতিক বস্তু কাছাকাছি এসে গেলে এদের অভিকর্ষের ভারসাম্যে বিঘ্ন ঘটে৷ তখন যে তারা কী করে বসবে, কোনদিকে ধেয়ে যাবে, তার কোন নিশ্চয়তা নেই৷

পৃথিবীর কক্ষপথের বাসিন্দা এই সব গ্রহাণুদের পর্যবেক্ষণ করতে হলে মহাকাশে সঠিক অবস্থান নিতে হবে৷ পুরোটাই নির্ভর করছে পর্যবেক্ষক স্যাটেলাইটের অবস্থানের উপর৷ জায়গামত অবস্থান নিতে পারলে ২৪ ঘণ্টা ধরে একেবারে সূর্য পর্যন্ত ছড়িয়ে থাকা গ্রহাণুর উপর নজর রাখা সম্ভব৷

জার্মানির মহাকাশ সংস্থা ডিএলআর তার ‘অ্যাস্টারয়েড-ফাইন্ডার' নামের এই অভিযানের পরিকল্পনায় এই সব বিষয়গুলি বিবেচনা করেছে৷ তাই এই অভিযানের আওতায় যে স্যাটেলাইট সক্রিয় হবে, তার মধ্যে থাকবে ছোট একটি ২৫ সেন্টিমিটার টেলিস্কোপ৷ তার সঙ্গে যে ক্যামেরা যুক্ত থাকবে, তা যে কোন ডিজিট্যাল ক্যামেরার মত৷ দিনে ১৪ গিগাবাইট মাপের ছবি পাঠাবে এই স্যাটেলাইট৷ সূর্যের দিকে ৩০ থেকে ৬০ ডিগ্রি পর্যন্ত গোলাকার একটি এলাকায় স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবে এই যন্ত্রচক্ষু৷ তবে এই চোখ মাইনাস ৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখতে হবে৷ রাত ও দিনের মধ্যে যে আলো-আঁধারির সীমানা রয়েছে, সেই ‘টার্মিনেটার' কক্ষপথে থাকবে এই স্যাটেলাইট৷ গ্রহাণু সনাক্ত করার ক্ষেত্রে তার পিছনের নক্ষত্রগুলির দিকে নজর রাখাও জরুরি৷ কারণ যখনই কোন ক্ষুদ্র গ্রহাণু নক্ষত্রের সামনে দিয়ে যায়, তখন সেই নক্ষত্র থেকে আসা আলোর মধ্যে কিছুটা তারতম্য দেখা যায়৷ ফলে সেই গ্রহাণুর অস্তিত্ব টের পাওয়া যায়৷ এই সব গ্রহাণুর উপর কড়া নজর রাখলে তাদের নির্দিষ্ট কক্ষপথ সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যাবে৷ আপাতত এই প্রকল্পের মেয়াদ স্থির করা হয়েছে ২ বছর৷ পরে অবশ্য তা বাড়ানো যেতে পারে৷

এতকাল মার্কিন বিজ্ঞানীরাই মূলত গ্রহাণুর দিকে নজর রেখে আসতেন৷ কিন্তু সেদেশে বর্তমানে মহাকাশ কার্যক্রমের জন্য সরকারী অনুদান কমে আসছে৷ তাছাড়া মার্কিন বিজ্ঞানীরা মূলত মঙ্গলগ্রহ ও বৃহস্পতির মধ্যের এলাকায় গ্রহাণুর খোঁজ করে থাকেন – সূর্যের দিকে তাঁরা তেমন একটা নজর দেন না৷ জার্মানির ডিএলআর ‘অ্যাস্টারয়েড-ফাইন্ডার' নামের যে স্যাটেলাইট তৈরি করছে, তার ব্যয় কিন্তু অভাবনীয় মাত্রায় কম৷ এমনকি এই উদ্যোগ সফল হলে একই প্রযুক্তি ব্যবহার করে আরও অনেক সস্তার স্যাটেলাইট তৈরি করা হবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী চললে ২০১৩ সালে এই স্যাটেলাইট কক্ষপথে পৌঁছে যাবে৷

প্রতিবেদক: সঞ্জীব বর্মন

সম্পাদনা: রিয়াজুল ইসলাম