1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গ্রহাণুর হামলা থেকে পৃথিবীকে বাঁচাতে নানা উদ্যোগ

১৩ মে ২০১৯

কিছু কল্পবিজ্ঞান চলচ্চিত্রে পৃথিবীর উপর কোনো মহাজাগতিক বস্তুর আঘাতের ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে৷ কিন্তু কোনো বিপজ্জনক গ্রহাণু প্রতিরোধ করতে মানুষ কতটা প্রস্তুত? ইউরোপ ও অ্যামেরিকার বিজ্ঞানীরা সেই লক্ষ্যেই কাজ করছেন৷

https://p.dw.com/p/3IOI6
Stills Sendung Projekt Zukunft | Asteroiden
ছবি: NDR

পৃথিবীর জন্য হুমকি

 মহাকাশের গভীর থেকে গোলার মতো ছুটে আসে পাথর বা ধাতুর তৈরি গ্রহাণু৷ সেগুলির মধ্যে কয়েকটির গতিপথ এমন, যে তা পৃথিবীর জীবজগতের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে৷ প্রায় ১০ কিলোমিটার ব্যাসের এমনই একটি গ্রহাণু বহুকাল আগে আমাদের গ্রহে তাণ্ডব সৃষ্টি করেছিল৷ সেটির আঘাতে ডাইনোসার প্রজাতি লুপ্ত হয়ে যায়৷

আমরা কি এমন আঘাত থেকে পৃথিবীকে বাঁচাতে পারি? অ্যালেন হ্যারিস ইউরোপীয় ইউনিয়নের ‘নিওশিল্ড' নামের প্রকল্পের নেতৃত্ব দিচ্ছেন৷ এই মুহূর্তে এমন ‘গ্লোবাল কিলার'-এর হুমকি না থাকলেও তাঁর নেতৃত্বে একদল বিজ্ঞানী প্রতিরক্ষার কৌশল সৃষ্টির কাজে ব্যস্ত৷

বিপদের সূত্র

এখনো পর্যন্ত প্রায় ১২,০০০ মহাজাগতিক বস্তু চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে, যেগুলি খাতায়-কলমে পৃথিবীর জন্য বিপদ বয়ে আনতে পারে৷ জরুরি অবস্থা দেখা দিলে বিজ্ঞানীরা সংঘাত এড়াতে গ্রহাণুর গতিপথ পরিবর্তন করতে চান৷ কয়েক টন ওজনের মহাকাশযান সেই কঠিন কাজ করতে পারবে, এমনটাই তাঁদের লক্ষ্য৷ এমন যানের ভর তুলনামূলকভাবে সামান্য হলেও সেটি গ্রহাণুর সঙ্গে অভিকর্ষের সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে৷ ফলে গ্রহাণুর গতিপথ কিছুটা হলেও বদলে যেতে পারে৷ জার্মান এয়ারোস্পেস সেন্টারের অ্যালেন হ্যারিস বলেন, ‘‘এটি অত্যন্ত নিখুঁত এক পদ্ধতি৷ গ্রহাণুর সঠিক অবস্থান জানা থাকে৷ কিন্তু গ্রহাণু ও মহাকাশযানের মধ্যে অভিকর্ষের টান খুব দুর্বল হওয়ায় সেটির গতিপথের সামান্য বিচ্যুতি সম্ভব৷ ফলে গতিপথে বড় পরিবর্তনের জন্য অনেক সময়ের প্রয়োজন৷ হয়ত ১০ থেকে ২০ বছর৷''

কিন্তু হাতে এত সময় না থাকলে দ্বিতীয় পরিকল্পনা প্রয়োগ করতে হবে৷ মারণাত্মক মহাকাশযানের সাহায্যে গ্রহাণুর উপর আঘাত হানতে হবে৷

পরীক্ষামূলক মহড়া

২০২০ সালে এক পরীক্ষামূলক মহড়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে৷ সে বছর ইউরোপীয় ও মার্কিন মহাকাশ সংস্থা ‘ডিডিমস' ও ‘ডিডিমুন' নামের যমজ দুই গ্রহাণুর উপর হামলা চালাতে চলেছে৷ সেই অভিযানের আওতায় একটি মহাকাশযান গোটা প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করবে এবং গ্রহাণুর নমুনা সংগ্রহ করবে৷ ৩৩০ কিলোগ্রাম ওজনের দ্বিতীয় একটি যান ‘ডিডিমুন' গ্রহাণুর উপর হামলা চালাবে৷ এ যেন মহাশূন্যে বিলিয়ার্ড খেলা! এর ফলে দুই গ্রহাণুর গতিপথে কতটা পরিবর্তন ঘটবে?

 জার্মানির ফ্রাইবুর্গ শহরে অ্যার্নস্ট-মাখ ইনস্টিটিউটের গবেষকরা এক হাই-স্পিড কামানের সাহায্যে মহাকাশে গোলা নিক্ষেপের পদ্ধতির সিমুলেশন বা নকল করছেন৷ এ ক্ষেত্রে লক্ষ্যবস্তু হিসেবে বেলেপাথরের উপর কামান দাগা হচ্ছে৷

 মহাকাশের মতো এ ক্ষেত্রেও সেকেন্ডে প্রায় ১০,০০০ কিলোমিটার গতিতে আঘাত হানা হচ্ছে৷ বিস্ফোরিত পাথরের ধাক্কায় মারাত্মক সেই পালটা আঘাতের মাত্রা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে উঠছে৷ প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানী ফ্রাংক শেফার বলেন, ‘‘এ ক্ষেত্রে স্যাটেলাইটের আঘাতে স্পষ্টভাবে মোমেন্টাম ট্রান্সফার দেখা যাচ্ছে৷ অন্যদিকে গ্রহাণুর নিজস্ব উপাদানের কারণে বাড়তি মোমেন্টাম ট্রান্সফার ঘটছে৷ বিস্ফোরণের ফলে টুকরোগুলি আঘাতকারীর দিকে ধেয়ে যাচ্ছে৷ এটা অনেকটা জেট ইঞ্জিনের মতো পেছনে ভর বার করে সামনে গতি বাড়ানোর মতো দৃষ্টান্ত৷''

তবে এই প্রক্রিয়ায় শুধু অপেক্ষাকৃত ছোট আকারের শক্ত বস্তুকে কক্ষচ্যুত করা সম্ভব৷ কিন্তু কোনো গ্রহাণুর মধ্যে অসংখ্য ছিদ্র থাকলে বা সেটির আকার বিশাল বড় হলে আঘাতের ইমপ্যাক্ট বা প্রভাব দুর্বল হয়ে যাবে৷ গতিপথ পরিবর্তনের জন্য সবসময়ে হাতে বেশি সময় থাকবে না৷ জার্মান এয়ারোস্পেস সেন্টারের অ্যালেন হ্যারিস মনে করেন, ‘‘পৃথিবীর দিকে কোনো বড় আকারের মহাজাগতিক বস্তু এগিয়ে এলে এবং খুব দেরিতে তা টের পেলে আমাদের সর্বশেষ হাতিয়ার সম্বল করতে হবে৷ অর্থাৎ পারমাণবিক বোমা প্রয়োগ করতে হবে৷ তবে ভাগ্য খুব খারাপ হলে ‘শটগান এফেক্ট' দেখা যেতে পারে৷ তখন বিস্ফোরণের ফলে গ্রহাণুটি ভেঙে চৌচির হবে এবং তার অসংখ্য টুকরো পৃথিবীর দিকে ধেয়ে যাবে৷ তার পরিণতি মারাত্মক হতে পারে৷''

অতএব কোনো ‘গ্লোবাল কিলার' গ্রহাণু ‘নিওশিল্ড' প্রকল্পের গবেষকদের চোখ এড়িয়ে যাবে না, আমরা শুধু এটুকুই আশা করতে পারি৷

গেয়র্গ বাইনলিশ/এসবি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য