1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গ্রিনল্যান্ডে ভাঙা বরফের চাঁই নিয়ে আশংকা

১৬ আগস্ট ২০১০

গ্রিনল্যান্ডের বরফ মোড়া রাজ্য থেকে একটি বিশাল আকারের বরফ খন্ড ভেঙে পড়েছে৷ সেটির আকার কত বড় জানেন? লম্বায় ৩০ কিলোমিটার, প্রস্থে ১০ কিলোমিটার৷ বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ১৯৬২ সালের পর এত বড় বরফ চাঁই ভেঙে পড়তে দেখা যায়নি৷

https://p.dw.com/p/OoVE
ভাঙছে মেরু অঞ্চলে জমে থাকা বরফের পাহাড়ছবি: DW / Irene Quaile

ভেঙে পড়া এই বিশাল বরফ খন্ডটি ক্রমশ এগিয়ে আসছে ক্যানাডার উপকূলের দিকে৷ এই ভেসে চলা বরফ দ্বীপের ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখছেন বিজ্ঞানীরা৷ তবে তারা আশ্বস্ত করছেন যে এখনই আতংকিত হয়ে পড়ার কোন কারণ নেই৷

বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে প্রতি বছরই ভাঙছে মেরু অঞ্চলে জমে থাকা বরফের পাহাড়৷ এসব বরফের পাহাড়ের আকৃতি কয়েক মাইল থেকে শুরু করে কয়েকশ মাইল পর্যন্ত৷ উত্তর মেরুর কাছের দেশ গ্রিনল্যান্ড নামে গ্রিন হলেও তা বরফের সাদা চাদরে ঢাকা৷ উত্তর মেরুর দিকে দেশটির ওপরের অংশে দুটি বিশাল আকারের বরফের পাহাড় জমে আছে৷ তার একটির নাম পিটারম্যান গ্ল্যাসিয়ার৷ সাগরের পানির ওপর ভেসে থাকা এই গ্ল্যাসিয়ার বা বরফের পাহাড়টি হচ্ছে ৭০ কিলোমিটার লম্বা৷ কিছুদিন আগে তারই একটি বড় অংশ ভেঙে আলাদা হয়ে গিয়েছে সমুদ্রে৷

এই মাসের শুরুর দিকে নাসার উপগ্রহ থেকে পাঠানো ছবিতে ঘটনাটি লক্ষ্য করতে পেরেছিলেন মার্কিন বিজ্ঞানীরা৷ তখনই তারা জানিয়ে দেন যে গ্রিনল্যান্ডের উত্তরে একটি নতুন বরফ খন্ড দেখা যাচ্ছে যেটি নিউইয়র্ক শহরের ম্যানহাটানের চেয়ে নাকি চারগুন বড়৷ যুক্তরাষ্ট্রের সবগুলো পানির কল যদি টানা ১২০ দিন খুলে রাখা হয় তাহলে যে পরিমাণ পানি পড়বে সে পরিমাণ পানি জমে আছে এই বরফ খন্ডটিতে৷ ক্যানাডার আইস সার্ভিসের বিজ্ঞানীরাও এই বরফ খন্ড ভেঙে পড়ার ওপর নজর রাখছিলেন৷ সেখানকার কর্মকর্তা ট্রুডি ওলেনবেন এই বরফ খন্ডটির আকার সম্পর্কে বলেন, ‘‘আপনি যদি এর মাঝে দাঁড়িয়ে থাকেন, তাহলে বুঝতে পারবেন না যে এটি একটি ভাসমান বরফের চাঁই৷ অথবা যদি জাহাজে থাকেন, তাহলে মনে হবে সমুদ্রের মধ্য থেকে একটি বিশাল বরফের দেওয়াল ভেসে উঠেছে৷''

Klimawandel Grönland
ভেঙে পড়া বিশাল বরফ খন্ডছবি: AP

বিশাল আকারের এই বরফের খন্ডটি ভেঙে পড়েছে গ্রিনল্যান্ডের উত্তরের নারিস স্ট্রেইট এলাকায়, যেটি উত্তর মেরু থেকে এক হাজার কিলোমিটার দক্ষিণে এবং গ্রিনল্যান্ডের উত্তর পশ্চিম ও ক্যানাডার উত্তর পূর্বাঞ্চলের এলেসমেয়ার দ্বীপের মিলনস্থলে৷ বরফের দ্বীপটি এখন আর্কটিক সমুদ্রে স্রোতে ভেসে চলেছে এবং ক্রমশই এগিয়ে আসছে ক্যনাডার উপকূলের দিকে৷ বিজ্ঞানীরা দেখছেন, বরফ খন্ডটির গতিপথ এখন ক্যানাডার নিউফাউন্ডল্যান্ড এলাকার ল্যাব্র্যাডর উপকূলের দিকে৷ বিজ্ঞানী ট্রুডি ওলেনবেন জানালেন যে এতটুকু পথ পাড়ি দিতে এক থেকে দুই বছর লেগে যেতে পারে বরফ খন্ডটির৷ তবে বিশেষ করে বিপদে পড়তে পারে সমুদ্রে চলাচলকারী জাহাজগুলো৷ ট্রুডি ওলেনবেন'এর কথায়, ‘‘এর আগে ২০০৮ সালে এর চেয়ে ছোট একটি বরফ খন্ড ভেঙে গিয়েছিল৷ জুলাইয়ের মধ্যে তা ভাঙতে শুরু করে৷ ল্যাব্রাডর উপকূলের উত্তর বিন্দু ব্যাসিন দ্বীপ পর্যন্ত পৌঁছতে এর সময় লেগেছিল প্রায় এক বছর৷ তার আগেই এটা ভেঙে ছোট ছোট টুকরো হয়ে যায়৷ আমার মনে হয় এটাও ভেঙে যাবে, তবে সমস্যা হলো এই ভাঙা টুকরোগুলো জাহাজ চলাচলের সমুদ্র এলাকাতে ঢুকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে৷ এছাড়া তেল উত্তোলনের এলাকাতেও চলে আসতে পারে৷ তখন এগুলোকে ভাঙতে যেসব পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে তাতে অনেক ধরণের জটিলতা রয়েছে৷ আমি নিশ্চিত যে এই বরফ খন্ড গলতে শুরু করবে৷ তবে আমাদের দেখা অন্য যে কোনগুলোর চেয়ে এটি অনেক বড়৷''

সমুদ্রপৃষ্ঠ যেভাবে দিন দিন উষ্ণ হচ্ছে, তার কারণেই কি এই বরফের ভেঙে পড়া? বিজ্ঞানীরা অবশ্য এখনই এই ঘটনার জন্য জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করতে চাচ্ছেন না৷ কারণ সমুদ্র পৃষ্ঠ উষ্ণায়ন ছাড়াও আরও অনেক কারণ তারা সম্ভাব্য হিসেবে তালিকায় রাখছেন৷ যেমনটি বললেন ট্রুডি ওলেনবেন, ‘‘এখানে অনেক বিষয়ই জড়িত৷ এর সঙ্গে কোন একটি বিষয়কে সরাসরি সংযুক্ত করাটা কঠিন৷ জমে থাকা বরফের পাহাড়ের নীচে সমুদ্রতলের স্রোতের গতি, মহাদেশের তাপমাত্রা, গ্রিনল্যান্ডের দিকে বাতাসের গতি অনেক কিছুই রয়েছে৷ আমি সুনির্দিষ্ট কিছুকে দায়ী করতে চাচ্ছি না৷''

তবে বিজ্ঞানীরা কোন কিছুকে সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করতে না চাইলেও প্রশ্ন কিন্তু উঠছেই৷ মেরু অঞ্চলে সমুদ্রের ওপর ভেসে থাকা এসব বরফের পাহাড়গুলো ৫৫ মিটার পর্যন্ত পুরু৷ কিন্তু এই পুরু বরফ কি এখন পাতলা হয়ে আসছে? এই প্রশ্নের উত্তর এখন না দিলেও পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা৷

প্রতিবেদন: রিয়াজুল ইসলাম

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ