1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মান প্রযুক্তির প্রয়োগ

১৭ মে ২০১৩

বাইরে বরফ, অথচ গ্রিনহাউসে ফলছে আম-কাঁঠাল৷ শীতের দেশের চিড়িয়াখানা, কিন্তু ভিতরে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে বাঘ-সিংহ৷ এই অসম্ভবকে সহজেই সম্ভব করে তুলছে প্লাস্টিকের তৈরি এক বিশেষ ফয়েল৷

https://p.dw.com/p/18ZsH
Sichtprüfung einer Blasfolie an einer Laboranlage im Fraunhofer-Institut UMSICHT. Copyright: Fraunhofer UMSICHT April, 2012
Sichtprüfung einer Folie aus Bioplastikছবি: Fraunhofer UMSICHT

জার্মানির উত্তরে ব্রেমেন শহরে এক পার্কে যেন গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জঙ্গল গড়ে উঠেছে৷ সাধারণত শুধু হিমালয় পর্বত ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এমন গাছপালা দেখা যায়৷ এগুলি যে দিব্যি বেড়ে উঠছে, তার মূল কারণ গ্রিনহাউসের ছাদ, যা ঢাকা হয়েছে ইটিএফই নামের ফ্লুয়োরিন ভিত্তিক বিশেষ ধরণের প্লাস্টিক দিয়ে৷

ব্রেমেন শহরের পরিবেশ দপ্তরের প্রতিনিধি মিশায়েল ভ্যারবেক বলেন, ‘‘আমরা চেয়েছিলাম, এই সব গাছপালা যতটা সম্ভব সূর্যের আলো পাক৷ মাঝে মাঝে আমরাও বুঝতে পারি যে, বেশিক্ষণ রোদে দাঁড়িয়ে থাকলে ত্বকে ফোসকা পড়ে যায়৷ কিন্তু গাছপালার জন্য এই আলো খুবই ভালো৷ সাধারণ কাচের মধ্য দিয়ে সেই আলট্রাভায়োলেট বা অতি-বেগুনি রশ্মি ভালো করে ঢোকে না৷ তারপর লক্ষ্য করলাম, ফয়েলের মধ্য দিয়ে কিন্তু সেই রশ্মি দিব্যি ঢুকে যায়৷''

ইটিএফই দিয়ে তৈরি এই ফয়েল সত্যি অনবদ্য৷ এটি কাচের মতো অতি-বেগুনি রশ্মি আটকে দেয় না৷ ফলে এমন ছাদের নীচে গাছপালা ভালোভাবেই বেড়ে ওঠে৷ অন্য ধরণের ফয়েল তা পারে না৷

ভেক্টর ফয়েলটেক কোম্পানির রাইনহার্ড শ্মিট বলেন, ‘‘ফ্লুয়োরিন ভিত্তিক প্লাস্টিক বা ইটিএফই দিয়ে তৈরি ফয়েল একবার ভালো করে দেখুন৷ নিজের বাসায় রান্নাঘরে নন-স্টিক প্যানের উপর যে আবরণ থাকে, এটাও ঠিক সেরকম৷ চর্বি, তেল অথবা ময়লা এর গায়ে লাগে না৷''

সেইসঙ্গে এই ফয়েল খুবই হাল্কাও৷ লাইপসিশ শহরের চিড়িয়াখানায় গন্ডোয়ানাল্যান্ড নামের যে বিশাল হল রয়েছে, সাধারণ কাচ দিয়ে তার ছাদ তৈরি করা যেত না৷ একাধিক ফয়েলের স্তর দিয়ে এই ছাদ তৈরি করা হয়েছে৷ প্রতিটি স্তরের মধ্যে ফাঁকা জায়গা রয়েছে৷ ফলে হলের ভিতরের তাপমাত্রা ও পরিবেশ অটুট থাকে৷ বাইরের পরিবেশে যে সব গাছপালা বা প্রাণীর টিকে থাকার কথা নয়, আলট্রাভায়োলেট রশ্মির কল্যাণে আদর্শ পরিবেশে পেয়ে তারা ভালোভাবেই বেঁচে আছে৷

ইটিএফই ফয়েলের আরও সুবিধা রয়েছে৷ এর সাহায্যে বেশ অদ্ভুত ধরণের ছাদ বা দেওয়াল তৈরি করা যায়৷ কাচের চেয়ে এই ফয়েল ব্যবহারের খরচও কম৷ স্থপতিদের জন্য এটা স্বপ্নের মতো৷ তবে এ দিয়ে নির্মাণের কাজ একটা বড় একটা চ্যালেঞ্জ৷

ভেক্টর ফয়েলটেক কোম্পানির ড.স্টেফান লেনার্ট বলেন, ‘‘প্রকৃতির মধ্যে যে সব জ্যামিতিক রূপ দেখা যায়, সেগুলি অনেক সময় প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা যায়৷ সাবান দিয়ে তৈরি বুদবুদের মতো আকৃতি এর একটা ভালো উদাহরণ৷''

বুদবুদের আকারে তৈরি সবচেয়ে বিখ্যাত ভবন রয়েছে চীনের বেইজিং-এ৷ আধুনিক স্থাপত্যকলায় প্লাস্টিক ফয়েল ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিপ্লব এনে দিয়েছে অলিম্পিকের এই সাঁতার স্টেডিয়াম৷ বেলুনের মতো দেখতে এই অংশগুলিই এমন কাঠামোর বৈশিষ্ট্য৷ শুধু ভিতরের তাপমাত্রা সুস্থির রাখা নয়, স্থিতিশীলতার জন্যও এটা জরুরি৷ প্রতিটি বালিশই একে অপরের সাথে যুক্ত৷ পাম্প দিয়ে বাতাসের সঠিক চাপ বজায় রাখা হয়৷

গাছপালার জন্য অতি-বেগুনি রশ্মি প্রয়োজনীয় হলেও এর মাত্রা বেশি হলে মানুষের ক্ষতি হতে পারে৷ ব্রাজিলের এক বিশ্বকাপ স্টেডিয়ামে এই ফয়েল তার একটা সুরাহা করেছে৷

ভেক্টর ফয়েলটেক কোম্পানির রাইনহার্ড শ্মিট বলেন, ‘‘এখানে দেখছেন এক ইটিএফই ফয়েল, যা আসলে প্রিন্ট করা হয়েছে৷ এই গোল-গোল নক্সা সূর্যের রশ্মির তাপ কমিয়ে দেয়৷ নন-স্টিক টেফলন কড়ার মতোই এই ফয়েল এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে এর গায়ে কিছুই লেগে না থাকে৷ আমাদের এর উপর নক্সা ছাপতে দেওয়া হয়েছিল৷ আমাদের এখানে সবসময়ই নতুন কিছু না কিছু হচ্ছে৷''

তবে কাচের তুলনায় ইটিএফই-র একটি দোষ রয়েছে৷ এটি তেমন স্বচ্ছ নয়৷ সেই গুণও আনার চেষ্টা অবশ্য চলছে৷

এসবি/ডিজি