1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ঘুস-দুর্নীতির সক্ষমতা বেড়েছে

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৪ জুন ২০১৯

বাংলাদেশ পুলিশের একজন ডিআইজির দুদকের একজন কর্মকর্তাকে ৪০ লাখ টাকা ঘুস দেয়ার ঘটনা নিয়ে আলোচনার ঝড় বইছে। কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে সরকারি কর্মকর্তাদের অবৈধ আয়ের পরিমাণ নিয়ে। তথ্য উপাত্ত বলছে বাংলাদেশে দুর্নীতির সক্ষমতা বেড়েছে।

https://p.dw.com/p/3KS4i
ছবি: Colourbox

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ওই পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে এরইমধ্যে সাময়িক বরখাস্ত করে তদন্ত শুরু করেছে কমিশন। আর ডিআইজি মিজানুর রহমানকে গত বছর যৌন হয়রানির অভিযোগে ডিএমপি থেকে সরিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। দুদক তার অবৈধ সম্পদ নিয়েও তদন্ত করছে। জানা গেছে, তার সম্পদের পরিমাণ চার কোটি টাকা। আর তদন্ত পর্যায়েই এই ৪০ লাখ টাকার ঘুস কাহিনী।

ঘুস-দুর্নীতির চাপে সাধারণ মানুষ:

সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ঘুস-দুর্নীতির চাপে পিষ্ট হচ্ছে সাধারণ মানুষ। ট্রান্সপরেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ(টিআইবি) গত বছর সরকারের ১৫টি সরকারি সেবাখাতে ঘুস দুর্নীতি নিয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে বলা হয় সেবাখাতে ২০১৭ সালে মোট ঘুসের পরিমান ১০ হাজার ৬৮৮.৯ কোটি টাকা। এটা  ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের ৩.৪ ভাগ এবং জিডিপির ০.৫ ভাগ। ২০১৫ সালের  বছরের তুলনায় এটা ২১.২ ভাগ বেড়েছে।

গোলাম রহমান

সাধারণ মানুষ কেন ঘুষ দেয়? এর জবাবে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘গবেষণায় যে ৬৯ শতাংশ মানুষ কোনো না কেনোভাবে দুর্নীতির শিকার হয়েছেন তাদের ৮৯ শতাংশ বলেছেন তারা ঘুস দিতে বাধ্য হয়েছেন। কারণ তারা যদি ঘুস না দেন তাহলে সরকারি সেবা পান না।'

উগান্ডার পর্যায়ে বাংলাদেশ:

২০১৮ সালের তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে  চলতি বছর প্রকাশ করা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) দুর্নীতির ধারণা সূচক৷ দুর্নীতিতে আগের বছরের তুলনায় চার ধাপ অবনতি হয়েছে বাংলাদেশের। দুর্নীতিতে এখন বাংলাদেশের সম-অবস্থানে আছে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক ও উগান্ডা। ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় পাকিস্তানের পরেই সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ বাংলাদেশ। দুর্নীতি যদি কমিয়ে মধ্যম পর্যায়েও আনা যায় তাহলে প্রবৃদ্ধি আরো ৩ শতাশং বেশি হতো।‘

অভিযোগ বাড়ছে, দুদকের মামলা কমছে:

দুদকের টোল ফ্রি নম্বের ২০১৮ সালে ১৭ লাখের বেশি অভিযোগ এসেছে।  ২০১৭ সালে সরাসরি অভিযোগ এসেছে ১৭,৯৫৩টি এবং ২০১৬ সালে ১২,৯৯০টি।

তবে দুদক অনুসন্ধানের জন্য দুই বছরে মাত্র ২ হাজার ৯৯৭টি অভিযোগ গ্রহণ করেছে । শেষ পর্যন্ত মামলার পরিমাণ আরো কমে যায়। ২০১৮ সালে মামলা হয়েছে মাত্র ২১৬টি। ২০১৭ সালে ২৭৩টি এবং ২০১৬ সালে ৩৫৯ টি মামলা করেছে দুদক।

ড. ইফতেখারুজ্জামান

দুর্নীতর অভিযোগ বাড়লেও দুদকের মামলা করার হার কমছে। যেসব মামলায় অভিযোপত্র দিয়ে আদালতে বিচারের জন্য পাঠায় তাতে সাজার হার শতকরা ৬৩ ভাগ। দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতার কারণে দুর্নীতিবাজদের শাস্তি সহজে হয় না। আর প্রভাব প্রতিপত্তির কারণে অনেক দুর্নীতিবাজকে শাস্তির আওতায় আনা যায়না।‘

সরিষার মধ্যে ভূত:

গত ৩ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে জানানো হয় ২০০৪ সালে দুদক প্রতিষ্ঠার পর থেকে চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত  ১৫ বছরে  প্রতিষ্ঠানটির ৫৮ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তবে কী ধরণের অভিযোগ এবং কী ধরনের  ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা  প্রকাশ করা হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এগুলো প্রধানত দুর্নীতি ও ঘুসের  অভিযোগ। বিভাগীয় মামুলি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কাউকে আদালতে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়নি।

ড. ইফতেখারুজ্জামানের মতে, ‘আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, দুর্নীতি দমন কমিশন, বিচারিক প্রক্রিয়া এই ধরণের প্রতিষ্ঠান যখন দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে তখন মানুষের  বঞ্চনা বাড়ে এবং ন্যায় বিচার প্রাপ্তির সম্ভাবনা হুমকির মুখে পড়ে।'

গোলাম রহমান মনে করেন, ‘দুদকের মত প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে মানুষ উঁচু মানের নৈতিকতা আশা করে। কিন্তু প্রতিষ্ঠান হিসেবে দুদক যদি তাদের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দেয় তাহলে তারা প্রশ্নের মুখে পড়বে।‘

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য