1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চটিতে মোবাইল, ব্লুটুথ, কানে রিসিভার নিয়ে হাইটেক টোকাটুকি

২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১

পরীক্ষার টোকাটুকিতেও উচ্চ-প্রযুক্তির ব্যবহার। সেটাও করলেন হবু শিক্ষকরা। রাজস্থানে। শেষ পর্যন্ত ইন্টারনেট বন্ধ রেখে সামাল দিল প্রশাসন।

https://p.dw.com/p/40ukF
প্রতীকী ছবি। ছবি: Reuters/D. Balibouse

পায়ের চপ্পলের মধ্যে নিখুঁতভাবে ঢোকানো ছিল ছোট মোবাইল এবং ব্লুটুথ ডিভাইস। আর পরীক্ষার্থীর কানে ছিল একেবারে ছোট রিসিভার। বাইরে থেকে সেখানে প্রশ্নের জবাব চলে আসবে। আর পরীক্ষার্থীরা সেটা খাতায় লিখে নেবে। এই অভিনব কায়দায় টুকলিবাজি করতে গিয়ে রাজস্থানে ধরা পড়েছে পাঁচজন। তারা সকলেই শিক্ষক হওয়ার জন্য প্যানেলে নাম তোলার পরীক্ষা বা রিট দিচ্ছিল।

এভাবে উচ্চ তথ্যপ্রযুক্তিকে টোকাটুকির কাজে লাগানোর ঘটনা ভারতে প্রথম ধরা পড়ল। পুলিশ জানিয়েছে, যার উর্বর মাথায় এই ভাবে টুকলি করার ভাবনা এসেছিল তার নাম তুলসারাম। বাড়ি বিকানের। রাজ্যজুড়ে মোট ২৫ জন পরীক্ষার্থীকে এই চপ্পল ও রিসিভার বিক্রি করেছিল তুলসারাম। দুই লাখ টাকা দিয়ে এই অভিনব টুকলি-যন্ত্র কিনতে হয়েছে পরীক্ষার্থীদের। ফলে তুলসারাম ও তার দলবল ৫০ লাখ টাকা রোজগার করে ফেলেছিল। পরীক্ষার দিন সকালে এই ডিভাইস চালু করার ব্যবস্থাও করে দিয়েছিল তারা। 

কিন্তু শেষরক্ষা হলো না। বিকানের পুলিশ সকালে এক নারী সহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে। তাদের কাছ থেকে এই পরিকল্পনার কথা জানতে পেরে আজমের, সিকর, প্রতাপগড় সহ বিভিন্ন জায়গায় জানিয়ে দেওয়া হয়। শুরু হয় পরীক্ষার্থীদের পুলিশি তল্লাশি। তারপরই ধরা পড়ে পাঁচজন। তাদের চটিতে লুকোনো ঠিল টুকলি করার জন্য মোবাইল ও ব্লুটুথ। আজমের, সিকর, নিমকখানা থেকে একজন করে এবং প্রতাপগড়ে দুইজন ধরা পড়ে। তবে তুলসারম ফেরার।

প্রশ্নপত্রও ফাঁস

শুধু এই অভিনব পদ্ধতিতে টুকলিবাজি নয়, পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও ফাঁস হয়ে যায়। পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল দশটায়। সাড়ে আটটায় প্রশ্নপত্র একজন পুলিশ কনস্টেবলের মোবাইলে চলে আসে। দ্রুত তার ফটোকপি চলে আসে পরীক্ষা কেন্দ্রগুলির সামনে। শুরু হয় পুলিশি ব্যবস্থা। সওয়াই মাধোপুরে দুই পুলিশকর্মী সহ আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

রাজস্থান পত্রিকা জানাচ্ছে, কনস্টেবল দেবেন্দ্র গুর্জর ও একজন হেড কনস্টেবল তাদের বউয়ের জন্য প্রশ্নপত্র জোগাড় করতে মরিয়া ছিল। তাদের সঙ্গে যোগযোগ রাখছিল গিরোহ বলে একটি জায়গায় থাকা এক ব্যক্তি। পুলিশ মনে করছে, ওই ব্যক্তিই দুই পুলিশ কর্মীকে প্রশ্নপত্র জুগিয়েছে। দৈনিক ভাস্করের রিপোর্ট জানাচ্ছে, মোট আটটি জেলায় ৪০ জনকে প্রশ্নপত্র ফাঁস করার জন্য গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার মধ্যে আটজন সরকারি শিক্ষকও আছেন।

ইন্টারনেট বন্ধ

ব্লুটুথের সাহায্যে টুকলিবাজি রুখতে ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের পরিপ্রেক্ষিতে রাজস্থানের বিভিন্ন এলাকায় বারো ঘণ্টা ধরে ইন্টারনেট বন্ধ ছিল। কোনোভাবে যাতে ব্লুটুথ ব্যবহার করে নকল করা না যায়, তার জন্য এই ব্যবস্থা।

দিল্লি থেকে উদয়পুর ঘুরতে গেছেন প্রতিম মুখোপাধ্যায়। ডয়চে ভেলেকে তিনি জানিয়েছেন, রোববার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ইন্টারনেট বন্ধ ছিল। ফলে অনেকেই অসুবিধায় পড়েছেন। বেশি রাতে তা আবার চালু হয়।

অভিনব টুকলিবাজি

ব্লুটুথ ব্যবহার করে টুকলিবাজি সত্যিই অভিনব। পশ্চিমবঙ্গের স্বরূপনগরে থাকেন শিক্ষক দেবাশিস ভৌমিক। সম্প্রতি অবসর নিয়েছেন। তার অভিজ্ঞতা হলো, আগে তো কাগজে লিখে, শরীরে নানা জায়গায় লিখে টোকাটুকির চেষ্টা হতো। পরে মোবাইল ফোনের ব্যবহার শুরু হয়। ডয়চে ভেলেকে তিনি জানিয়েছেন, ''মোবাইল আসার পর ২০১১-১২ নাগাদ কিছু ছাত্রছাত্রী মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার সময় পকেটে করে ছোট মোবাইল আনত। তারপর বাথরুমে গিয়ে কোনো প্রশ্নের জবাব মোবাইল থেকে ফোন করে জানার চেষ্টা করত। তবে তার সংখ্যা খুব বেশি নয়। আর এভাবে খুব বেশি টোকাটুকিও করা যায় না। অনেকে ধরাও পড়েছে।''

দেবাশিস বলেছেন, রাজস্থানে যে কাণ্ডটা হয়েছে, সেইরকম কোনো ঘটনা পশ্চিমবঙ্গে হয় বলে তার জানা নেই।

জিএইচ/এসজি (এনটিডিভি, রাজস্থান পত্রিকা)