চরম ক্ষুধায় লাখ লাখ মানুষ, আফগান বেকারিতে পাউরুটি বিতরণ

বাচ্চা থেকে বুড়ো সবাই হাত বাড়িয়েছে একটা পাউরুটির জন্য৷ ভিড়ের মধ্যেও লাল জামা পরা একটি শিশুর দিকে বারবার চোখ চলে যেতে বাধ্য৷ অসহায় সেই মুখে করুণ আর্তি ধরা পড়েছে৷ পাউরুটি নিতে সেও ছোট হাতটি বাড়িয়ে দিয়েছে৷

আফগানিস্তানের কাবুলে সেই বেকারির থেকে পাউরুটি নিতে এসেছেন অসংখ্য নারী৷ তারাও দাঁড়িয়ে রয়েছেন খাবারের অপেক্ষায়৷

রাস্তার মধ্যে বসে রয়েছেন সারি সারি মানুষ৷ এক টুকরো পাউরুটির জন্য অপেক্ষা করছেন তারা৷ দেশের অর্থনীতি ধুঁকছে৷ তালেবান আমলে নারীরা কাজের অধিকার হারিয়েছেন৷ দ্রব্যমূল্যও বৃদ্ধি পেয়েছে৷ তাই বেকারির সামনে এত ভিড়৷ অন্তত সামান্য রুটি তো জোগাড় হল৷

সীমান্ত পেরিয়ে যে সব বাণিজ্য নিয়মিত চলত, তা তালিবান শাসনে বন্ধ হয়েছে৷ ঝাঁপ পড়েছে একাধিক স্থানীয় ব্যবসাতেও৷ বাচ্চা থেকে বুড়ো, পরিবারের নারীরাও এসেছেন খাবারের আশায়৷

বেকারির সামনে পাউরুটি বিতরণ চলছে৷ বেকারির কাচে তালেবান একটি পোস্টার রয়েছে৷ তাতে লেখা নারীদের জন্য হিজাব পরা বাধ্যতামূলক৷

সামান্য পাউরুটি এমনটাই হয়তো বলবেন কেউ কেউ৷ কিন্তু আসলে তা অনেক৷ বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি বলছে, ২.৩ কোটি আফগান চরম খাদ্যসংকটে ভুগছে৷ ৯০ লাখ আফগান দুর্ভিক্ষ থেকে এক ধাপ দূরে৷ আফগানিস্তানে পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের অর্ধেকেই তীব্র অপুষ্টির শিকার৷

হাতে পাউরুটি আঁকড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে ফুলের মতো এই শিশু৷ কঠিন পৃথিবীর মানেটা বোধহয় শৈশব থেকেই সে বুঝতে শিখে ফেলেছে৷ জাতিসংঘের ফুড প্রোগ্রাম জানাচ্ছে, ১.৪ কোটি মানুষের কাছে কোনও খাবার নেই৷

জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠন জানাচ্ছে, তালেবান সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ কর্মহীন হয়েছেন৷ এই সংখ্যাটা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়বে৷ বেকারির সামনে পাউরুটির আশায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলোর চোখেমুখে ক্লান্তি-অসহায়তার ছাপ ধরা পড়েছে৷

বিজ্ঞাপন এবং টেলিভিশন-সহ সমস্ত মাধ্যমে নারীদের মুখ দেখানো নিষিদ্ধ করেছে তালেবান৷ মেয়েদের স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷ পরিবারের কোনও পুরুষ ছাড়া কোনও নারীর বাড়ির বাইরে যাওয়ার অনুমতি নেই৷ছবিতে দেখা যাচ্ছে শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই আগে পাউরুটি পেতে চাইছেন৷

একইরকম আরও একটি ছবি তুলেছেন আলোকচিত্রী৷ ছবিতে ধরা পড়ছে তিন প্রজন্মের অসহায়তা৷ ক্ষুধার থেকে বড় সত্যি যে আর কিছু নেই৷ মানবিকতার খাতিরে সবার পাশে দাঁড়িয়েছে এই বেকারি৷ তাদের প্রয়াসের প্রশংসা করেছেন প্রত্যেকে৷

হাত ভর্তি পাউরুটি নিয়ে বেকারির কর্মী ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে৷ কার হাতে তুলে দেবেন বেঁচে থাকার সামান্য এই রসদটুকু? এমনটাই ভাবছেন বোধহয় তিনি৷

পাউরুটি বিতরণে এগিয়ে এসেছেন বেকারির মালিক মেহর দাল রহমতি নিজেই৷ তিনিও পাউরুটি দিচ্ছেন অসহায়, পীড়িত মানুষগুলিকে৷ তার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ৷ কিন্তু প্রশ্ন একটাই, এভাবে আর কতদিন চলবে?পাঁচ বছরের কম বয়সি ১০ লাখ শিশু অপুষ্টিতে ভুগে মারা যেতে পারে, জাতিসংঘের এই রিপোর্ট দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে৷