1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চার মাসে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ৮৭

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা৩ মে ২০১৪

বাংলাদেশে গত চার মাসে ৮৭টি বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং ১৯ জনকে গুমের ঘটনা ঘটেছে৷ এছাড়া রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত হয়েছে ১১০ জন৷ জেল, হেফাজতে মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের৷ গণপিটুনিতে নিহত হয়েছে ৪৬ জন৷

https://p.dw.com/p/1BtEZ
অধিকার বলছে, আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর অনেকেরই খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে নাছবি: Reuters

মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার'-এর গত চার মাসের পরিসংখ্যান নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে৷ ওই প্রতিবেদন অনুসারে এই সময়ে বিএসএফের হাতে ছয় বাংলাদেশি নিহত, ১২ জন আহত ও সীমান্ত থেকে ৩৭ জনকে অপহরণ করা হয়েছে৷

সংগঠনটির প্রতিবেদনে বলা হয়, গত জানুয়ারিতে বিতর্কিত জাতীয় নির্বাচনের মাসে ৩৯ জন, ফেব্রুয়ারি মাসে ১৬ জন, মার্চ মাসে ১৪ জন এবং এপ্রিল মাসে ১৮ জনকে বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে৷ বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ধরনের মধ্যে র‌্যাব, পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর ক্রসফায়ারে নিহত ৫৪ জন, পুলিশের নির্যাতনে নিহত তিনজন, গুলিতে নিহত ২৮ এবং পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে দুইজনকে৷

এপ্রিলে বিচার বহির্ভূতভাবে নিহত ১৮ জনের মধ্যে ১৪ জনই তথাকথিত ক্রসফায়ার, এনকাউন্টার বা বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার অভিযোগ রয়েছে৷ এদের মধ্যে র‌্যাবের হাতে পাঁচজন, পুলিশের হাতে চারজন, কোস্টগার্ডের হাতে তিনজন এবং র‌্যাব-বিজিবির হাতে দুইজন নিহত হয়েছেন৷

সংস্থাটি জানায়, গত চার মাসে গুম হয়েছে ১৯ জন৷ এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে একজন, ফেব্রুয়ারি মাসে ছয়জন, মার্চ মাসে দুইজন আর এপ্রিল মাসে ১০ জন গুম হয়েছে৷

অধিকার বলছে, আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর অনেকেরই কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না৷ পরিবারগুলোর দাবি, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাই তাদের ধরে নিয়ে গেছে এবং এর পর থেকে তারা গুম হয়েছেন অথবা তাদের লাশ পাওয়া গেছে৷ যদিও আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা এই অভিযোগগুলো অস্বীকার করছেন৷ কিছু কিছু ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রথমে ধরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করলেও পরে আটক ব্যক্তিকে জনসমক্ষে হাজির করছে অথবা দূরবর্তী কোনো থানায় নিয়ে হস্তান্তর করছে৷

অধিকারের তথ্য মতে, এপ্রিল মাসে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ১০ জন গুম হওয়ার অভিযোগ রয়েছে৷ তাদের মধ্যে গুম হওয়ার পরে তিনজনের লাশ পাওয়া গেছে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে সাতজনকে একটি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে৷

অধিকারের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভারতের সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী বিএসএফ গত জানুয়ারি মাসে একজন, ফেব্রুয়ারি মাসে একজন, মার্চ মাসে দুইজন এবং এপ্রিল মাসে দুই বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে৷ ১২ জন আহত হয়েছেন এবং চার মাসে ৩৭ জন বাংলাদেশিকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷

রাজনৈতিক সহিংসতায় গত জানুয়ারি মাসে ৫৩ জন, ফেব্রুয়ারি মাসে ১০ জন, মার্চ মাসে ২২ জন এবং এপ্রিল মাসে ২৫ জন নিহত হয়েছে৷

Bangladesch Parlamentswahlen
নির্বাচনি সহিংসতাছবি: STRINGER/AFP/Getty Images

সাংবাদিকদের ওপর হামলায় আহত হয়েছেন গত চার মাসে ৪৩ জন, হুমকির সম্মুখীন আছেন সাতজন, গ্রেফতার হয়েছেন চারজন এবং লাঞ্ছিত হয়েছেন তিনজন৷

ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১৭০ জন, যৌন হয়রানির শিকার ৮০ জন, এসিড সহিংসতার শিকার হয়েছেন ১৫ জন নারী৷ এ ছাড়া তৈরি পোশাক শিল্প কারখানায় সহিংসতায় আহত হয়েছেন ৩১১ জন শ্রমিক৷

বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলোতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অধিকার৷ সংগঠনটি মনে করে ‘গণতন্ত্র' মানে নিছক নির্বাচন নয়, রাষ্ট্র গঠনের প্রক্রিয়া ও ভিত্তি নির্মাণের গোড়া থেকেই জনগণের ইচ্ছা ও অভিপ্রায় নিশ্চিত করা জরুরি৷ সেটা নিশ্চিত না করে যাত্রা শুরু করলে তার কুফল জনগণকে বয়ে বেড়াতে হয়৷ রাষ্ট্র পরিচালনার সব ক্ষেত্রে জনগণ নিজেদের ‘নাগরিক' হিসেবে ভাবতে ও অংশগ্রহণ করতে না শিখলে ‘গণতন্ত্র' গড়ে ওঠে না৷ নাগরিক হিসেবে নিজেদের ইচ্ছা ও অভিপ্রায় এবং মানবিক চাহিদা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা হিসেবে রাষ্ট্র গড়ে না উঠলে তাকে ‘গণতন্ত্র' বলা যায় না৷

আর সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সরকার এসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না৷ তাই দেশের নাগরিকদেরই এখন রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানাতে হবে৷ সরকারের ওপর কার্যকর চাপ সৃষ্টি করতে হবে৷'' তিনি বলেন, ‘‘সরকারকে বাধ্য করতে হবে এসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বন্ধ এবং দায়ীদের আইনের আওতায় আনতে৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য