1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এবার পছন্দের রাষ্ট্রপতি খুঁজছে বিজেপি

রাজীব চক্রবর্তী নতুন দিল্লি
১৩ মার্চ ২০১৭

পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনি ফলাফল সামনে এসেছে৷ উত্তর প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে বিজেপি৷ তাই ভারতের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি কে হবেন, সেটাও ঠিক করতে পারবেন প্রধানমন্ত্রী মোদী ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহরা৷

https://p.dw.com/p/2Z53N
Indien Parlamentswahl 2017 Wahlkampf BJP
ছবি: DW/M. Krishnan

লোকসভা, রাজ্যসভা, সবকটি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির বিধানসভা সদস্যদের নিয়ে গঠিত ইলেক্টোরাল কলেজের ভোট শেয়ারের ভিত্তিতে ভারতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন৷ দেশের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদে পছন্দের কাউকে নিয়ে আসা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, তাঁর দল বিজেপি এবং বিজেপি‌র ‘‌মেন্টর'‌ রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন৷ পাঞ্জাব, উত্তর প্রদেশ, উত্তরাখন্ড, মণিপুর ও গোয়ায় বিধানসভা নির্বাচন শেষ হয়েছে ৮ মার্চ৷ ১১ মার্চ নির্বাচনের ফল সামনে আসার পর দেশে বিরোধী রাজনৈতিক দল গুলির মাথায় হাত৷ এই মুহূর্তে মোদীর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী যিনি, সেই কংগ্রেস সহ সভাপতি রাহুল গান্ধী উত্তর প্রদেশে বিজেপিকে ঠেকানোর লক্ষ্যে জোটবদ্ধ হয়েছিলেন রাজ্যের সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে৷ সমাজবাদী পার্টির সভাপতি তথা সদ্য প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবের সঙ্গে যৌথ পদযাত্রা, মিটিং, মিছিল করে রাজ্য জয়ের স্বপ্নে বিভোর হয়েছিলেন৷ কিন্তু, ফলাফল সামনে আসাতে শুধু রাহুল গান্ধী নন, সব বিরোধীদের স্বপ্ন ভেঙেচুরে একাকার৷ পাঞ্জাব ছাড়া বাকি চারটি রাজ্যেই সরকার গড়ার দিকে এগোচ্ছে বিজেপি৷

বিজেপি সূত্র বলছে, আরএসএস-এর সঙ্গে যুক্ত এবং যাঁর বিরুদ্ধে কোনো চার্জশিট নেই, রাষ্ট্রপতি পদের জন্য এমন প্রার্থী খোঁজা চলছে৷ আগামী জুলাই মাসেই শেষ হবে বর্তমান রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সময়সীমা৷ আর সে মাসেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন৷ বলা বাহুল্য, এই পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনি ফলাফল ঘোষণার পরে হয়ত প্রণব মুখোপাধ্যায়ের দ্বিতীয় দফায় রাষ্ট্রপতি হওয়ার সম্ভাবনা কার্যত ভেস্তে গেল৷ অন্যদিকে, বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনায় ষড়যন্ত্রমূলক অভিসন্ধির মামলার খাঁড়া ঝুলছে প্রবীন বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আডবানি এবং মুরলী মনোহর যোশির বিরুদ্ধে৷ স্বভাবতই তাঁরা দৌড়ের বাইরে চলে গেছেন৷ এখন রাষ্ট্রপতি পদের জন্য বিজেপি নেতাদের ঘরোয়া আলোচনায় ইতিমধ্যেই যাঁদের নাম উঠে আসছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন, লোকসভার স্পিকার সুমিত্রা মহাজন, বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, ঝাড়খণ্ডের রাজ্যপাল দ্রৌপদী মুর্মুসহ আরও কয়েকজন৷ তবে চমক দিয়ে একেবারে আনকোরা কাউকেও বেছে নেওয়া হতে পারে শেষ মুহূর্তে৷ ঠিক যেভাবে ইউপিএ জমানায় প্রতিভা পাটিলকে বসিয়েছিলেন সোনিয়া গান্ধী৷

তবে এত সত্ত্বেও পছন্দের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রয়োজনীয় ভোট শেয়ার থাকবে না বিজেপির৷ যদিও পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের আগে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় ভোট শেয়ার থেকে বিজেপি ৭৫,০৭৬ সংখ্যায় পিছিয়ে ছিল৷ এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ২০০০০-এ৷ মনে করা হচ্ছে, ওড়িশার বিজু জনতা দল বা তামিলনাড়ুর এআইএডিএমকে-র মতো কোনো অ-কংগ্রেসি দলের সঙ্গে সমঝোতা করে সহজেই এই ফারাকটা মিটিয়ে ফেলতে পারবেন মোদী ও অমিত শাহরা৷

এটা ঘটনা যে, ভোটের এই ফল সরাসরি ভাবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পাটিগণিত বদলে দিতে পারবে না৷ উত্তর প্রদেশের প্রভাবে রাজ্যসভায় বিজেপির শক্তি বাড়তে একবছর সময় লাগবে৷ কিন্তু এই জয় নরেন্দ্র মোদীর রাজনৈতিক কর্তৃত্ব অনেকটাই বেড়ে গেল৷ বিজেপির নেতারা বলতে শুরু করেছেন, ভারতে স্বাধীনতার পর এমন জনপ্রিয় নেতা নাকি দেখাই যায়নি!‌ ‌বিদেশি বিশেষজ্ঞরাও একই রকম মন্তব্য করছেন৷

৮৩ বছরের মুরলী মনোহর যখন মাত্র ১০ বছরের, সেই ১৯৪৪ থেকে তিনি আরএসএস-এর সঙ্গে যুক্ত৷ ১৯‌৯১-‌এ তিনি বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পরেই অযোধ্যায় রামমন্দির তৈরির হিড়িক শুরু হয়৷ নিজের কর্মকালে ১৯৯২ সালে কন্যাকুমারী থেকে শ্রীনগর পর্যন্ত ‘‌একতা যাত্রা'‌ বের করেছিলেন তিনি৷ এবং লালচকে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিলেন৷ ঐ বছরেই বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তাঁর৷ সেবার গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন৷ তারো আগে ১৯‌৭৫ সালে ইন্দিরা গান্ধীর শাসনকালে জরুরি অবস্থা চলাকালীন ১৯ মাস জেলবন্দী ছিলেন৷ পরপর ১৯৯৬, ৯৮ ও ৯৯ সালে অটলবিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বাধীন সরকারের সদস্য ছিলেন যোশি৷

দলে সুষমা স্বরাজের গুরুত্বও কোনো অংশে কম নয়৷ ৬৫ বছরের সুষমাকে দেশের শীর্ষ পদে আনতে পারলে আরএসএস-এর বিরুদ্ধে বিরোধীদের দেওয়া ‘‌মহিলা বিরোধী'‌ তকমাটি অনায়াসেই ঝেড়ে ফেলা যাবে বলে মনে করছে দল৷ মোদী সরকারের মন্তিসভায় ‘‌ভলো মন্ত্রী' হিসেবে সুনাম রয়েছে তাঁর৷ তাছাড়া সব দলের নেতাদের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্কের বিষয়টিও মাথায় রাখছে দল, যা রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী দলের সমর্থন পেতে অনেকটাই সাহায্য করতে পারে বিজেপি-কে৷ তবে ইদানীং তাঁর শারীরিক অবস্থা ভালো না থাকার বিষয়টিও বিবেচনা করে দেখছেন দলের নেতারা৷ দলের সূত্র জানাচ্ছে, আপাতত অসুস্থ হলেও দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছেন তিনি৷

অন্যদিকে, ৭৪ বছরের সুমিত্রা মহাজন বর্তমানে লোকসভার স্পিকার পদে রয়েছেন৷ ইন্দোর থেকে পর পর আটবারের সাংসদ তিনি৷ আরএসএস-এর সঙ্গে সুমিত্রার মেলবন্ধন অত্যন্ত ভালো৷ এতকিছুর পরও ঝাড়খন্ডের রাজ্যপাল ৫৯ বছরের দ্রৌপদী মুর্মুকে তুলে এনে চমক দেওয়আর কথাও ভাবছেন বিজেপি ও আরএসএস নেতারা৷ তিনি ওড়িশার আদিবাসী মহিলা৷ বিগত দু'দশক ধরে রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে কাজের বিশেষ অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর৷ ভারতের ইতিহাসে এ যাবৎ কোনো আদিবাসী রাষ্ট্রপতি পদে বসার সুযোগ পাননি৷ তাঁকে এই পদের জন্য প্রার্থী করে বিরোধীদের চমক দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে৷

এখন রাজ্যগুলিতে বিপুল জয়ের ফলে এখন পছন্দের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দিকে অনেকটা এগিয়ে গেল বিজেপি৷ এই জয়ে আগামী বছর রাজ্যসভায় বিজেপির শক্তি বাড়বে৷ লোকসভায় বিপুল গরিষ্ঠতা থাকলেও যে কোনো বিল পাস করাতে বর্তমানে উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় যথেষ্ট বেগ পেতে হয় কংগ্রেস, তৃণমূল, জেনতা দল (‌ইউনাইটেড)‌-সহ অন্যান্য বিরোধীদের দাপটে৷ আগামী বছরের প্রথমার্ধেই উত্তর প্রদেশ থেকে ১০টি আসন খালি হচ্ছে৷ যেখানে সপা, বসপা, কংগ্রেসের সাংসদেরা ছিলেন৷ ওই ১০টির মধ্যে ৯টি আসন নিশ্চিত ভাবে বিজেপির হাতে আসবে৷ এছাড়া রাষ্ট্রপতির মনোনীত তিনজন সদস্যের (‌রেখা, সচিন তেন্ডুলকর, অনু আগা) মেয়াদ শেষ হচ্ছে৷ সেখানেও বিজেপি নিজেদের মনোনীত প্রার্থী আনবে৷ অন্যান্য রাজ্য থেকেও রাজ্যসভার কিছু সাংসদ বাড়বে বিজেপির৷

বন্ধু, আপনার কি মনে হয়? ভারতের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট কে হবেন?

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান