চালু হল ঢাকা নগর পরিবহণ
রাজধানীর গণপরিবহণে যাত্রী হয়রানি রোধে এবং শৃঙ্খলা ফেরাতে রোববার থেকে ৫০ টি বাস নিয়ে চালু হলো ‘ঢাকা নগর পরিবহণ’৷ কেরাণীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার চলবে এই বাস৷ ভাড়া কিলোমিটার প্রতি ২ টাকা ১৫ পয়সা৷
বাসে চড়ে উদ্বোধন
এই বাস সেবার উদ্বোধন করেছেন সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের৷ তিনি সচিবালয় থেকে অনলাইনে যুক্ত হন৷ আর মোহাম্মদরপুরের বাস ডিপোতে বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকার দুই মেয়র৷ পরে মেয়রদ্বয় একটি বাসে চড়ে মোহাম্মদপুর থেকে শংকর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত গিয়ে এ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন৷
আপাতত জোড়াতালি দিয়ে
ঢাকার মাতুয়াইলসহ একাধিক ওয়ার্কশপ ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন বেসরকারি বাস কোম্পানির পুরাতন বাসগুলো রং করে এ প্রকল্পে যুক্ত করা হচ্ছে৷ এছাড়া বিআরটিসির সব বাসও একদম নতুন না৷ ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত প্রথমে ১৫৫টি বাস চলার কথা থাকলেও আপাতত ২০টি ট্রান্স সিলভা ও ৩০টি বিআরটিসির দোতলা বাস দিয়ে চালু হয়েছে এ পরিবহণ সেবা৷
ভবিষ্যত পরিকল্পনা
ঢাকা নগর পরিবহণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘‘২০২৩ সালে যখন মেট্রোরেল চালু হবে, তখন ঢাকার রাস্তাতেও সু-শৃংখলভাবে গণপরিবহণ চলবে৷ ২০২৩ সালের মধ্যে পরিপূর্ণভাবে ঢাকা শহরে ঢাকা নগর পরিবহণ চালু করতে পারবো৷’’
পৃথক যাত্রী ছাউনি-স্টপেজ
ফ্রাঞ্চাইজি নিয়মের আওতায় এ পাইলট প্রকল্পে রয়েছে পৃথক যাত্রী ছাউনি ও বাস স্টপেজ৷ সংশ্নিষ্টরা জানিয়েছেন, টিকেট ছাড়া ও যত্রতত্র এ বাসে যাত্রী উঠানামা করতে পারবেন না৷
যেসব রুটে বাস চলবে
ঘাটারচর থেকে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড, শংকর, জিগাতলা, সায়েন্সল্যাব, শাহবাগ, প্রেসক্লাব, শাপলা চত্বর, টিকাটুলি, যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, মাতুয়াইল, সাইনবোর্ড, মৌচাক হয়ে চিটাগং রোড পর্যন্ত মোট ২৫ কিলোমিটার চলাচল করবে বাসগুলো৷ ভাড়া কিলোমিটার প্রতি ২ টাকা ১৫ পয়সা৷ অর্থাৎ সর্বনিম্ন ১০ টাকা থেকে ৫৫ টাকা পর্যন্ত ধরা হয়েছে৷ এছাড়া টিকেট ই-টিকেটিং পদ্ধতির মাধ্যমে বিক্রি করা হবে৷
চালক ও সহকারির পৃথক পোশাক
বিভিন্ন সময়ে গণপরিবহণে চালকের বেপরোয়া গাড়ি চালনা, চালকের সহকারীর দূর্ব্যবহার, হয়রানিসহ নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে এই সেবায় চালক ও সহকারিকে সবুজ রংয়ের পৃথক পোশাক ও পরিচয়পত্র দেয়া হয়েছে৷ এছাড়া বাসগুলোকে আলাদা করে চিহ্নিত করতে ৬টি ভিন্ন রঙ দেয়া হবে বলে জানা গেছে৷
‘রেশনালাইজেশন’ প্রকল্পের অংশ
রাজধানী ঢাকার গণপরিবহণ সমস্যা নিরসনে এবং এ ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে ২০০৪ সালে বাস রুট ‘রেশনালাইজেশনের’ পরিকল্পনা নেয়া হয়৷ মূল ধারণা ছিল ঢাকার সব গণপরিবহণকে এক ছাতার নীচে নিয়ে আসা৷ এ পরিকল্পনা অনুযায়ী, বর্তমানের ২৯১টি রুটের পরিবর্তে ৪২টি রুটে নিয়ে আসা হবে৷ কোম্পানির মালিকেরা পাবেন লভ্যাংশ৷ বর্তমানে এ পরিকল্পনাই বাস্তবে রুপ পাচ্ছে৷
সমন্বিত প্রকল্প
‘ঢাকা নগর পরিবহণ’ নামের এ ‘রেশনালাইজিং’ পরিবহণ সেবাটি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সমন্বিত উদ্যোগ৷ এ পরিবহণ সেবায় যুক্ত হতে আটটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আবেদন করে৷ এরমধ্যে বিআরটিসি, ট্রান্স সিলভাসহ পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে সুযোগ দেয়া হয়৷
‘প্রশংসনীয়’, কিন্তু টিকবে কি?
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আলতাফ হোসেন নতুন এ বাস সেবার টিকেট কাটতে গিয়ে বলেন, ‘‘সরকার তো অনেক বিষয়েই অনেক উদ্যোগ নেয়, কিন্ত সেগুলি বেশিদিন জনবান্ধব থাকে না৷ এই নগর পরিবহন অবশ্যই একটা প্রশংসনীয় উদ্যোগ৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত সাধারণ মানুষ এর কতটা সুফল পায়, সেটাই দেখার বিষয়৷’’
প্রক্রিয়ায় সন্দেহ
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ সামছুল হক বলেন, ‘‘এটি একটি সিস্টেম৷ তারা শুধু একটি কমিটি করেছে যা দিয়ে এ ধরনের রুট ফ্রাঞ্চাইজি কখনো করা যায় না৷ ধারাবাহিকভাবে কাজের দূর্বলতা থাকায় এ সেবা খুব বেশিদিন টেকসই হবে না বলে আমার ধারণা৷’’
আনিসুল হকের উদ্যোগ
রাজধানীর গণপরিবহণের বিশৃংখলা দূর করার এই উদ্যোগ ছিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের যার উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০১৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর৷ তার নেয়া পদক্ষেপ বিবেচনায় ১০ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ মূলত প্রয়াত মেয়রের উদ্যোগটিকেই বাস্তবে রুপ দেয়ার জন্য নেয়া হয়েছে এ প্রকল্প৷