1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চিকিৎসায় পরিবর্তন আনছে এমআরএনএ প্রযুক্তি

২১ জুন ২০২২

করোনা ভাইরাস মোকাবিলা করতে ২০২০ সালে রেকর্ড সময়ে এক টিকা সৃষ্টি করা হয়েছিল৷ সেই এমআরএনএ প্রযুক্তি নিয়ে দীর্ঘ গবেষণা ছাড়া এমনটা সম্ভব হতো না৷ বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানী সেই সাফল্যে অবদান রেখেছেন৷

https://p.dw.com/p/4CyAK
DW-Dokumentation " mRNA - Hype oder Hoffnung"
ছবি: New Docs

মাটিয়াস হেনৎসে কয়েক দশক ধরে এমআরএনএ নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন৷ জার্মানির হাইডেলব্যার্গ শহরে ইউরোপীয় আণবিক জীববিজ্ঞান গবেষণাগারের প্রধান হিসেবে এই গবেষণা সম্পর্কে এত মানুষের আগ্রহ তার কাছে নতুন অভিজ্ঞতা৷ হেনৎসে বলেন, ‘‘করোনা মহামারির আগে সান্ধ্যভোজনের টেবিলে বসে এমআরএনএ নিয়ে কোনো প্রশ্ন শুনতে হতো না৷''

আমাদের শরীরে এমআরএনএ-র একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে৷ কারণ সেটি সচল হওয়ায় শরীরের নীল নক্সার মধ্যে পরিবহণের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে৷ এমন ব্লুপ্রিন্ট আমাদের শরীরের হার্ড ডিস্ক, অর্থাৎ ক্রোমোজোমের ডিএনএ-তে জমা থাকে৷ সেখানে সেগুলি অক্ষত থাকে৷ প্রোটিন তৈরি করতে গেলে জিনগত তথ্য অনুবাদ করতে হয়৷

এমআরএনএ-র মধ্যেও একই তথ্য থাকে, তবে সেটি ব্লু প্রিন্টের পরিবহণের মাধ্যম হিসেবে  গতিশীল৷ এমআরএনএ নিউক্লিয়াস থেকে বেরিয়ে যায় এবং রাইবোসোমে তথ্য নিয়ে আসে৷ সেখানে এমআরএনএ-র পাঠোদ্ধার করা হয়৷ যে জিনগত তথ্য প্রেরণ করা হয়, সেগুলির ভিত্তিতে সব রকম সম্ভাব্য প্রোটিন তৈরি করা যায়৷ শরীরের প্রায় সব প্রক্রিয়ার জন্যই সেই প্রোটিনের প্রয়োজন হয়৷

গবেষক মহলে বহুকাল ধরে এমআরএনএ অবহেলার পাত্র ছিল৷ রাসায়নিক মানদণ্ডে ডিএনএ-র সঙ্গে পার্থক্য সত্ত্বেও সেটি আরো অনেক স্থিতিশীল বলে সহজে কাজে লাগানো যায়৷ মাটিয়াস হেনৎসে বলেন, ‘‘অনেককাল আগে ডিএনএ সম্পর্কে রোমাঞ্চকর তথ্য পাওয়া গিয়েছিল৷ সে তুলনায় স্বীকৃতি পেতে এরএনএ-কে কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে৷ তবে গত কয়েক বছরে এমআরএনএ অবিশ্বাস্য গতিতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসে পড়েছে৷''

এমআরএনএ : চিকিৎসায় পরিবর্তনের দিশারী

কিন্তু এমন মানুষও ছিলেন, যারা শুরু থেকেই এমআরএনএ প্রয়োগের সম্ভাবনায় বিশ্বাস করেছিলেন৷ ইংমার হ্যোর তাদেরই একজন৷ ট্যুবিঙেন শহরে পিএইচডি করার সময় তিনি আবিষ্কার করেছিলেন যে, সব তথ্যসমৃদ্ধ এমআরএনএ কোনো বিশেষ মোড়ক ছাড়াই কোষের মধ্যে আনা সম্ভব৷ প্রথমে মনে হয়েছিল, তিনি বোধহয় কোনো ভুল করেছেন৷ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে হ্যোর বলেন, ‘‘তখন সত্যি সব কিছু আবার নতুন করে করলাম৷ ঠিকমতো সব লিখে নিখুঁতভাবে পরীক্ষা করলাম৷ কিন্তু সেই একই ফল পেলাম৷ সেটা ছিল সত্যি এক ‘ইউরেকা' মুহূর্ত৷ মনে হয়েছিল, সত্যি যদি উন্মুক্ত ও অসুরক্ষিত এরএনএ কাজে লাগানো সম্ভব হয়, সেটা গোটা বিশ্ব নাড়িয়ে দেবে৷''

হ্যোর পরে সহকর্মীদের সঙ্গে কিউরভ্যাক নামের কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন৷ চিকিৎসাবিদ্যার ক্ষেত্রে এমআরএনএ-র প্রয়োগ বিশাল সুবিধা আনতে পারবে বলে তার মনে হয়েছিল৷ ইংমার হ্যোর বলেন, ‘‘এখন অন্য কোনো টিকা পরিবর্তন করতে হলে দীর্ঘ সময় ধরে প্রাণীর উপর পরীক্ষা চালাতে হয়৷ তারপর সেটির প্রভাব খতিয়ে দেখতে হয়৷ এমআরএনএ-র ক্ষেত্রে শুধু সিকোয়েন্স বা অনুক্রম বদলে দিলেই চলে, অর্থাৎ অক্ষরের ক্রম৷ শরীরের সঙ্গে কার্যত সংলাপ চালানো যায়, যা এক স্বপ্নের মতো৷ উৎপাদনের প্রক্রিয়া অপরিবর্তিত থাকে৷ কোনো আরএনএ পোলিও না করোনার মোকাবিলায় তৈরি করা হচ্ছে, তাতে কিছুই এসে যায় না৷ উৎপাদন প্রক্রিয়া একই থাকে৷''

কারণ গবেষকরা কোনো প্রোটিনের জেনেটিক সিকোয়েন্সিং জানলেই বর্তমানে তাঁরা সেই অনুযায়ী এমআরএনএ সৃষ্টি করতে পারেন৷ কৃত্রিমভাবে সেটি তৈরি করে, মোড়কে পুরে শরীরে প্রবেশ করানো হয়৷ শরীর তখন নির্ধারিত প্রোটিন উৎপাদন করে৷

করোনা টিকার মূলমন্ত্রও সেই একই রকম৷ এ ক্ষেত্রে শরীর ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিন তৈরির নির্দেশিকা গ্রহণ করে এবং সেই অনুযায়ী প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে প্রশিক্ষণ দেয়৷

প্রথম দিকে কিন্তু সমস্যা ছিল৷ কারণ, এমআরএনএ যখন বিনা বাধায় শরীরে মধ্যে চলাচল করে, তখন শরীর সেটিকে আগন্তুক হিসেবে গণ্য করে৷ ফলে অ্যালার্ম চালু হয়ে যায়৷

কাটালিন কারিকো ও তার সহকর্মী ড্রিউ ওয়াইসমান সেই সমস্যার সমাধান করেছিলেন৷ তারা বিশেষ এক কৌশলে এমআরএনএ এমনভাবে বদলে দিতে পেরেছিলেন, যাতে শরীর আর সেটির মোকাবিলা না করে৷ সঠিক প্রভাবের ভিত্তিতে সেই পরিবর্তন আনতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল৷ কারিকো বলেন, ‘‘একশোরও বেশি সম্ভাব্য রদবদল ছিল৷ আমরা ভেবেছিলাম, সেখানে হয়তো এক বা একাধিক কিছু থাকবে, যা ইমিউন সিস্টেমকে সক্রিয় করে তুলবে না৷ শরীর তা সত্ত্বেও অনেক প্রোটিন তৈরি করবে৷ আমরা এমন কিছুই খুঁজে পেয়েছিলাম৷''

সেটা ছিল যুগান্তকারী এক আবিষ্কার৷ ২০২০ সালে রেকর্ড সময়ের মধ্যে এমআরএনএ টিকা তৈরি সম্ভব করতে কয়েক দশকের গবেষণার প্রয়োজন হয়েছিল৷ দশ বছর আগে মহামারি দেখা দিলে এমআরএনএ টিকার কথা ভাবাই যেতো না৷

ভেরোনিকা সিমন/এসবি